সব স্কুলের অবস্থানই বাংলাদেশে। সিলেবাস বিদেশের হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাই এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে। তবে এ দেশে পরিচালিত স্কুলগুলোর বেতন-ফি আদায় করা হয় ডলারে, যার বড় অংশই চলে যায় বিদেশ। একজন শিক্ষার্থীকে শুধু টিউশন ফি বাবদ বছরে ৩৭ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে হয়—বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বিপুল ব্যয়ের এসব স্কুলে একদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে দেশে চলমান ডলার সংকটকে তীব্র করতে ভূমিকা রাখছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক এবং ভিনদেশি যেসব নাগরিক নানা কাজে এ দেশে বসবাস করেন তাদের সন্তানরা কোথায় পড়বে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। কিছু স্কুলে ডলারে ফি আদায়ের কারণে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। সেসব স্কুলে শিশুদের ভর্তি করানোর জন্য প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষাক্রমে প্রধান তিনটি ধারা রয়েছে। প্রথম দুটি হলো পিয়ারসন এডেক্সেল ও ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের এক্সাম বোর্ডের আওতায় সারা বিশ্বে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই দুটি ধারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। আরেকটি ধারা হলো ইন্টারন্যাশনাল বাকালরিয়েট (আইবি)—যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সাম বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ব্যানবেইসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৭টি। এসব স্কুলে পড়াশোনা করছে ৭১ হাজার ৪৫৬ শিক্ষার্থী। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে নিবন্ধিত আছে ১৪১টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আর বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার শতাধিক। ব্যানবেইসের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, নিবন্ধন করেছে ১০৯টি স্কুল।
কালবেলার অনুসন্ধানে আইবি কারিকুলামে পরিচালিত চারটি ও ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত একটি স্কুলে ডলারে ফি আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। আইবি কারিকুলামের স্কুলগুলো হলো আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (এআইএসডি), ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি), প্লেজ হারবার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। অন্যদিকে ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত হচ্ছে হেইলিবেরি ভালুকা। এর মধ্যে তিনটি স্কুল রাজধানীর অভিজাত এলাকায়, একটি গাজীপুরে ও অন্যটি ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানভেদে এসব স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে টিউশন ফি নেওয়া হয় ৩ হাজার ২৬০ ডলার থেকে ৩৭ হাজার ৩০০ ডলার পর্যন্ত। ১ ডলারে ১১০ টাকা হিসাবে বছরে টিউশন ফি বাবদ একজন শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৪১ লাখ টাকার বেশি। সঙ্গে রয়েছে ৬০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত ভর্তি ফি। অর্থাৎ, ভর্তির জন্যই বছরে গুনতে হচ্ছে ৬৬ হাজার থেকে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আছে পুনঃভর্তি, ডেভেলপমেন্ট ফি, ইউটিলিটি ফি, ট্রিটমেন্ট ফি, ট্যুর ফিসহ বিবিধ খরচ। এসব প্রতিষ্ঠানেই আবার চালু আছে কোচিং প্রথা, সেখানেও দিতে হয় আলাদা ফি।
জানা গেছে, এআইএসডি চালু রয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে। এই স্কুলে প্রি-কেজি থেকে গ্রেড-১২ পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। বাংলাদেশে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের সন্তানরা এ স্কুলে পড়াশোনা করে। পাশাপাশি বাংলাদেশিদেরও ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
আইএসডিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালে। প্লে গ্রুপ থেকে গ্রেড-১২ (দ্বাদশ) পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে স্কুলটিতে। অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। তবে ২০১৭ সাল থেকে স্কুলটি আইবি কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এখানে আর্লি চাইল্ডহুড থেকে গ্রেড-১২ পর্যন্ত কার্যক্রম রয়েছে।
