মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০২:১৮ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৪৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রিজার্ভ বাড়াতে ধার করার পরামর্শ

প্রকৃত রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের নিচে
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছেই। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে মাত্র তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরাও দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় ধার করে রিজার্ভ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তাদের মতে, যেসব দেশের রিজার্ভ অনেক বেশি তাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ ধার করে দেশের সংকট উত্তরণ করা সম্ভব।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ পরিস্থিতির উত্তরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। দৈনিক কালবেলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও তিনি একই অভিমত জানান।

তিনি বলেন, ‘আপাতত রিজার্ভ ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু টাকা ধার করা যায়। ভারত, চীন ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো অর্থাৎ যাদের রিজার্ভ ভালো তাদের কাছ থেকে যদি এক বিলিয়ন বা দুই বিলিয়ন করে ধার নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সংকট আপাতত কেটে যাবে। পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাও এভাবে নিয়েছে। বাংলাদেশ কখনো নেয়নি। শ্রীলঙ্কা তো বাংলাদেশের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছে। পরে তা আবার

শোধও করে দিয়েছে। বাংলাদেশও আপাতত সেই পথে হাঁটতে পারে।’

এদিকে, গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। রিজার্ভ নিয়ে যে স্বস্তি ছিল সেটা এখন আর নেই, কারণ প্রতিনিয়ত রিজার্ভ কমছে। প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করছে। এটা যদি চলতে থাকে, তাহলে তো এক জায়গায় গিয়ে রিজার্ভ ফুরিয়ে যাবে। তখন এটা আশঙ্কার জায়গায় চলে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখন যে রিজার্ভ আছে, তা বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে।’

রিজার্ভ ধার করার পরামর্শ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে সমস্যার সমাধান হবে।’

অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ সম্পর্কে মতামত চাওয়া হলে এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না। সেটি শুধু আইএমএফের কাছে তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ রিজার্ভ মজুদের শেষ প্রান্তে রয়েছে।

বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল, গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখা। এ জন্য লিখিতভাবে বাংলাদেশকে প্রকৃত রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতি জানিয়ে দেয় আইএমএফ। এই হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানানো শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তাদের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইএমএফের দেওয়া লিখিত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায়, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ ও স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) হিসেবে থাকা ডলার বাদ পড়বে। আর তাতেই পাওয়া যায় প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী রিজার্ভ নেই বাংলাদেশের।

বর্তমানে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে রয়েছে। এই দলের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে রিজার্ভের পতন ঠেকানোসহ শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা। গত বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের কাছে শর্তানুযায়ী রিজার্ভ ধরে না রাখার ব্যর্থতা স্বীকার করেছে। কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি মিশনটির কাছে তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে।

জুনের মধ্যে রিজার্ভের মজুত হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী শুরু করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। উদ্দেশ্য ছিল, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও রিপোর্টিংয়ের মান বাড়ানো। আইএমএফের ঋণের অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল রিজার্ভ থেকে গঠন করা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ বাদ দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। এ ছাড়া প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ কেনার জন্য সোনালী ব্যাংককে এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচির জন্য দেওয়া অর্থ হিসাব থেকে বাদ রাখা।

এখন রিজার্ভের তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে—যেমন মোট রিজার্ভ, বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভ। দুই ধরনের হিসাব (মোট রিজার্ভ, বিপিএম-৬) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করলেও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে না। তবে প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য নিয়মিত আইএমএফকে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

এক গ্রামে ১১ জনের শরীরে মিলল অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ

থানায় জিডি করলেন সালাউদ্দিন টুকু

সংস্কৃতির ভেতরেই রাজনীতির সৃজনশীলতা নিহিত : দুদু

সাইফের চোখ বাঁচাতে প্রয়োজন ৩০ লাখ টাকা

সিরিজ জিততে বাংলাদেশের দরকার ১৪৮ রান

১০

জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সফর গণতন্ত্র ও মানবিক সংহতির বার্তা : প্রেস সচিব

১১

বিরক্ত মেহজাবীন চৌধুরী

১২

জামায়াত অন্তত ১৬০টি আসন পাবে : সাদ্দাম

১৩

‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

১৪

পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে খোয়াব পূরণ হবে না : জাগপা

১৫

‘আসল শিবির হইলো আমার মা, বাড়ি এলেই জোর করে বোরকা পরায়’

১৬

উৎসবের আবহে উদযাপিত হলো টাইমস স্কয়ার দুর্গা উৎসব

১৭

অবশেষে মুখ খুললেন আরিয়ান খান

১৮

৮-৯ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি নিয়ে কী বলছে মাউশি

১৯

গণভবন কখনোই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল না : উপ প্রেস সচিব

২০
X