কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩, ১০:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকারে আন্দালিব রহমান পার্থ

বিদেশিরা আমাদের সমস্যা সমাধান করে দিয়ে যাবে না

আন্দালিব রহমান পার্থ। ছবি : সংগৃহীত
আন্দালিব রহমান পার্থ। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ এবং দলগুলোকেই সংকটের সমাধান করতে হবে। দৈনিক কালবেলাকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এমএম মুসা

কালবেলা: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আন্দালিব রহমান পার্থ: বাংলাদেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভোট চুরি থেকে আরম্ভ করে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে।

সরকার সব সময় সব অভিযোগ খারিজ করে দিতে চায়। যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। প্রশাসনে যারা খারাপ কাজ করছে, তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। যে যত খারাপ করে, সে তত উন্নতি করে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিবাদ করলেও দেখা যায় তারা আরও ভালো অবস্থানে চলে গেছে। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যায়। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিটি বাংলাদেশের জন্য দরকার ছিল। সরকার এবং যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, নির্বাচন কারসাজির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা যে, অন্যায় করে পার পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির জন্য সরকারই দায়ী।

কালবেলা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আপনারা নির্বাচনে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। সরকার বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সমাধান আসবে কীভাবে?

আন্দালিব রহমান পার্থ: ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন। বিশ্বের কোনো দেশে এমন নির্বাচন হয়েছে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অনেকে হয়তো বলেন না; তবে বিদেশি রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগেরও অনেকে বলেছেন, যারা আওয়ামী জোটের সঙ্গে আছেন, তারাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন থেকেও বলা হয়েছে—ওই নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন যে কারণে আমরা করতে চাই, সেটাও হবে না। আমরা আশা করি, সরকার পরিস্থিতি ভালো করতে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।

কালবেলা: বিএনপিসহ আপনাদের ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি কি গ্রহণযোগ্য হবে?

আন্দালিব রহমান পার্থ: বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তাদের ছাড়া কোনো সংসদ নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি প্রধান এখানে। আমরা যারা ছোট ছোট দল, তারা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করি তাহলে ভোটাররা আসবে না।

কালবেলা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিকল্প কোনো পরিকল্পনা আপনাদের আছে কি?

আন্দালিব রহমান পার্থ: না, আমরা এ ব্যাপারে এখনো বসিনি বা আলোচনা করিনি। ফোকাসটা আমরা এক জায়গায় রাখছি। তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অল্টারনেট কোনো ফোকাসে আমরা যাই নাই।

কালবেলা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনারা কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ হবেন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: সেটা সময় বলে দেবে।

কালবেলা: সম্প্রতি আপনি ইংল্যান্ডে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। কী আলোচনা হয়েছে তার সঙ্গে। নির্বাচনে যাওয়া বা জোটে যোগদানের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে কি?

আন্দালিব রহমান পার্থ: এসব ব্যাপারে কথা হয়নি। আমার সঙ্গে বিএনপির অনেক বছরের সম্পর্ক। বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম কারণ ছিল, বিএনপি সবার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিল না। পরে দেখা গেল বিএনপি নিজেই জোট ভেঙে দিয়েছে এবং সংসদ থেকে বের হয়ে গিয়েছে। আমি যেটা আগে করেছি বিএনপি সেটা পরে করেছে। আমি সব সময়ই তারেক রহমান ভাইয়ের কাছে যাই, তার সঙ্গে কথা হয় ক্যাজুয়ালি। এবারও কথা হয়েছে। রাজনীতি নিয়েও কথা হয়েছে। এর মধ্যে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

কালবেলা: ২০১৪ সালের একটি ফর্মুলা নিয়ে আবারও আলোচনা চলছে। যেমন—সব দলকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। সেবার আপনারা সাড়া দেননি। এবার কি এমন আলোচনায় সাড়া দেবেন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: এই বিষয়গুলো আরও অনেক পরের ব্যাপার, হাইপোথেটিক্যাল কথা বলে লাভ নেই। আপাতত এ পর্যন্ত আছে যে, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবে না, আর বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কিছু নেবে না। আর আমেরিকা বিশ্বাস করে যে, এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা: আপনাদের অভিযোগ অনুযায়ী প্রশাসনে বিভিন্ন লেয়ারে আওয়ামী লীগের নিজস্ব লোক আছে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘নেক্সাস’ তৈরি করা হয়েছে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসেও, তাহলে কি এমন পরিস্থিতির উন্নতি হবে?

