রেসিং কার নিয়ে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের বানানো রেসিং কার উপস্থাপন করবে সেখানে। ২৭ থেকে ৩০ আগস্ট এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল টিম ক্র্যাক প্লাটুন। লিখেছেন জাহিদুল ইসলাম-
বিশ্বব্যাপী রেসিং প্রতিযোগিতার অন্যতম নাম ফর্মুলা ওয়ান। আর বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরাও রেসিংয়ের জন্য গাড়ি বানায়। যাকে বলে ফর্মুলা স্টুডেন্ট কার। এ কাজে বাংলাদেশিরাও পিছিয়ে নেই। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘টিম ক্র্যাক প্লাটুন’ বানিয়েছে ইলেকট্রিক গাড়ি সিপি-ই২৩। এই গাড়িটি নিয়ে এ মাসের ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পোল্যান্ডে ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাবে দলটি।
প্রস্তুতি নিতে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু করে দলটি। শুরুতে ছিল ডিজাইন। টিম ক্র্যাক প্লাটুনের এবারের লক্ষ্য ছিল একটি নিরাপদ রেসিং কার বানানো, যা কি না ফর্মুলা ওয়ান প্রতিযোগিতায় নিরাপত্তার সব প্যারামিটার ঠিক রেখে উতরে যাবে গাড়িটি।
ক্র্যাক প্লাটুনের দলনেতা শেখ তকী তাহমিদ বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি অনলাইন কুইজে অংশগ্রহণ করি। সেখানে স্কোর ভালো থাকায় মূল পর্বের প্রতিযোগিতায় ডাক পাই। কুইজের পর আমাদের গাড়িটির কিছু কাগজপত্র আয়োজকদের কাছে পাঠাই। তারা যাচাই করে আমাদের চূড়ান্ত আমন্ত্রণ জানায়। যার ফলে আমাদের ১৩ সদস্যের দল পোল্যান্ডে যাবে।’
হাজার পয়েন্ট
প্রতিযোগিতায় মোট ১০০০ পয়েন্ট। দুটি ইভেন্ট থাকবে। স্ট্যাটিক ইভেন্টে ৩২৫ পয়েন্ট। ডায়নামিক ইভেন্টে ৬৭৫ পয়েন্ট। গাড়িটি কতটা কম খরচে ভালো মানে তৈরি করা হয়েছে তার বিচার বিশ্লেষণ চলবে স্ট্যাটিক ইভেন্টে। অন্যদিকে ডায়নামিক ইভেন্টে গাড়িটিকে বিভিন্ন টাস্ক দেওয়া হবে। সেগুলো দ্বারা গাড়িটির গতি কেমন কিংবা রেসিংয়ের জন্য কতটা নিরাপদ তা দেখা হবে।
কী কী থাকছে
সিপি-ই২৩ গাড়িটিতে ১৩ ইঞ্চি ব্যাসের চারটি চাকা ব্যবহার করা হয়েছে। গতি পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। রয়েছে ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার মোটর। শক্তি জোগাবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। গাড়িটিতে বেশ কয়েকটি সার্কিট রয়েছে, যার বেশিরভাগই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা বানিয়েছেন।
রেস করার সময় গাড়ির অ্যাক্সিলারেটর ও ব্রেক একসঙ্গে চাপ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এমনটা ভেবে ক্র্যাক প্লাটুন গাড়িটিতে ব্রেক সিস্টেম প্লজিবলিটি ডিভাইস যুক্ত করেছে। ডিভাইসটি অটোমেটিক গাড়ির মোটর বন্ধ করে দেবে। ইলেকট্রিক গোলযোগ বা সমস্যা সারাতে রয়েছে ইনসুলেশন মনিটরিং ডিভাইস। তাপমাত্রা ও ব্যাটারির নিয়ন্ত্রণে আছে অ্যাকুমুলেটর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এমন আরও কিছু সার্কিট ৩০০ কেজি ওজনের গাড়িটিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
ডিজাইন
শুরুতে প্রতিযোগিতার নিয়ম-কানুন মাথায় রেখে গাড়িটির নকশার পরিকল্পনা করেন তারা। প্রথমে টায়ার, স্প্রিং ও চাকার সংযোগ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর সেটিকে থ্রিডিতে সিমুলেশন করে বাস্তবে কেমন হবে তা দেখতে পান। যখন মনে হয়েছে কোথাও পরিবর্তন দরকার, তখন তা করে আবার সিমুলেশন করে দেখেন তারা। নকশা ঠিক হলে পরে পার্টস কেনা শুরু করেন। বাংলাদেশে অনেক পার্টস না পাওয়ায় বাইরে থেকে আনাতে হয়। বডির অধিকাংশ অংশই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা বানিয়ে ফেলেন। পার্টস চলে এলে মূল অবকাঠামো বানিয়ে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ বছরের জুনের শেষ দিকে মূল কাজ শেষ হয়।
তকী বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতাই শেষ কথা নয়। আমরা বাংলাদেশের অটোমোবাইল সেক্টরে অবদান রাখতে চাই। আমরা চাই দেশের প্রতিটি গাড়িতে লেখা থাকুক মেড ইন বাংলাদেশ।’
মন্তব্য করুন