

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তের ওপর। সব ঠিক থাকলেও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স জটিলতায় আগামীকাল রোববারের আগে যুক্তরাজ্যে নেওয়া যাচ্ছে না রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। কারিগরি ত্রুটির কারণে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে আজ শনিবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা ঢাকায়। খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হবে অত্যাধুনিক লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে। আর লন্ডনের এই চিকিৎসা যাত্রায় তার সঙ্গী হতে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান।
এদিকে, খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় গতকাল জুমার নামাজের পর দেশজুড়ে বিভিন্ন মসজিদে বিএনপির উদ্যোগে বিশেষ দোয়া মাহফিল হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবারও মেডিকেল বোর্ড তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে।
মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়। বোর্ড দ্রুত বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। এখনো খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নির্ভর করছে বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে ঢাকায়। আর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলেও খালেদা জিয়াকে ১৩ ঘণ্টা বিমানে রেখে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা পুরোপুরি তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। এই চিকিৎসক বলেন, সবচেয়ে ভালো লক্ষণ হলো, খালেদা জিয়ার চেস্ট (বুক) পরিষ্কার হচ্ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় যেখানে কফ জমেছিল।
আরেকজন চিকিৎসক জানান, দেখা যাচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিভিন্ন সমস্যার একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে, যা কয়েকদিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকরা এখনো এই অর্থে আশাবাদী যে, তারা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। ওষুধ কাজ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, কারিগরি ত্রুটি থাকায় যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানোর কথা ছিল, সেটির বদলে বিকল্প একটি বিমান পাঠাবে কাতার সরকার। তবে বিকল্প এই অ্যাম্বুলেন্সটি কবে, কখন ঢাকায় এসে পৌঁছবে, তা নির্ভর করছে মেডিকেল বোর্ডের গ্রিন সিগন্যালের ওপর। যদি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ বিমানযাত্রার মতো উপযুক্ত রয়েছে বলে জানায়, তাহলে আজ শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ এয়ারক্রাফটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। অবশ্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসকরাও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিমানযাত্রার মতো উপযোগী কি-না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এভাবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাতার সরকার এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিচ্ছে, সেটা জার্মানি থেকে ঢাকায় আসবে। চিকিৎসক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে।’
কূটনৈতিক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাওয়া ব্যক্তিদের কলেবর ছোট হবে। প্রাথমিকভাবে বিএনপি ১৮ জনের যে তালিকা করেছে, সেটা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কয়েকজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাবেন। তালিকায় থাকা বাকিরা যাবেন বাণিজ্যিক ফ্লাইটে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। গতকাল বাদ জুমা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিএনপির উদ্যোগে মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, চিকিৎসকরা আশা করছেন আজ শনিবার কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে এসে পৌঁছালে রোববার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে আছেন তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এই চিকিৎসকরা গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবর আসে কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, সব ঠিক থাকলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার পৌঁছতে পারে।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসা শেষে চার মাস পর গত ৫ মে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফিরেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এবারও কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করছে বলে বিএনপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন