আলোক স্বল্পতায় দিনের খেলা ২০ ওভার কম হয়েছে। প্রথম দুদিনও বাড়তি সময় খেলা চালিয়ে দিনের ওভার কমিয়ে আনা যায়নি। তবে দিন শেষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়, তার আঁচ মিলেছে ড্রেসিংরুমের সামনে। বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে এরই মধ্যে জয়ের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে এক বন্ধুর ডাকে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। কিছু সময়ের মধ্যে সেলফির আবদারে অনেকের ভিড় জমে সেখানে। অন্য কোণে আসা এক যুগলকে দুটি ‘ক্যাপ’ উপহার দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এ টেস্টের ফল নিয়ে এখন এতটাই নির্ভার তারা, টিম মিটিংয়ের চাপ সইতে হয়নি মিরাজ-জয়দের। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের চাপ থাকার কথাও নয়। মাত্র তিন দিন যেতেই লিড এখন পাহাড়সম। তা ছাপিয়ে যে তার রেকর্ড নেই টেস্ট ক্রিকেটে শত বছর পার করা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডেরও; আফগানিস্তান তো সবেই শুরু করেছে। এশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে বড় লিডের (৬৬১) রেকর্ডে এখন জয়ের হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে এখনো ৬১৭ রানের লিড বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানে এগিয়ে থাকার পর অধিনায়ক লিটন দাস যখন দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৪২৫। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লিডও এটি লিটন-শান্তদের।
প্রথম দুদিনের মতো তৃতীয় দিনও পুরোটাই বাংলাদেশের। তিন সেশনের মধ্যে দুই সেশনের বেশি সময় কেটেছে ব্যাটারদের দাপটে। শেষ বেলায় এক ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করা আফগানদের দুই ব্যাটারকে তো ফেরালেনই, সঙ্গে মাথায় চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক হাসমত উল্লা শহীদি। পেসার তাসকিন আহমেদের লাফিয়ে ওঠা বল আঘাত হানে শহীদির হেলমেটের ডানপাশে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে স্ট্রেচার নিয়ে আসা হলেও আশার কথা হচ্ছে, হেঁটেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন আফগান অধিনায়ক। তবে শঙ্কার জায়গা থেকে তার আঘাতের জায়গায় একটা মেডিকেল পরীক্ষা করার কথা রয়েছে।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দিনটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। দিনের শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান। দুটি সেঞ্চুরি দেখার আশা নিয়ে ছুটির দিন সকাল সকাল গ্যালারিতে ভিড় করতে শুরু করেন দর্শক-সমর্থকরা। এক ঘণ্টা যেতেই হতাশ করেছেন জাকির। ৭১ রান করা এ ব্যাটার ফিরেছেন নিজের ভুলে রানআউটের ফাঁদে পড়ে। তবে অন্যপাশে ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন শান্ত। তার ব্যাটে চলমান রানের পাহাড়ের অংশ হিসেবে মিলেছে পরপর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে যখন এমন রেকর্ড গড়েন শান্ত, তখন উইকেটে তার সঙ্গী প্রথম এমন রেকর্ড গড়া মুমিনুল হকই ছিলেন। এক টেস্টে সর্বোচ্চ ৩৮ বাউন্ডারির রেকর্ডও নিজের করে নেন ডানহাতি এ ব্যাটার।
শান্তর এমন কীর্তির পর নিজেকে ফিরে পেয়েছেন মুমিনুলও। লম্বা সময় ধরে তার ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা—দল থেকে বাদ পড়েছিলেন কয়েকবার। রান পেলেও ইনিংস বড় করতে না পারায় দায় ছিল অনেক। সেসব কাটিয়ে ওঠার সুযোগটা আর নষ্ট করলেন না তিনি। আফগান পেসার ইয়ামিন আহমেদজাইকে আপারকাট করে দারুণ এক বাউন্ডারিতে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। ১২তম সেঞ্চুরিতে ২৬ মাসের অপেক্ষা ফুরিয়েছে তার। পাশে থেকে উদযাপনে যোগ দেওয়া লিটনও পেয়েছিলেন ফিফটি। ১২১ রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুলের সঙ্গী লিটন যোগ করেন ৬৬ রান। বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের ভিত তার আগেই হয়ে যাওয়ার কথা।
মন্তব্য করুন