বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের জীবনে পড়াশোনার একঘেয়েমি যেন নিত্যসঙ্গী। গতানুগতিক দিনগুলোতে তো বটেই, এ গরমে স্বস্তি দিয়েছে বাকৃবির সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রিভুজের আয়োজন ‘ত্রয়ী-১৪’। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্য, গান, খণ্ডনাটক দিয়ে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে আনন্দে মাতিয়েছিলেন ত্রিভুজ সদস্যরা।
‘সুপ্তকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য’ স্লোগান নিয়ে ২০০৩ সালের ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা লাভ করে ত্রিভুজ। প্রতিবছর ‘ত্রয়ী’ নামে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি। যার বর্তমান সভাপতি অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেশের স্বাধীনতা নিয়ে তুলে ধরা হয় একটি ভিন্নধর্মী পরিবেশনা। সমাজের অসংগতি ও দুর্নীতি নিয়ে নাটিকা পরিবেশন করে ত্রিভুজের নবীন ও প্রবীণ সদস্যরা। সঙ্গে ছিল দেশাত্মবোধক গানে নাচ। সেটা পরিবেশন করেন মনীষা, আঁচল, সোহানা, আলিফ, সারা, ঐশ্বর্য।
এরপর হঠাৎ মঞ্চ অন্ধকার। শুরু হলো ধ্রুপদি গান আর নাচ। জেমিমা, সেঁজুতি, অর্পি, অরিন ও নাশমিনার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স মাতিয়ে রাখে পুরো মিলনায়তন। ক্ল্যাসিকাল গান হলেও সেটার সঙ্গে ছিল আধুনিক ও রক মিউজিকের ফিউশন। এরপর সমন্বিত গান। প্রধান গায়ক রাফিদ আহ্সান। মিউজিশিয়ান হিসেবে সঙ্গে ছিলেন জয়তু, রাজ, রিদম ও এলিন। ‘মনের মানুষ’, ‘একলা চলো রে’ ও ‘আবার হাসি মুখ’—তিনটি গানের কোরাস এনে দেয় শিহরণ।
গান শেষ হতেই শুরু মজার নাটিকা। ‘ডু অর ডাই’ শিরোনামে নাটিকা পরিবেশন করেন হিমা, অনন্ত, আবির, ফাগুন ও মর্তুজা। অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলেন কোন পরিস্থিতিতে কেমন করলে প্রেমিকা হারিয়ে যাবে না। হাস্যরসাত্মক এ পরিবেশনায় দর্শকদের চোখেমুখে ছিল উপচে পড়া হাসি।
এরপর শুরু একটু অন্যরকম পরিবেশনা। মঞ্চে তিনজন নাকি চারজন? ধন্ধে পড়ে গেলেন অনেকে। দুজন মনীষা ও কৌশিক। আর উপমা একাই দুই। এক পাশে সেজেছে ছেলের মতো, আরেক পাশ মেয়ে। এরপর সে একাই এমন ‘ডুয়েট’ নাচ দেখাল যে, দর্শকরাও থ।
রাফিদ গাইল শিরোনামহীনের ‘জাদুঘর’। এরপর ‘হাওয়ারা চুপি চুপি’ গানের সঙ্গে শুভ, মর্তুজা, শৈবাল, নাশমিনা ও সোহাগের খণ্ড নাটক। ভিন্ন স্বাদের গান সোনার বাংলা সার্কাসের ‘এপিটাফ’ পরিবেশন করেন রিয়াদ।
আবারও খণ্ড নাটক। এবার পরিবেশন করেন উপমা, নুসরাত, ওয়াসিম, পূজা। এ পর্বে প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারানো এক তরুণের গল্প। নাটক শেষে শুরু হলো ‘নটি দ্য দুষ্টু শো’। এতে শাকিব খান সেজেছেন সোহাগ। আর অপু বিশ্বাস ও বুবলীর অভিনয় করেছেন শাম্মী ও শিফা। লাবিব, সোহেল ও কামরুলও সেজেছেন বাংলা সিনেমার জাঁদরেল সব অভিনতার মতো করে। এরপর চমকপ্রদ নাচ পরিবেশন করে বয়েস গ্রুপ ও গার্লস গ্রুপ।
কোক স্টুডিওর ভাইরাল ‘দেওড়া’ গানে ১৬ জনের সমন্বিত নৃত্য ছিল একপশলা বৃষ্টির মতো। তারপর বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। ত্রিভুজের সদস্যদের করতালির শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ হয় ‘ত্রয়ী ১৪’।
মন্তব্য করুন