সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শূন্যপদ থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না শিক্ষক। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৩৮ প্রার্থীকে এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারেনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। চূড়ান্ত সুপারিশের দাবিতে বিভিন্ন সময় নিয়োগ প্রার্থীরা এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গেলেও তাদের ফিরতে হয়েছে শুধু আশ্বাস নিয়েই। এভাবে অপেক্ষার প্রহর বাড়ায় হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তৃতীয় ও বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মতো চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হোক। আর এনটিআরসিএ বলছে, ঈদের পরই সুপারিশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে।
প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রার্থীরা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক পাঠদানে ঘাটতি লক্ষণীয়। সংকট সমাধানে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩২ হাজার প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হলেও এখনো তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। ফলে পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
এদিকে, শিক্ষক সংকটের কারণে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোনোরকমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে শূন্যপদের বিপরীতে কোনো শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। এটি শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। তাই কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ যেন প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করে, সে দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্তদের অনলাইনে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ চলমান রয়েছে। এর আগে গত ১২ মার্চ শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে সারা দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২ হাজার ৪৩৮ জনকে নির্বাচন করা হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর আরও দুই দফায় ফরম পূরণের সময় বাড়িয়ে ২৬ জুন করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৬ থেকে ১১তম নিবন্ধনধারী প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সরাসরি এনটিআরসিএ অফিসে সার্টিফিকেটের হার্ডকপি জমা দিতে হবে। এর ফলে প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিকে এভাবে বারবার সময় বাড়ানোকে এনটিআরসির সময়ক্ষেপণের পাঁয়তারা বলছেন প্রার্থীরা। তাদের মতে, প্রথমদিকে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে সহকারী মৌলভিদের কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ কাগজ চেয়েছে। সেটা চলল ২২ দিন। তারপর ষষ্ঠ-১১তম নিবন্ধনধারী সুপারিশপ্রাপ্তদের কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব করে তারা সময়ক্ষেপণ করছে। অথচ তারা চাইলে সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটা সময়ই নির্ধারণ করতে পারত।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী ইমরান খান বলেন, ৫ বছর ধরে এ নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে; কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারেনি। আমরা চাই, শিক্ষক সংকট ও অসহায় শিক্ষকদের মানবিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ করুক।
তিনি বলেন, ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তৃতীয় ও বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও এভাবেই নিয়োগ দিতে হবে। কারণ, দেড় বছর আগে যারা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদান করেছেন, তাদের ভেরিফিকেশন এখনো শেষ হয়নি। ৬ মাসের বেশি আগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদানকারীদেরও ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি।
তবে এনটিআরসিএ বলছে, প্রার্থীদের অনলাইন ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণে ভুল তথ্য দেওয়ায় ও সবার ফরম পূরণ না হওয়ায় চূড়ান্ত সুপারিশ প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে। ২৬ জুনের মধ্যে ফরম পূরণ শেষ হলে ঈদের পরই তারা চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাইবেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সঙ্গে নতুন শিক্ষকদের নিয়োগের বিষয়টিও যুক্ত করা হতে পারে।
এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদন শেষ হয়নি। আবার অনেকে আবেদনে ভুল করছে। সে কারণে আমরা ২৬ জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়িয়েছি। ঈদের পর চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাইব। অনুমতি পেয়ে গেলে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হতে পারে।
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের পাশাপাশি সনদও যাচাই করা হচ্ছে। একটা সমস্যা হচ্ছে, অনলাইনে অনেকেই ভি-রোল পূরণে ভুল করছেন। অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভুল তথ্যও দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেগুলো দেখে আবার ফেরত দিচ্ছি। আবার অনেকে এখনো তথ্য দেয়নি। এসব কারণে একটু সময় লাগছে।
প্রসঙ্গত, ১৬তম শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ২৩ মে। ওই বছরের ৩০ আগস্ট প্রিলি এবং ১৫ ও ১৬ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা হয়। ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে উত্তীর্ণ হন ২২ হাজার ৩৯৮ প্রার্থী। তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় ওই বছরের ২ ডিসেম্বর। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে ৭ মাস সময় লেগে যায়। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর। যেখানে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ করা হয় ১৮ হাজার ৫৫০ প্রার্থীকে।
মন্তব্য করুন