সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ভোটের প্রচার চালানোয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খাজা মিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবকে সাত দিনের মধ্যে নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীকে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে সচিব খাজা মিয়ার অবস্থান তুলে ধরার জন্য নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দৈনিক কালবেলায় ‘চাকরিবিধি লঙ্ঘন
করে সচিবের নির্বাচনী প্রচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান খান গতকাল বৃহস্পতিবার ই-মেইল ও রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ তিন সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ই-মেইল ও ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠিয়েছি। সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নড়াইল-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে আপনি (খাজা মিয়া) বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা কথা বলতে চাই প্রিয় এলাকাবাসী, আপনাদের মাধ্যমে নড়াইল-১ আসনের সব জনগণের কাছে একটা কথা পৌঁছে দিতে চাই। আমি আমার চাকরিজীবনের কয়েক মাস চাকরি আছে। আমি আর চাকরি করব না। আপনি আমাকে নমিনেশন (মনোনয়ন) দেন। আমি কালিয়ায় ফিরে যেতে চাই। এই কালিয়ায় আমার জন্ম, আমি এখানেই বেড়ে উঠেছি, এখানেই আমি গড়ে উঠেছি। এখানে আমি ছাত্র রাজনীতি করেছি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, তোমাদের একটি মামলা আছে, তোমাদের একটি আইনি বার (বাধা) আছে, তিন বছরের আগে নির্বাচন করতে পারবে না। আমি বলেছিলাম, নেত্রী, আমরা ওই তিন বছরের আইনি বার তুলে দিতে হাইকোর্টে মামলা করেছি, মামলার রায় হয়তো আমাদের পক্ষে আসবে। আমরা আশা করছি। এরই মধ্যে আমরা সব প্রকার যোগাযোগ স্থাপন করেছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা রায় পাব। রায় পেলে আমি নেত্রীর কাছে গিয়ে বলব যে, আমি এলাকার মানুষের কাছে ফিরে যেতে চাই। যদি আমাকে নমিনেশন দেন, তাহলে মানুষের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে যেতে চাই।’ এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন এবং দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা স্পষ্টতই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
এর আগে গত বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রণীত আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে ভোটের মাঠে নেমেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া। আগামী নির্বাচনে নিজ এলাকা নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শুরু করেছেন নির্বাচনী প্রচার। অথচ তার চাকরির মেয়াদ আছে আরও এক বছর। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তার অবসর গ্রহণের পর তিন বছর পার হওয়ার আগে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১) ধারায় (রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ) বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গ-সংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।’
অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর ১২ (১) (চ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসর গমন করেছেন এবং উক্ত পদত্যাগ বা অবসর গমনের পর তিন বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। অর্থাৎ, অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর শেষ না হলে কোনো সরকারি চাকরিজীবী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।’ অবশ্য এ বিধান বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে দায়িত্বরত খাজা মিয়ার সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ৪ জুলাই। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। তবে সরকারি চাকরি ছাড়ার তিন বছর পর নির্বাচন করার বিধান হাইকোর্টে বাতিল হলে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যেই নির্বাচনী এলাকায় উঠান বৈঠক, পথসভা ও জনসংযোগ করছেন।
মন্তব্য করুন