দেশে আইবি স্বীকৃত প্রথম আবাসিক স্কুল প্লেজ হারবার ইন্টারন্যাশনাল গাজীপুরের মাওনায় অবস্থিত। ২০১৬ সাল থেকে এই স্কুলে আইবি কারিকুলাম পরিচালিত হচ্ছে। এর বাইরে ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত হচ্ছে হেইলিবেরি ভালুকা। ময়মনসিংহের ভালুকায় আবাসিক স্কুলটির অবস্থান। আবাসিক এ স্কুলটি চলতি বছরই কার্যক্রম শুরু করেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচটি স্কুলে সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ শতাধিক। তাদের পেছনে বছরে অভিভাবকদের প্রায় আড়াই কোটি ডলার খরচ হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির পরিচালক অধ্যাপক এম মেসবাহউদ্দিন সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে ডলার সংকট তীব্র হলেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো ফি আদায়ের পদ্ধতি বদলায়নি। দেশি কিছু স্কুলও অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে। কিন্তু তদারকি করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জনবলের ঘাটতি রয়েছে।’
কোন স্কুলে কত ফি এআইএসডিতে ভর্তির আবেদন ফি ৩৫০ ডলার, রেজিস্ট্রেশন ফি ১৫ হাজার ডলার, সিট আমানত ফি ৩ হাজার ডলার দিতে হয়। পাশাপাশি টিউশন ফি প্রি-কিন্ডারগার্টেন ৩-এ ১৩ হাজার ৯০০ ডলার থেকে গ্রেড ৯-১২ পর্যন্ত দিতে হয় ৩৭ হাজার ৩০০ ডলার। এ স্কুলে টিউশন ফি দুটি কিস্তিতে দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫২০ ডলার থেকে ১ হাজার ৩৯৮ ডলার পর্যন্ত দিতে হয়। বছরে দুইশর বেশি শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল ফান্ডে যাচ্ছে প্রায় ৯০ লাখ ডলার।
উচ্চহারে ফি নিয়ে কথা বলার জন্য এআইএসডির ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে ইমেইল ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। স্কুলটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ওমর সাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আগে ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলাম, এখন নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা সমীচীন মনে করছি না।’
আইএসডিতে ভর্তির আবেদন ফি ২৫০ ডলার, ভর্তি ফি ৮ হাজার ডলার, ফিল্ড ট্রিপ (গ্রেড ৪-১০) ৩০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ ডলার, নিরাপত্তা আমানত ৫০০ ডলার দিতে হয়। এই স্কুলে টিউশন ফি প্লে গ্রুপে ৪ হাজার ৯৩০ ডলার থেকে গ্রেড-১১-১২-এ ৩৩ হাজার ৯৩২ ডলার দিতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে কিছু অতিরিক্ত সার্ভিস। সে ক্ষেত্রে বাস সার্ভিসের জন্য ১ হাজার ৯০২ ডলার থেকে ২ হাজার ৮৫২ ডলার, পিয়ানো-গিটার শিখতে চাইলে ১ হাজার ৬৫০ ডলার এবং ক্যাফেটেরিয়া সার্ভিসের জন্য ৫১৮ থেকে ২ হাজার ১৩৪ ডলার দিতে হয়। ভর্তির আবেদন ফি, ভর্তি ফি, ফিল্ড ট্রিপ, নিরাপত্তা আমানত ও টিউশন ফি বাবদ বছরে যায় ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৫০ ডলার। সঙ্গে অর্ধেক শিক্ষার্থী পরিবহন, পিয়ানো ও ক্যাফেটেরিয়া ব্যবহার করলে সর্বনিম্ন দিতে হচ্ছে প্রায় ৬ লাখ ডলার। দুইশর বেশি শিক্ষার্থীর জন্য বছরে অভিভাবকদের মোট খরচ প্রায় ৫০ লাখ ডলার।
আইএসডি স্কুলের এক অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, ভর্তির সময় তারা বলেছিল টিউশন ফি ছাড়া আর কোনো ব্যয় হবে না। কিন্তু পরে দেখি পিকনিক করলে, ট্যুরে গেলেও ফি দিতে হচ্ছে। এমনকি ক্লাসে সব পড়া সম্পন্ন করা হবে জানানো হলেও অতিরিক্ত ফি নিয়ে কোচিং করানো হচ্ছে।
আইএসডির ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে কল করা হলে একজন রিসিভ করে বলেন, ‘এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। আপনি মেইল করে তাদের কাছে জানতে চান।’
ইমেইলে যোগাযোগ করলে আইএসডি কর্তৃপক্ষ জানায়, বৈশ্বিক হিসেবে স্কুলের ওয়েবসাইটে ডলারে ফি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে টাকায় ফি দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে। ফি কেন বেশি নেওয়া হয়—এমন প্রশ্নে আইএসডি জানায়, আমরা গুণগত মান নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর। সেই মান নিশ্চিতে অভিজ্ঞ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিতে এই ফি আমাদের সাহায্য করে।
প্লেজ হারবার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি ফি ৩ হাজার ৫০০ ডলার, নিরাপত্তা আমানত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ ডলার, ডরমিটরি, খাবার, খেলাধুলা, চিকিৎসা, লন্ড্রি, সেলুন ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য মাসে ৮০০ ডলার করে বছরে ৯ হাজার ৬০০ ডলার দিতে হয়। এ ছাড়া টিউশন ফি গ্রেড ১-২-এ ৪ হাজার ৮০০ ডলার থেকে শুরু করে গ্রেড-১১-১২ পর্যন্ত দিতে হয় ১১ হাজার ৪০০ ডলার। দুইশর বেশি শিক্ষার্থীর জন্য অভিভাবকদের বছরে খরচ ৪০ লাখ ডলারের বেশি।
