জাফর ইকবাল
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০২ এএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিজ সংস্থারই জালে দুদকের ৮ কর্মকর্তা

সাবেক দুই কমিশনারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে
নিজ সংস্থারই জালে দুদকের ৮ কর্মকর্তা

দেশে দুর্নীতি দমনে একমাত্র স্বাধীন সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সংস্থাটির বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘সিলেকটিভ’ দুর্নীতি নিয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল নাখোশ হতে পারে—এমন ব্যক্তিদের দুর্নীতি খুঁজতে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অনীহা ছিল দুদকের। অন্যদিকে, সংস্থাটির ভেতরে থেকে ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতেন দুদকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। নিজেদের সুরক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেই এসব কর্মকর্তাকে দুদকে পদায়ন করা হতো। এবার এমন সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরই মধ্যে সংস্থাটির সাবেক দুই কমিশনারসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। পাশাপাশি দুদকের আরও দুজন সাবেক মহাপরিচালক ও দুজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন দুদক কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সংস্থাটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের দেড় শতাধিক এমপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধানাধীন ও গোয়েন্দা তথ্যানুসন্ধানে রয়েছে আরও প্রায় কয়েক হাজার অভিযোগ। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাইরে বিগত সময়ে সুবিধাভোগী সরকারি আমলা ও পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনীর সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়েও অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে দুদক। একই সঙ্গে নিজ সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়েও তৎপর হয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে দুদকের দুই সাবেক কমিশনার জহুরুল হক ও মোজাম্মেল হক খান এবং দুই উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকী ও শেখ গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সদ্য সাবেক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হকের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির পরিচালক আকতার হামিদ ভূঞা এবং সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাহফুজন ইকবালের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে।

এ ছাড়া দুদকে প্রেষণে আসা দুজন মহাপরিচালক ও দুজন পরিচালকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে জনপ্রশাসন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। ওই কর্মকর্তারা হলেন নাটোরের সাবেক ডিসি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহরিয়াজ, রংপুরের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (তদন্ত-অনুবিভাগ) জাকির হোসেন (বর্তমানে ওএসডি), নারায়ণগঞ্জের সাবেক ডিসি এবং দুদকের সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পিএস জসিম উদ্দিন, শরীয়তপুরের সাবেক ডিসি দুদকের সাবেক কমিশনারের পিএস কাজী আবু তাহের। চিঠিতে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ, অনুসন্ধান, মামলা কিংবা তদন্ত চলমান থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে। আর না থাকলে তাদের আর্থিক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকে বসে এসব কর্মকর্তা বিগত সরকারের দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন আদেশ-নিদেশ পালন করতেন। মূলত এ কারণেই তাদের এখানে পদায়ন করা হয়েছিল। তারা প্রতিনিয়ত উচ্চ পদে থেকে দুদকের বিভিন্ন কাজে বাধা দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতিবাজ যেই হোক, তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক কমিশনার জহুরুল হক দুদকে ‘ক্লিনচিটের মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের আদেশ ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ক্লিনচিট দিতেন জহুরুল হক। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকারি প্লট জালিয়াতি, ক্ষমতার ভয়াবহ অপব্যবহার ও সরকারি গাড়ি ড্রাইভারসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের তরঙ্গ বরাদ্দে জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিকে তার অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও পুরোনো। আর এক সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানের নামে তার প্রতিষ্ঠিত ‘ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর জেলা সদরের পাঁচখোলায় ‘ওয়াজেদা কুদ্দুস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত খানবাড়ি কমিউনিটি হাসপাতাল, প্রবীণ নিবাস ও এতিমখানার নামে ভুয়া দলিলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের অন্তত ১৫০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘জনপ্রশাসন সদ্য বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত আরও বহু কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য দুদকে চিঠি দেওয়া হয়। এতজন আমলার দুর্নীতিবিষয়ক অনুসন্ধান করতে হলে দক্ষ এবং বড় একটি গোয়েন্দা দলের প্রয়োজন। দুদকের দক্ষ গোয়েন্দা আছে, কিন্তু বড় দল নেই। যারা আছে তারা খুবই জরুরি এবং স্পর্শকাতর কেসগুলোর অনুসন্ধানে ব্যস্ত। এজন্য প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে পারে এনএসআই, তারপর কারও সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলে সেগুলো দুদকে পাঠানো হলে আমরা তা খতিয়ে দেখতে পারি। তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলকে এক হাত নিল ফ্রান্স-জার্মানি

দেশের চার এলাকাকে ‘অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন’ ঘোষণা

মাঝরাতে মিথিলার খুশির খবর

‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

সাব ব্রাঞ্চ ইনচার্জ পদে ইউসিবি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

এসএমসিতে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণে নাতির পর নানির মৃত্যু

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন আজ

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১০

২৬ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

১২

তিন সহযোগীসহ ‘মাদক সম্রাট’ শাওন গ্রেপ্তার

১৩

ফের সৈকতে ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

১৪

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

২৬ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১৭

ক্ষমতায় গেলে এক কোটি কর্মসংস্থান করবে বিএনপি : টুকু

১৮

ড. ইউনুস কি ভালো ভোট করতে পারবেন : মান্না

১৯

ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্কবার্তা দিলেন আমিনুল হক

২০
X