শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মশক নিধন ইচ্ছামতো ডেঙ্গু বাড়ছে লাফিয়ে

সমন্বয় নেই সংস্থাগুলোর
হাসপাতালে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে। রোববার রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল থেকে তোলা	 কাজল হাজরা
হাসপাতালে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে। রোববার রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল থেকে তোলা কাজল হাজরা

ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে একেক সময় একেক উদ্যোগ। সংশ্লিষ্টদের নানা রংচং মেশানো বক্তব্য। মশক নিধনে সপ্তাহব্যাপী, মাসব্যাপী বিভিন্ন ধরনের অভিযান। তবে এসব কোনো কাজেই আসছে না। বরং বছরের পর বছর প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় মশা নিধনে নানা কর্মসূচি পালন করে। তবে এক করপোরেশনের সঙ্গে আরেকটির কর্মসূচিতে কোনো মিল নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও সমন্বয়ের উদ্যোগ নেই। ফলে মশা নিধনে নানা কর্মসূচি পালন করলেও ফলাফল প্রায় শূন্যের কোঠায়।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামিতে। সেখানে তারা মশক নিয়ন্ত্রণের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। সরেজমিন পরিদর্শন করেন মশক নিধন পদ্ধতি। প্রশিক্ষণ শেষে তারা জানান, এতদিন ভুল পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকার দুই সিটি। ফলে কখনোই মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। এখন ভুল পদ্ধতি থেকে বের হয়ে মিয়ামি পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন তারা। এরপর তারা এপ্রিলে যান দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে। আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মশা দমনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দেখেন তারা। এরপর ঘোষণা দেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতির চেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভেকল মাউন্টেন মেশিনের মাধ্যমে লার্ভিসাইডিংয়ের মাধ্যমে মশা দমন সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি। এভাবে এক দশকে মশা নিধনে শতভাগ সফল হয়েছে সিউলের নগর সরকার। সেই পদ্ধতিই কাজে লাগাতে চাচ্ছে উত্তর সিটি।

এভাবে দেশ-বিদেশ ঘুরে মেয়র নানা উদ্যোগের গল্প বললেও বাস্তবে মশক নিধনে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি ডিএনসিসি। একই অবস্থা দক্ষিণেও। ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, মশক নিধনে তিনি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। যেসব ওষুধ এতদিন ব্যবহার করা হয়েছে, তা কার্যকর ছিল না। ওষুধের ক্ষেত্রেও আনবেন পরিবর্তন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো সেই আগের ওষুধ ও পুরোনো পদ্ধতিতেই চলছে মশা নিধন।

এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে এর আগে দুই সিটি করপোরেশনের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে জলাশয়ে নোভালরুন ট্যাবলেট প্রয়োগ, ড্রেনে গাপ্পি মাছ, জলাশয়ে হাঁস ও ডোবায় ব্যাঙ ছেড়েছিল তারা। বিভিন্ন সময়ে ড্রোন দিয়ে মশার উৎসস্থলও চিহ্নিত করে। নির্মাণাধীন বাসাবাড়িতে মশার উৎপত্তিস্থল পেলে জরিমানাও করা হয়। বিপুল আয়োজনে চালানো হয় মশক নিধন অভিযান। তবে এসব আয়োজন চলে মশার উপদ্রব বাড়ার পরে। বছরের বাকি সময় দুই করপোরেশনের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, রাজধানীতে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে মশা নিধন চলে। সাময়িকভাবে লোক দেখানো কিছু কার্যক্রম হয়; কিন্তু স্থায়ীভাবে মশক নিধনে সফলতা পাওয়া যায় না। মশা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত সময়, যখন মশা কম থাকে; কিন্তু যখন মশা বেড়ে যায় বা মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী অতিষ্ঠ, তখন দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট, বিশেষ অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। ভুল সময়ে গৃহীত কর্মসূচিতে লাভ হয় সামান্যই। তবে গবেষকদের যুক্তি মানতে নারাজ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা মেনেই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করে করপোরেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত দেশে প্রতিবছর জানুয়ারিতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক বছরে নভেম্বর থেকেই মশা বাড়তে দেখা যায়। জানুয়ারির আগে থেকেই যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে বর্ষায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না; কিন্তু সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মশক নিধনে মাঠে নামে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার কালবেলাকে বলেন, মশার হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম নিতে হবে। এ মুহূর্তে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করা দরকার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সারা বছরব্যাপী চলমান থাকবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ড. কবিরুল বাশার বলেন, এ বছর ডেঙ্গু বাড়বে, এটি মার্চেই বলেছিলাম। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু একদিনে এ অবস্থায় আসিনি। সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। দেশে ডেঙ্গু স্থায়ী হতে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ দুটি আলাদা সিটি করপোরেশন। তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমও আলাদা। তবে এডিস মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন সমানভাবে কাজ করছে। আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, সেগুলো উত্তর সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে দেব। এজন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এডিস মশা নিধনে চিরুনি অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং লিফলেট বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করছি।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের করণীয়ের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছি। ৮ জুলাই থেকে মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে মশার উৎসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে।

ডেঙ্গুর অবস্থা সুখকর নয় জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম গতকাল রোববার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নতুন করে মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মা-বাবা ও স্ত্রীর নামে কসম করলে কী হয়? জানালেন বিশেষজ্ঞ আলেম

৭ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

ঢাকা-৮ আসনে সাদিক কায়েমের প্রার্থিতার খবরে যা বলছেন হাদি

নির্বাচন কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না : সাইফুল হক

মৃত আত্মীয়কে দেখে ফেরার পথে সড়কে লাশ হলেন শাশুড়ি-পুত্রবধূ

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ড. ওবায়দুল ইসলামের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল

খালেদা জিয়ার আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় কোটি জনতা : অপর্ণা রায়

ঢাকায় রুশ গণ-কূটনীতির শতবর্ষ উদযাপন

ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ : মুফতি মোস্তফা কামাল

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

১০

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

১১

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তার ফেসবুক পোস্ট

১২

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

১৩

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

১৪

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

১৫

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

১৬

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

১৭

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

১৮

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

১৯

চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্য, ৩ দিনেই ক্যানসার থেকে সুস্থ হলেন নারী

২০
X