শেখ হারুন
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

একজনও বাড়েনি নারী বেকার!

একজনও বাড়েনি নারী বেকার!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২৪ সাল শেষে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা। একই সঙ্গে কমেছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও। এতে বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। একই সময়ে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ বেকার হয়েছে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে যারা বেকার হয়েছেন, তাদের সবাই পুরুষ। এ সময়ে নারী বেকার একজনও বাড়েনি।

আসলেই কি বছরের ব্যবধানে একজন নারীও বেকার হননি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সাল শেষে দেশে মোট বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২০ হাজার, ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেকার মানুষ বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার।

বিবিএসের জরিপ বলছে, মোট বেকারের মধ্যে ২০২৩ সালে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার, ২০২৪ সালে পুরুষ বেকার বেড়ে হয়েছে ১৮ লাখ।

অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পুরুষ বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০২৩ সালে নারী বেকারের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ২০ হাজার, ২০২৪ সাল শেষেও নারী বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একই, ৮ লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে নারী বেকার একজনও বাড়েনি।

অথচ বিবিএসের একই জরিপে বলা হয়েছে, পুরুষের পাশাপাশি নারী বেকারত্বের হার বেড়েছে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেকার পুরুষের হার ৩ দশমিক ৭৫ এবং নারী বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে পুরুষ বেকার ছিল ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং নারী বেকার ছিল ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নারী বেকারত্বের হার বেড়েছে দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ পুরুষের পাশাপাশি নারী বেকারত্বের হারও বেড়েছে। তবে নারী বেকারত্বের হার বাড়লেও বাড়েনি সংখ্যা, যা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে: জরিপ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে শ্রমশক্তির বাইরের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারী ছিলেন ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার, ২০২৪ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৩ লাখ ৭০ হাজার, যেখানে পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৫ লাখ ১০ হাজার।

একইভাবে কর্মে নারীর অংশগ্রহণও কমেছে। বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার নারী কর্মে নিয়োজিত ছিলেন, ২০২৪ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কর্মে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা কমেছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার।

একদিকে নারী বেকারত্বের হার বেড়েছে, অন্যদিকে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এর পরও সংখ্যায় নারী বেকার না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, যেখানে অতিরিক্ত মোট ১ লাখ ৬০ হাজার বেকারের সবাই পুরুষ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘বিবিএসের জরিপে নারী বেকার সংখ্যা একই থাকার কারণ তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি এই ডাটা পুনর্বীক্ষণ করার দরকার রয়েছে। কারণ পুরুষের সঙ্গে নারী বেকারের সংখ্যা কমবেশি বাড়ার কথা।’

অধ্যাপক মঈনুল বলেন, ‘বেকারের সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের একটা সমস্যা রয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টাও যদি কেউ কাজ করে তাহলে তাকে বেকার হিসেবে গণ্য করা হয় না—এই সংজ্ঞায় বেকার নির্ধারণ করা হয়। কাজেই যে সংজ্ঞায় বা প্রক্রিয়ায় বেকারত্ব নির্ণয় করা হয়, সেখানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রতিফলিত হয় না। এটা সংশোধন করা উচিত।’

তবে বিবিএস বলছে, পরিসংখ্যানে এমনটা হতেই পারে, এটাকে ভুল বলার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জরিপ সংশ্লিষ্ট বিবিএসের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, নারী বেকারের সংখ্যা কমেনি বা বাড়েনি বলা যাবে না। কারণ বছরের ফলটা চারটা কোয়ার্টারের অ্যাভারেজ। দেখা গেছে, কোনো কোয়ার্টারে বেড়েছে আবার কোনো কোয়ার্টারে কমেছে; কিন্তু বছরের হিসাবে একই দেখাচ্ছে। এখানে বলা যায় যে, বছর শেষে নারী বেকার স্থির রয়েছে।

তিনি বলেন, বেকারের সঙ্গে সরাসরি এমপ্লয়মেন্টের সম্পর্ক নেই। বেকার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে হবে, যেমন তাকে কাজ খুঁজতে হবে, কাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর নিয়েই বেকার চিহ্নিত করা হয়। কেউ যদি নিজেকে বেকার হিসেবে না বলে অথবা কাজের চেষ্টা না করে, তাহলে সে বেকার নয়। সেজন্য আমরা বলতে পারি না, কেউ কাজ ছেড়ে দিয়েছে মানে সে বেকার হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট প্রশ্নের ভিত্তিতে যে ডাটা পাওয়া গেছে সেটাই প্রকাশ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে অন্তত এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং এক মাস ধরে কাজ খুঁজেছেন; কিন্তু মজুরির বিনিময়ে কোনো কাজ পাননি, তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এ নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে।

শ্রমশক্তি জরিপে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী পুরুষ-মহিলা এবং শহর-পল্লি অঞ্চল অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে শ্রম বাজারের সূচকসমূহ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়। দেশব্যাপী এক হাজার ২৮৪টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৪টি করে সর্বমোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই শতাধিক ভুয়া ভোটারকে আটকে দিল প্রশাসন   

দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে প্রথম টেস্টে সহজ জয় পাকিস্তানের

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর : আইন উপদেষ্টা

শিক্ষকদের ৩ দাবিতে উত্তাল শাহবাগ

কলাবাগানে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিল পুলিশ

সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে ঐকমত্য কমিশন 

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

সেই দুই পুলিশ কর্মকর্তার দুদকে বদলির আদেশ বাতিল

সরকারি কাজে বাধা, যুবদল নেতা বহিষ্কার

সাড়ে ৪ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ

১০

দুঃসাহসী সেই চিকিৎসকের ভাগ্যে কী ঘটেছে?

১১

আসলেই কি নোয়াখালীতে গান্ধীর ছাগল চুরি হয়েছিল?

১২

বিপিএলে বাড়ছে প্রাইজমানি, চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল কত পাবে জানা গেল

১৩

রাজধানীতে আ.লীগের ৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

১৪

আগুন নেভাতে কত সময় লাগবে, জানে না ফায়ার সার্ভিস ‎

১৫

যে কারণে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না ভিকি

১৬

হংকং চায়না ম্যাচ শেষে দেশে ফিরেছেন জামাল-রাকিবরা

১৭

রাকসু নির্বাচন : ভিপি পদে হাড্ডাহাড্ডি, জিএসে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস

১৮

দেয়ালে শিশুর আঁকাআঁকি পরিষ্কার করার ৪ সহজ উপায়

১৯

পূজা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ, ১৭ দিনেও খোঁজ মেলেনি আদুরি রানীর

২০
X