সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে টেলিগ্রাম অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে। সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকে আত্মগোপনে থাকলেও দলীয় নির্দেশনা পাচ্ছেন টেলিগ্রামে। এ অ্যাপসের মাধ্যমেই সারছেন সব রাজনৈতিক যোগাযোগ। অনেকে বিদেশি অপারেটরের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপির দলীয় সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।
সূত্র বলছে, এই টেলিগ্রাম এবং বিদেশি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে দেশে প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট ডাটাও ব্যবহার করা হচ্ছে না। এমনকি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ডাটা ব্যবহার না করে নজর এড়াতে আলাদা রাউটার ব্যবহার করছেন।
যদিও সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আত্মগোপন দীর্ঘায়িত করা গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে আসামির অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন নয়। সময়সাপেক্ষ হলেও যে মাধ্যমেই হোক, দেশের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেই যে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, টেলিগ্রাম অ্যাপস ব্যবহার করে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আদান-প্রদানসহ গ্রেপ্তার এড়ানো এবং আন্দোলনের নানা নতুন কৌশলের আলাপচারিতাও চলছে ওই মাধ্যমে। এরই মধ্যে বিএনপির নেতাদের জেলাভিত্তিক টেলিগ্রাম গ্রুপ খোলার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দৈনিক কালবেলার কাছেও রয়েছে এমন কিছু তথ্য। এসব গ্রুপের কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য দায়িত্বে আছেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা মডারেটর। তারা পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের কাজ করেন। আর সেই সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। তারাই আবার একই মাধ্যমে তৃণমূলের তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওইদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে আগুন দেওয়া ছাড়াও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও পুলিশের এক সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া হামলায় আহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতাল এবং পরের তিন দিনের অবরোধে অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিএনপির শীর্ষ নেতা ছাড়াও সহস্রাধিক নেতাকর্মী আসামি হন। মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে থানা পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরই মূলত গা ঢাকা দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্য অবস্থান থেকে দূরে সরে অবস্থান নেন বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। আর মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে শুরু করেন টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ।
সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা দৈনিক কালবেলাকে বলেন, কেউ যদি মনে করেন যে, টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করলে তিনি তার অবস্থান লুকাতে পারবেন, তাহলে সেটি ভুল। আমি যতটুকু বলতে পারি, টেলিগ্রাম-সিগন্যালসহ যে কোনো ধরনের মাধ্যমে নজরদারি করার সক্ষমতা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রাউটার কিংবা বিদেশি নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলেও লাভ হয় না।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘যারা আসামি, তাদের সবাইকে আইনের কাছে সোপর্দ হতে হবে। যারা পালিয়ে ছিল, তারা কিন্তু রক্ষা পায়নি। যারা পালিয়ে আছে, এখনো আমি মনে করি তাদের ধরে আদালতের কাছে সোপর্দ করব।’
কেন টেলিগ্রাম অ্যাপ: সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, টেলিগ্রাম অ্যাপ তুলনামূলক নিরাপদ। অন্যান্য যে কোনো অ্যাপের চেয়ে এই মাধ্যমে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব। একসঙ্গে অনেক ডকুমেন্টস বা ভিডিও প্রেরণ বা রিসিভ করা সম্ভব এই অ্যাপে। তা ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুললে সাধারণত অল্পসংখ্যক অনুসারীকে যুক্ত করা যায়। তবে টেলিগ্রামে একসঙ্গে লাখ লাখ অনুসারীকে যুক্ত করা সম্ভব। এজন্য সাধারণত নিষিদ্ধ জগতে যোগাযোগের জন্য দুনিয়াজুড়েই এই অ্যাপ জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক সময়ে তা দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।