লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আবারও কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও দুটি ইসরায়েলের বাণিজ্যিক জাহাজ। ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী দাবি করেছে, তারা ওই এলাকায় দুটি ইসরায়েলি জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজে হামলার বিষয়ে অবশ্য তারা সুস্পষ্ট কিছু বলেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে দুটি দেশের জাহাজে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানায়, হুতিদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার পর মার্কিন যুদ্ধজাহাজ কার্নি বিপদ সংকেতে সাড়া দেয় এবং সহযোগিতা করে। মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, ইয়েমেনের সানার স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টায় হামলা শুরু হয় এবং এটি ৫ ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী জানিয়েছে, তাদের নৌবাহিনী সশস্ত্র ড্রোন ও নৌ-ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ‘ইউনিটি এক্সপ্লোরার’ ও ‘নাম্বার নাইন’ নামে দুটি ইসরায়েলি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। সতর্ক সংকেত দেওয়ার পর ইসরায়েলি জাহাজগুলো তা অগ্রাহ্য করায় সেগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয় বলে হুতিদের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান। গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুতি মুখপাত্র বলেন, ইয়েমেনি জনগণের দাবিতে সাড়া দিয়ে হামলাগুলো চালানো হয়। এটি মুসলিম জাতিগুলোর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধজাহাজ কার্নি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে সহায়তা করেছে এবং তিনটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করে। তবে মার্কিন যুদ্ধজাহাজটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল কি না, তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে আক্রান্ত জাহাজ দুটির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি। তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একটি জাহাজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর সেটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে আছে। অন্য জাহাজটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে।’ বাহামার পতাকাবাহী মালবাহী ইউনিটি এক্সপ্লোরার জাহাজ লন্ডনভিত্তিক ডাও শিপিং লিমিটেডের পরিচালনাধীন। জাহাজটির মালিক ইউনিটি এক্সপ্লোরার লিমিটেড। জাহাজটির ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর কথা ছিল। নাম্বার নাইন শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন নাম্বার নাইন একটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বানহার্ড শেল্টি শিপম্যানেজমেন্ট (বিএসএম) নাম্বার নাইনের পরিচালনা কোম্পানি। রয়টার্সের কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএসএম বলেছে, ঘটনার সময় নাম্বার নাইন সুয়েজ বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। হামলায় জাহাজের কেউ আঘাত পেয়েছে বা জাহাজ থেকে কোনো দূষণ ছড়িয়েছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি। বাব আল-মানদাব প্রণালি পার হওয়ার সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজটিতে আঘাত হানে। হামলায় জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটি গন্তব্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ধারাবাহিকতায় এটি সর্বশেষ ঘটনা। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিয়ে বলে, এখন থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ তাদের লক্ষ্যবস্তু হবে। এর পর বেশ কয়েকটি জাহাজ ছিনতাই ও হামলার শিকার হয়। এর মধ্যে হুতি বিদ্রোহীরা হেলিকপ্টার থেকে একটি জাহাজে কমান্ডো স্টাইলে নেমে সেই জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হুতির মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজা এবং পশ্চিম তীরে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং নৃশংস অপরাধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজে হামলা অব্যাহত থাকবে।’ যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, হামলাগুলো ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা করলেও ইরানের সমর্থনেই তারা এসব করছে। তাদের এসব হামলা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে। ওয়াশিংটন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক মিত্র ও অংশীদারের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করে এসব হামলার ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ জানাবে। বিশেষ করে যারা হুতিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদেরও কড়া জবাব দেওয়া হবে।