

শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো। এ ভূমিকম্পে মৃদু কম্পন অনুভব করেছেন ৭ কোটির বেশি মানুষ। এ ছাড়া প্রায় পৌনে ৭ কোটি মানুষ হালকা ঝাঁকুনি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
সংস্থাটি জানায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পের তীব্র কম্পন অনুভব করেছেন শুধু ঢাকারই ১ কোটির বেশি মানুষ। নরসিংদীতে তীব্র কম্পন পৌঁছেছে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কাছে।
ভূমিকম্পের আড়াই ঘণ্টা পর ইউএসজিএস জানায়, এর আগে বাংলাদেশের তিনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের তথ্য তাদের ওয়েবসাইট তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ২২ জুলাইয়ের ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যান ছয়জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে তীব্রতার দিক থেকে নজিরবিহীন।
ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী ইউএসজিএস ভূমিকম্পটিকে কমলা শ্রেণিতে রেখেছে, যা উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির আশঙ্কা নির্দেশ করে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকিতে ভূমিকম্পটি হলুদ শ্রেণিভুক্ত—যা বাংলাদেশের জিডিপির ১ শতাংশের কম আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কার ইঙ্গিত দেয়।
ইউএসজিএস জানায়, বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হলেও মধ্যাঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে। ১৯৫০ সাল থেকে ঢাকার ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার বেশি শক্তির ১৪টি ভূমিকম্প হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ছিল ৬ মাত্রার। আর শুক্রবারের ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ঢাকার খুব কাছে—মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেশে ২০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল ২০২৩ সালের ২ ডিসেম্বর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। সর্বোচ্চ ৬টি ভূমিকম্প হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায়। বাকি ভূমিকম্পগুলোর গড় মাত্রা ছিল ৪।
সরকার জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় দেয়াল ধস, ভবনের অংশবিশেষ ভেঙে পড়া এবং মাটি দেবে যাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নরসিংদীতে পাঁচজন, ঢাকায় চারজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন রয়েছেন। পুরান ঢাকার কসাইটুলীতে ভবনের ছাদের রেলিং ধসে তিন পথচারীর মৃত্যু হয়।
বুয়েটের ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল। তিনি সতর্ক করে জানান, বড় ভূমিকম্প সাধারণত ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসে এবং ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ফেরত আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই এখনই সবার সচেতন হওয়া জরুরি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল-পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার নিম্নাঞ্চলগুলো বড় ভূমিকম্পে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। নব্বইয়ের দশকের পর যেসব নিম্নভূমিতে বালু ফেলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি হয়েছে—যেমন হাজারীবাগ, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, বছিলা, পূর্বাচল ও উত্তরা—সেসব এলাকার ভবনগুলোর ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি।
মন্তব্য করুন