

সিরিয়ার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের বারবার হামলা দেশটিকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং তেলআবিব-দামেস্ক নিরাপত্তা চুক্তির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই মার্কিন কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে জানান, তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এসব পদক্ষেপ বন্ধ করতে বলছেন, কারণ এভাবে চললে তিনি নিজের জন্যই সমস্যা ডেকে আনবেন।
বড় প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার দেশের স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা এবং তাকে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা তাদের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের একটি মূল দিক। ট্রাম্প ও তার দল বহুবার সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন করেছে—এটি অঞ্চলটিতে ইসরায়েল ছাড়া আর কোনো দেশের ক্ষেত্রে হয়নি। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশালে আল-শারাকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করে বলেন, ইসরায়েলের উচিত সিরিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী ও সৎ সংলাপ বজায় রাখা এবং এমন কিছু না করা, যাতে সিরিয়ার সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেন যে, নেতানিয়াহু খুবই অসহযোগিতাপূর্ণভাবে হস্তক্ষেপ করছে। গত কয়েক দিনে তিনি কয়েকবার সিরিয়ার ভেতরে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন। শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার ভেতরে প্রায় ১০ মাইল ঢুকে অভিযানে গেলে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীদের গুলিতে তারা আক্রান্ত হয়, ছয়জন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়। বাহিনী প্রত্যাহারের চেষ্টা চলার সময় আইডিএফ বিমান হামলা চালায় যাতে ১৩ জন সিরীয় নিহত হন, যাদের অনেকেই বেসামরিক। এই অভিযান ও হামলা—যা সেই এলাকার বাইরে ঘটেছে যেটি আসাদ সরকার পতনের পর থেকে ইসরায়েল দখলে রেখেছে। এ ঘটনা সিরীয় সরকারকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং তারা প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, হোয়াইট হাউসকে ইসরায়েল এই অভিযানের বিষয়ে আগেভাগে কিছু জানায়নি এবং আগের মতো সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমেও সিরিয়াকে সতর্ক করেনি। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেন অভিযুক্তরা হামাস ও হিজবুল্লাহ-সংযুক্ত একটি গোষ্ঠীর সদস্য এবং তারা ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনা করছিল; পাশাপাশি তারা গোয়েন্দা চ্যানেলের মাধ্যমে সিরিয়াকে জানানো হয়েছে বলেও দাবি করে।
মধ্যপ্রাচ্য নীতিনির্ধারক মার্কিন কর্মকর্তারা বহু মাস ধরেই নেতানিয়াহুর ‘আগে গুলি, পরে প্রশ্ন’ ধরনের নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে ঝামেলা চায় না, এটি লেবানন নয়, কিন্তু নেতানিয়াহু সর্বত্র শত্রু দেখছেন। তারা সতর্ক করে দেন যে নেতানিয়াহু এভাবে চলতে থাকলে তিনি বড় কূটনৈতিক সুযোগ নষ্ট করবেন এবং নতুন সিরীয় সরকারকে শত্রুতে পরিণত করবেন। এর আগে জুনে ইসরায়েলের দামেস্কে হামলার পর হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন যে, নেতানিয়াহু যেন উন্মাদের মতো আচরণ করছেন এবং সবসময় বোমা বর্ষণ করছেন, যা ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের আল-শারার প্রতি সমর্থন ইসরায়েলকে উদ্বিগ্ন করছে। গত মে মাসে ট্রাম্প যখন সৌদি আরবে বিদ্রোহী-থেকে-রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠা আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ইসরায়েল অবাক হয় এবং সাম্প্রতিক ওভাল অফিস বৈঠকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তাদের অস্বস্তিতে ফেলে। সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেও ইসরায়েল আপত্তি জানিয়েছে। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ইসরায়েল-সিরিয়া নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিলেও তারা তা সতর্কভাবে এবং কঠোর শর্ত দিয়ে করছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে জানান, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক পদক্ষেপে চুক্তির অগ্রগতি আংশিকভাবে ব্যাহত হয়েছে, যদিও ওয়াশিংটন চায় এটি সিরিয়ার ভবিষ্যতে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগদানের প্রথম ধাপ হোক। শুক্রবারের পরে দামেস্কে নিয়োজিত মার্কিন দূত টম ব্যারাক ও অন্য কর্মকর্তারা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠক করেন। একইভাবে তারা সিরিয়াদেরও শান্ত করতে বৈঠক করেন, যাতে উত্তেজনা না বাড়ে। সোমবার ব্যারাক দামেস্কে আল-শারার সঙ্গে দেখা করেন।
সোমবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে আল-শারাকে প্রশংসা করেন এবং ইসরায়েলকে সতর্ক করেন। পরে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন, যদিও ইসরায়েলের বিবৃতিতে শুধু জানানো হয় যে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সিরিয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি।
মন্তব্য করুন