আন্দালিব রহমান পার্থ: আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, তারা সবাই ক্ষমতার লোক। তারা কারও নিজের লোক না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে তারা কেউ থাকবে না।

কালবেলা: এই সরকারের সময় একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যারা ক্ষমতালোভী বলে অনেকের দাবি। তারা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা কি চাইবে ক্ষমতা পরিবর্তন হোক?

আন্দালিব রহমান পার্থ: কে চায় না চায়, কিছু আসে যায় না, দিনশেষে জনগণ কী চায়, সেটা ম্যাটার করে। অবশ্যই তারা চাইবে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে। এ দেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ, ১২ কোটি ভোটার। ভোটাররা ঠিক করবে এ দেশের ভবিষ্যৎ সামনে কী হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। নেতৃত্ব ও নেতা ভোটাররা বেছে নেবে।

কালবেলা: আপনার কথায় মনে হচ্ছে, বিদেশি চাপের চেয়েও বেশি জরুরি জনগণের আন্দোলন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: বিদেশিরা পরামর্শ দেবে, নিষেধাজ্ঞা দেবে। কিন্তু বিদেশিরা আমাদের সমস্যা সমাধান করে দিয়ে যাবে না। বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান করতে হবে।

কালবেলা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

আন্দালিব রহমান পার্থ: এখনো নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতিতে যাচ্ছি না। সময়েরটা সময়ে বলা যাবে।

কালবেলা: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে একটা অনীহা তৈরি হয়েছে। রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে কী আগ্রহী করে তোলা যাবে?

আন্দালিব রহমান পার্থ: প্রথমেই তরুণ প্রজন্মের সামনে রাজনৈতিক আইডল তৈরি করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের ভালো রাজনীতিবিদ লাগবে যাদের তারা অনুসরণ করবেন। রাজনীতি কুলষিত হওয়ায়ও তরুণ প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। রাজনীতিবিদদের মানুষ খুব একটা ইতিবাচক চোখে দেখে না। আর ইতিবাচক দেখে না বলেই তরুণ সমাজ রাজনীতিতে আসতে চায় না। তরুণ সমাজ এখন সাকিব আল হাসান হতে চায়, বলিউডের হিরো বা মার্ক জাকারবার্গ—তাদের দ্বারা অনেক বেশি আকৃষ্ট। এখন আর কেউ বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমান হতে চায় না। সঠিক রাজনীতির চর্চা থাকলে ভালো তরুণ জনগোষ্ঠী রাজনীতিতে আসবে।

কালবেলা: ১/১১-এর মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধিক সময়কাল ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে সেটি কি গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হবে?

আন্দালিব রহমান পার্থ: সেটা নির্ভর করে সেই সরকারের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা কী, তার ওপর। গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য তারা আসছেন না তারা নিজেরা নিজেদের জন্য আসছেন, সেগুলোর ওপর নির্ভর করে। এগুলো আসলে অনেক পরের কথা। আমি চাই বড় দুটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় বসে এ সমস্যাটার সমাধান করুক।

কালবেলা: আলোচনায় বসবে কী করে? বিএনপি যে শর্তগুলো দিয়ে রেখেছে, সেগুলো আওয়ামী লীগ মানছে না। আবার আওয়ামী লীগ যেগুলো বলছে, তা বিএনপি মানছে না...

আন্দালিব রহমান পার্থ: বিএনপির দাবি না মানলে আওয়ামী লীগের একটা ভালো সমাধান দেওয়া উচিত। সমাধানটি যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তখন বিএনপির ওপর একটা রাজনৈতিক চাপ আসবে। বিএনপি যেহেতু একটা কথা বলেছে আওয়ামী লীগেরও উচিত আরেকটু নমনীয় হওয়া। কিন্তু বিএনপি যে দাবিটা করছে, সেটা জনগণের দাবি, আমাদেরও দাবি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকারই আলটিমেট ব্যবস্থা। বিদ্যমান অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

১০

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১১

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১২

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১৩

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৪

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

১৫

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৬

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১৭

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১৮

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১৯

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

২০
X