প্লেজ হারবার স্কুলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. রেজওয়ান বলেন, ‘আইবি কারিকুলামে পরিচালিত স্কুলগুলোর খরচ কিছুটা বেশি। তবে এই কারিকুলামে পরিচালিত চারটি স্কুলের মধ্যে প্লেজ হারবারই সবচেয়ে কম ফি নেয়।’
তবে ডলারে ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তির আবেদন ফি ২ হাজার টাকা, ভর্তি ফি ৬০০ থেকে ৮০০ ডলার, পরিবহন ফি ১ হাজার ৪৪০ ডলার, টিউশন ফি আর্লি চাইল্ডহুডে ৩ হাজার ২৬০ ডলার থেকে গ্রেড-১২-এ ১২ হাজার ডলার দিতে হয়। দুইশর মতো শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের থেকে বছরে স্কুলের ফান্ডে যাচ্ছে প্রায় ২২ লাখ ডলার ও ৪ লাখ টাকা।
অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নম্বরে ফোন করা হলে একজন রিসিভ করেন। নিজের পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আইবি কারিকুলামে পরিচালিত অন্য স্কুলগুলোর তুলনায় আমাদের খরচ অনেক কম।’
ডলারে ফি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে ডলারের পাশাপাশি টাকায় ফি নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো যাবে।’
এরপর তিনি এই প্রতিবেদককে কিছুক্ষণ পর আবার কল করতে বলেন। তবে পরবর্তী সময়ে ওই নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
হেইলিবেরি ভালুকায় রেজিস্ট্রেশন ফি ১৫০ ডলার, ভর্তি-গ্রহণযোগ্যতা ফি ৮ হাজার ৫০০ ডলার, নিরাপত্তা আমানত ১ হাজার ৫০০ ডলার এবং গ্রেড ৭-৯ পর্যন্ত টিউশন ফি ৩৪ হাজার ৫০০ ডলার দিতে হয়। ১ হাজার শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
হেইলিবেরি ভালুকার ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে কল করা হলে রাব্বি নামে একজন রিসিভ করে বলেন, ‘আমরা ডলারের সমপরিমাণ টাকা নিই। যেহেতু বেশিরভাগ শিক্ষক বাইরের, সে কারণে খরচ বেশি। এ ছাড়া আমাদের বোর্ডিং স্কুল। যে কারণে ফি বেশি।’
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বিত্তশালীরাই এসব স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করান। ফলে ডলারে ফি দিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে দেশে বর্তমানে ডলার সংকট থাকায় স্কুলে ফি পরিশোধে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলেই টাকায় ফি নেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের সভাপতি এ কে এম আশরাফুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফি যৌক্তিক হারে নির্ধারণের জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। ৬৪ জেলায় সরকারি উদ্যোগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খুললে স্কুলগুলোতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বাড়বে। সরকারি স্কুলেও চাইলে ইংরেজি মাধ্যমের শাখা খোলা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটিতে কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এসব স্কুল পরিচালনায় অভিভাবকদের মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়েও সরকারের তদারকি করা উচিত।’
জানা গেছে, দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পরিচালনায় একটি আইন ও নীতিমালা করার পরামর্শ দিয়েছিল জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটি। তবে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ‘বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নীতিমালা-২০১৭-এর আওতায় অনুমোদন নেয় এসব প্রতিষ্ঠান। গত বছরের শেষ দিকে পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি। আর বেতন ফি-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ, পরিচালনা কমিটিতে অভিভাবক প্রতিনিধি রাখাসহ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তবে বেশিরভাগ স্কুলে তা মানা হচ্ছে না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞা কালবেলাকে বলেন, ‘ফি নির্ধারণে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো কারও কথা শোনে না। অনেকে নিবন্ধনও ঠিকমতো হালনাগাদ করে না। আমরা নির্দেশনা দিলেও আশানুরূপ সাড়া পাইনি।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত স্কুলগুলোর বাজার রয়েছে। সেখানে কেউ পড়তে চাইলে জনস্বার্থের বিষয় নেই। সরকারও সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কূটনৈতিক পরিবারের বাচ্চারা এখানে পড়ে। যেহেতু তারা বিদেশি প্রতিষ্ঠান, সে কারণে ডলারে ফি নেয়। তবে অনেকে ডলারের সমপরিমাণ টাকাও নেয় বলে জানি। কোনো অভিভাবক যদি এসব বিষয়ে অভিযোগ করে আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেব।’