সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের বিধান বাস্তবায়ন না হওয়ায় সিগারেট বিক্রি করে নির্ধারিত কমিশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০ শলাকার ১ প্যাকেট বেনসন সিগারেট বিক্রি করে ট্রেড মার্জিন হিসেবে ৪ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও কোনো কমিশনই পাচ্ছেন না তারা। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভোক্তার কাছ থেকে বাড়তি দাম নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতা। এতে ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিনিয়ত ঠকলেও লাভবান হচ্ছেন ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাস্তবায়নের জন্য ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ভ্যাট। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আরেকটি বাজেট ঘোষণার সময় চলে এলেও বাজারে নির্ধারিত দামে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে না। অর্থবছরের শুরুতে দাম বাস্তবায়ন এবং নতুন মোড়কের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তিন মাস সময় নেয় এনবিআরের কাছ থেকে। এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ডিলার থেকে শুরু করে পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে সমহারে ট্রেড মার্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে না, যার কারণে বাজারে প্যাকেটে গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট। বাজারে এর প্রমাণ পেয়েছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট)। আর ডিলার ও পাইকারদের যোগসাজশের কারণে বাজারে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের সময় ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর পরামর্শে ২০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেট বিক্রিতে ট্রেড মার্জিন ধরা হয় ৪ টাকা। এই কমিশনের টাকা ডিলার, পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে সমহারে ভাগ হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। খুচরা পর্যায়ে কোনো ধরনের কমিশনও দিচ্ছে না ডিলাররা। যার কারণে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে না। বিএটির চার স্তরের সিগারেট বিক্রিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে তার মোবাইল ফোনে বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
এনবিআর সূত্র জানায়, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর ঘোষণা অনুযায়ী বেনসন ২০ শলাকার প্যাকেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩১০ টাকা। এতে ট্রেড মার্জিন ৪ টাকা। অর্থাৎ ২০ শলাকার বেনসন সিগারেট বিক্রি করে ডিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা ৪ টাকা পাবে। সেই হিসাবে তিন স্তরের বিক্রেতারা ২০ পয়সা করে পাবেন প্রতি শলাকা সিগারেট বিক্রিতে। আর কোম্পানির ঘোষিত হিসাব অনুযায়ী, খুচরা বিক্রেতা ২০ শলাকার এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট বিক্রি করে ১ টাকা ৪০ পয়সা পাওয়ার কথা। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা কোনো টাকাই পাচ্ছেন না। আর নিম্নমানের সিগারেট বিক্রি করলে খুচরা বিক্রেতা পাবেন ৯৫ পয়সা, যা কোনোভাবে বাস্তবসম্মত নয় বলেও মনে করে এলটিইউ, ভ্যাট। এত কম মার্জিনে ব্যবসা করে ব্যয় নির্বাহ কঠিন বলেও মনে করে এনবিআর। যার কারণে খুচরা বিক্রেতারা আইন ভেঙে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছেন। আর ডিলাররা খুচরা পর্যায়ে ট্রেড মার্জিন বা কমিশন না দেওয়ার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের বিধানটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছে এলটিইউ ভ্যাট। বিষয়টি আমলে না নিলে এনবিআরের পক্ষ থেকেও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোকে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
এ বিষয়ে এলটিইউ ভ্যাটের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া কালবেলাকে বলেন, ‘ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোকে ট্রেড মার্জিন যৌক্তিকীকরণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। যেহেতু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা আছে, তাই বিভিন্ন স্তরে মার্জিন যৌক্তিকীকরণ করা উচিত।’