কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:২২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

সমঝোতার বার্তা দিলেন দুই কংগ্রেসম্যান

সমঝোতার বার্তা দিলেন দুই কংগ্রেসম্যান

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যানের এমন বার্তার প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, সরকার পতনের দাবির সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ নেই। বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। গতকাল রোববার সফররত মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এমন অবস্থান জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চা-চক্র ও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান রিচার্ড ম্যাককোরমিক এবং হাওয়াইয়ের ডেমোক্র্যাট দলের কংগ্রেসম্যান এডওয়ার্ড কেইস।

বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াশিকা আয়েশা খান এবং তামান্না নুসরাত (বুবলী), জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল ও নাজমা আক্তার এবং বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। এ সময় পিটার হাস ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ও শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা ম্যাথিউ বেহ এবং উপ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কর্মকর্তা আর্তুরো হিনেস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি সাংবাদিকদের বলেন, কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচনী পরিবেশ ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের নিরপেক্ষ কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। এটাও বলেছি, একদলীয় শাসনের অধীনে গত দুটি নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আশাবাদী জানিয়েছি। তারা জানতে চেয়েছিল বলেই এসব কথা হয়েছে বলে জানান এই বিএনপি নেতা।

শেরিফা কাদের জানান, বৈঠকে কংগ্রেসম্যানরা সার্বিক নির্বাচনী পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তারাও বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। সেইসঙ্গে বলেছি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকারবদ্ধ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের সরকার। এরই মধ্যে আইনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। তারা চায় সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানান।

দুই কংগ্রেসম্যান বৈঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, সব দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত দেখতে চায়।

সরকার পতনের দাবির সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল রোববার সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, বিএনপির সরকার পতনের দাবির সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মনে করে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক সিদ্ধান্ত ও ঐকমত্য থাকলে সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন সম্ভব। সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলে সহিংসতা ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে ‘গ্যারান্টি’ দেওয়া যায় না।

গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রিচার্ড ম্যাককোরমিক ও এডওয়ার্ড কেইস আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা এবং সংকট সমাধানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে জবাবে ড. মোমেন সরকারের এ অবস্থান জানান।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, মোহাম্মদ এ. আরাফাত এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কংগ্রেসম্যানরা নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন। আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাস করে, নির্বাচনমুখী দল। কংগ্রেস সদস্যরা বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার কোনো পথ আছে কি না। আমরা বলেছি, তাদের দাবি সরকারের পতন হবে, তারপরে নির্বাচন করবে, সেটির সঙ্গে আমাদের সমঝোতার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নেই।

সমঝোতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের ‘ফর্মুলা’ দিচ্ছে না। রিপাবলিক কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, তারা সমঝোতা করেন। আমরা বলেছি, আমাদের এখানে ঐকমত্য করার মতো কোনো দাবি-দাওয়া কারও কাছে নেই। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমাদের বিরোধী দল (বিএনপি) তো নির্বাচনের কোনো খবরই রাখে না। তারা চায় সরকার পতন। সরকার পতনের ইস্যু সংলাপে যাওয়ার মতো কোনো টপিক নয়।

এ সময় দুই কংগ্রেসম্যানকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘তোমাদের দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) কি নির্বাচনের সময়ে সরকারের পতন হবে? নিশ্চয়ই না। এ ধরনের দাবি করলে কি তোমরা আলোচনা করবে? নিশ্চয়ই না। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব এবং সেটিতে সবাই অংশগ্রহণ করুক এটি আমরা চাই। কে জিতবে না জিতবে সেটি জনগণের ওপর নির্ভর করবে।’

দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চীনের ‘খপ্পরে’ পড়েছে বাংলাদেশ: বাংলাদেশ চীনের খপ্পরে পড়েছে কি না তা জানতে চেয়েছেন দুই কংগ্রেসম্যান। তা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের কাছে বিভিন্ন লোকজন বলেছে, বাংলাদেশ চীনের খপ্পরে পড়ে গেছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। এটি একটি ভয়ংকর জায়গা, যেখানে অশান্তি হয়। পুলিশ যখন-তখন লোক ধরে ফেলছে ও মেরে ফেলছে। তবে এসব কোনোটিই সত্য নয় বলে জানিয়েছি।

ড. মোমেন বাংলাদেশ চীনের ভেতরে যাচ্ছে না বলে দুই কংগ্রেসম্যানকে আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশের ঋণের এক শতাংশের মতো চীন থেকে নেওয়া। এটি কোনো বড় বিষয় নয়।

নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক: গতকাল সন্ধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দুই কংগ্রেসম্যান ম্যাককোরমিক ও কেইস।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান ও পরিবেশকর্মী ড. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান, সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা, নির্বাহী পরিচালক ও শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আখতার, সেন্টার ফর গর্ভন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক ও চ্যানেল আইর তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, নারীনেত্রী শিরিন হক এবং আর্টিক্যাল নাইন্টিনের আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ফারুক ফয়সাল।

এর আগে দুই কংগ্রেসম্যান গত শনিবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসেন। গতকাল রোববার সকালে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজ সোমবার তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, প্রেমিক আটক

নদীভাঙনের কবলে শতবর্ষী স্কুল, হুমকিতে মাঠ ও শহীদ মিনার

আবারও সেরা ব্রাজিল, কলম্বিয়াকে হারিয়ে জিতল টানা তৃতীয় শিরোপা

দুদিন বন্ধ থাকবে ঢাবি মেট্রো স্টেশন

‘দৈনিক আজকের কণ্ঠ’ নামের পেজটি গুজব তৈরির প্ল্যাটফর্ম : বাংলাফ্যাক্ট

সরকারি ইজারাবিহীন বালুমহালে মোবাইল কোর্টের হানা

পর্দায় শুভশ্রীর সঙ্গে নিজেকে দেখে অশ্রুসিক্ত দেব

মার্কিন শুল্কে কঠোর অবস্থানে মোদি

‎নামাজ শেষে বেরিয়ে সড়কে গেল জামায়াত নেতার প্রাণ

মারা গেছেন কেজিএফের জনপ্রিয় অভিনেতা

১০

ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

১১

এনসিপির ৮ নেতা চীন সফরে যাচ্ছেন আজ

১২

নেদারল্যান্ডসের চমক, বাংলাদেশ সফরের আগে বদলে ফেলল স্কোয়াড

১৩

ঢাকার ব্যস্ততম দুই সড়ক অবরোধ

১৪

রিজার্ভ চুরি মামলা  / ৮৮ বার পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন

১৫

সেই টাইসনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না  

১৬

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী খাবেন, কী খাবেন না

১৭

চারটি করে আসন চান মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধিরা

১৮

ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে যৌথ বাহিনী: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৯

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটারজুড়ে ভয়াবহ যানজট

২০
X