বীর সাহাবী
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ০২:২৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ধীরে ধীরে দুর্বল হয় এসআইবিএল

খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ
ধীরে ধীরে দুর্বল হয় এসআইবিএল
ধীরে ধীরে দুর্বল হয় এসআইবিএল

এক সময়ের ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) এখন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর ‘সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’ নামে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটিতে আওয়ামী লীগ আমলে লুটপাট চালায় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। তবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তা গোপন রাখে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নির্দেশনার কারণে ধীরে ধীরে ব্যাংকটির প্রকৃত অবস্থা ফুটে উঠতে থাকে। নতুন নির্দেশনার আলোকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকেই বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়েছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এটি ছিলে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশনার পরও চিত্র ছিল এমন। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১৩ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। বিতরণকৃত ৩৮ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার বেড়ে প্রায় ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি, মূলধন ঘাটতি বা প্রভিশন ঘাটতি বেশি থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য অধিকাংশ ব্যাংকই এই তথ্য গোপন করত। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নির্দেশনার কারণে এখন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র সামনে আসছে।

তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পর্ষদ পুনর্গঠনের পর পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির এমডি জাফর আলম, ডিএমডি হাবিবুর রহমান ও খোরশেদ আলম। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কোনো প্রভিশন ঘাটতি ছিল না। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে সেই প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। যদিও ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রভিশন ঘাটতি দেখানো হয়েছে ২০ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে বলার পরও জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটি তাদের প্রভিশন ঘাটতির বিষয়টি গোপন করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন ও ব্যাংকটিতে চলা একাধিক অডিটে বিষয়গুলো ধরা পড়ায় এখন প্রকৃত চিত্র সামনে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসআইবিএলের মূলধনে কোনো ঘাটতি দেখানো না হলেও ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। আগে কখনো ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতিতে পড়েনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংকটি খেয়ে ফোকলা করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আমাদের ৬০ শতাংশ ঋণ খেলাপি করে দিয়েছে। তবে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কারণ, আমাদের আমানতে গ্রোথ অনেক বেশি। মানুষের মধ্যে আস্থা অনেকাংশেই ফিরে এসেছে।’

লোকসান ঘোচাতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা খেলাপি ঋণ আদায় করতে চেষ্টা চালাচ্ছি। খেলাপির কারণেই আমাদের ব্যাংক লোকসান গুনছে। ছোট গ্রাহকদের থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তবে বড় গ্রাহকরা ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি, খেলাপি ঋণগুলো পুনঃতপশিলের পাশাপাশি আদায় বাড়ানোর। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আর্থিক উন্নতি আসবে।’

পুঁজিবাজারেও সুখবর নেই এসআইবিএলের: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নামছে। আওয়ামী সরকারের পতনের আগে জুলাইয়ে ব্যাংকটির শেয়ারদর ছিল ৭ টাকা। এরপর হঠাৎ তা বেড়ে সেপ্টেম্বরে উঠে যায় ১৩ টাকার ওপরে। অবশ্য সেই দর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপরের মাস থেকেই কমতে শুরু করে ব্যাংকটির শেয়ারদর। টানা কমতে কমতে ব্যাংকটির শেয়ারদর নেমেছে সাড়ে ৭ টাকায়।

এদিকে ধস নেমেছে ব্যাংকটির মুনাফায়ও। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা লোকসানে পরিণত হয়েছে। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৪১ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১৭ পয়সা। এ হিসাবে আলোচিত সময়ে টাকার অঙ্কে ব্যাংকটির নিট লোকসান হয়েছে ১৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্লাব বিশ্বকাপ / ইউরোপ আবারও ধরাশায়ী ব্রাজিলের ক্লাবের কাছে

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না : গোলাম পরওয়ার

ক্রীড়াচর্চা না থাকায় যুবসমাজ বিপথে যাচ্ছে : ব্যারিস্টার অসীম

পরমাণু প্রযুক্তিতে ইরানকে সহায়তায় প্রস্তুত রাশিয়া : পুতিন

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুকে এক হাত নিলেন সোনিয়া গান্ধী, ছাড়লেন না মোদি সরকারকেও

এনবিআর ও বিডা কার্যালয়ের আশপাশ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

শাহরুখের মান্নাত নিয়ে দুঃসংবাদ

রোনালদোর পায়ে কালো নেইলপলিশ! ফ্যাশন নাকি ফিটনেস?

স্ত্রীর কিডনিতে নতুন জীবন, হেলিকপ্টারে ফিরলেন বিএনপি নেতা

শার্ট-ক্যাপ পরিয়ে বান্ধবীকে হলে নিলেন রাবিছাত্র, অতঃপর...

১০

দাবি না মানলে সড়ক অবরোধ চলবে : ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা

১১

ইরানে ব্যাপক হামলা, ৫ বিপ্লবী গার্ড নিহত

১২

কটাক্ষের জবাব দিলেন মধুবনী

১৩

তাক লাগানো সব ফিচার নিয়ে বাজারে আসছে মেটার নতুন চশমা

১৪

স্কালোনির প্রশংসা করে যা বললেন ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি

১৫

আটকের খবরে থানা ঘেরাও, সেই নেতাকে ছেড়ে দিল পুলিশ

১৬

আ.লীগ নেতা এখন বিএনপির বড় পদে

১৭

জনপ্রিয় ইউটিউবার সালাহউদ্দিন সুমন বর্ষসেরা ট্র্যাভেল ভ্লগার নির্বাচিত 

১৮

‘আমিই তো চার-পাঁচটা নোবেল পাওয়ার যোগ্য’

১৯

জিমেইল ব্যবহারকারীদের জরুরি সতর্কতা দিল গুগল 

২০
X