জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় প্রথমবারের মতো সাজাপ্রাপ্ত হলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত তাকে তিন বছরের সাজা দেন। একই সঙ্গে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের ফলে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবর্তমানে জুবাইদাকে নেতাকর্মীরা বিকল্প ভাবলেও সেই ভাবনায় ছেদ পড়ল। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় জুবাইদা রহমানেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে গেল।
সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে জুবাইদা রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কারাগারে গিয়ে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আপিলে খালাস পেলেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। তা ছাড়া তার সামনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হন। পরে তার নামে মনোনয়নপত্র তোলা হলেও তা বাতিল হয়ে যায়। এতে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পলাতক রয়েছেন তারেক রহমান। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালবেলাকে বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে সবার কাছে বার্তা গেল—কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দুর্নীতি করলে আইন অনুযায়ী বিচার হবে। জুবাইদা রহমানের তিন বছরের সাজা হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপিলে খালাস পাওয়ার পর তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোরশেদ মিয়া আলম কালবেলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জিয়া পরিবারকে কলঙ্কিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে ফরমায়েশি রায় দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন থামানো যাবে না। রাজনীতি থেকে জুবাইদাকে সরানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ রায় দেওয়া হয়েছে।’
ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ইকবাল মান্দ বানু মারা যাওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন মামলাটি উচ্চ আদালতে আটকে থাকার পর গত এপ্রিলে বিচারিক আদালতে বিচার শুরু হয়। গত ১৩ এপ্রিল আদালত পলাতক তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২১ মে আদালতে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এরপর গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম শেষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মামলাটিতে ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই দুদকের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। এ মামলায় তারেক রহমানের ৯ বছরের সাজা দেন আদালত। এ ছাড়া ৩ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন