আতাউর রহমান
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৬ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নাশকতা ঠেকাতে আনসারে ভরসা রেল বিভাগের

চলছে গোয়েন্দা নজরদারি
নীলফামারীর ডোমারে বুধবার রাতে খুলে ফেলা রেললাইনের ফিশপ্লেটে ক্লিপ লাগানোর কাজ করছেন রেলকর্মীরা। ইনসেটে স্থানীয়দের ধাওয়ায় দুর্বৃত্তরা পালি গেলে উদ্ধার করা ফিশপ্লেটের ক্লিপ। ছবি: কালবেলা
নীলফামারীর ডোমারে বুধবার রাতে খুলে ফেলা রেললাইনের ফিশপ্লেটে ক্লিপ লাগানোর কাজ করছেন রেলকর্মীরা। ইনসেটে স্থানীয়দের ধাওয়ায় দুর্বৃত্তরা পালি গেলে উদ্ধার করা ফিশপ্লেটের ক্লিপ। ছবি: কালবেলা

রেললাইন বিচ্ছিন্ন করা বা আদালত কক্ষে পেট্রোল বোমা হামলার মতো নতুন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে আরও কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এজন্য নানা কৌশলে দায়িত্ব পালন শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর সঙ্গে নাশকতা ঠেকাতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ধরনের নাশকতার নির্দেশদাতা বা পরিকল্পনাকারীদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বুধবার ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের শ্রীপুরে অক্সিঅ্যাসিটিলিন দিয়ে রেললাইনের শক্ত লোহার পাত গলিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়। একই দিন ভোরে খুলনার পাইকগাছায় আদালতের এজলাস কক্ষে পেট্রোল বোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া বুধবার রাতে নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিশপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা চলে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিরোধী দলের চলমান হরতাল-অবরোধে প্রায় প্রতিদিনই বাসে আগুন ও ককটেল নিক্ষেপের মতো নাশকতা হয়ে আসছে। এর মধ্যে বুধবার রেললাইনে ও আদালতের এজলাসে সহিংসতার নতুন ধরন শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের নাশকতা দমনে শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কর্মকৌশল ঠিক করে এ ধরনের নাশকতা ঠেকাতে মাঠ প্রশাসনে নানা বার্তা দেওয়া হয়েছে।

রেল পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রেললাইনে নাশকতা ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছে রেল পুলিশ। সারা দেশে রেল পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। রেল বিভাগের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরে আনসার বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলেই ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আরও আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেললাইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও নাশকতা হতে পারে—এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে নিরাপত্তা কৌশল ঠিক করা হয়েছে।

রেল পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের এসপি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) তোফায়েল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, রেলের নিরাপত্তায় আমরা সব সময়ই দায়িত্ব পালন করে থাকি। সাম্প্রতিক সময়ের নাশকতায় সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রেলস্টেশনে এক ধরনের নিরাপত্তা, রেলে এক ধরনের এবং রেললাইনে আরেক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেল পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সংস্থাগুলোও দায়িত্ব পালন করছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রেললাইনের নিরাপত্তা দেওয়া অনেকটা কঠিন। তা ছাড়া শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে রেললাইনকেন্দ্রিক নাশকতা চালানো কিছুটা সহজ হয়ে পড়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে নেই। এজন্য রেললাইনের আশপাশের এলাকা ধরে বাসিন্দাদের কারা নাশকতায় যুক্ত হতে পারে—এমন লোকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এসব এলাকায় সন্দেহভাজনদের দিকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের এসপি আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তার বিভিন্ন সময়ে রেলস্টেশনগুলোতে পুলিশের সঙ্গে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। সাম্প্রতিক নাশকতার পর চলন্ত রেলের বগিতেও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এজন্য নতুন করে আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রেললাইনকেন্দ্রিক নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে খুলনার আদালতের এজলাসে পেট্রোল বোমায় আগুন ধরানোর মতো অন্য কোথাও যাতে এ ধরনের নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য সারা দেশে মাঠপর্যায়ে পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় এ ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বড় ধরনের রাজনৈতিক নাশকতা ঠেকানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে পুলিশের। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সাধারণ কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতার সঙ্গে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এ ধরনের নাশকতা ঠেকানো এবং নাশকতাকারীদের আইনের আওতায় নেওয়া সহজ হবে। সেই কৌশল নেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতেও নীলফামারীতে রেললাইনে নাশকতা চালানোর সময়ে জনতার জনতার ধাওয়ার মুখে দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এজলাসে আগুন ধরানোর সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন একজনকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। নাশকতা বা বিশৃঙ্খলাকারীদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাঝরাতে মিথিলার খুশির খবর

‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

সাব ব্রাঞ্চ ইনচার্জ পদে ইউসিবি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

এসএমসিতে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

সিদ্ধিরগঞ্জে বিস্ফোরণে নাতির পর নানির মৃত্যু

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন আজ

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২৬ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু আজ

১০

তিন সহযোগীসহ ‘মাদক সম্রাট’ শাওন গ্রেপ্তার

১১

ফের সৈকতে ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

১২

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৩

২৬ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

পাঁচ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

১৫

ক্ষমতায় গেলে এক কোটি কর্মসংস্থান করবে বিএনপি : টুকু

১৬

ড. ইউনুস কি ভালো ভোট করতে পারবেন : মান্না

১৭

ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্কবার্তা দিলেন আমিনুল হক

১৮

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, চাচাতো চাচা রফিকুল রিমান্ডে 

১৯

জবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা মনিটরিং সিস্টেম চালু ১ সেপ্টেম্বর

২০
X