আইটি খাতে ভালো বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ এবং ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা থাকায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হয়ে পূর্ণকালীন চাকরির জন্য বেছে নিতে পারেন ‘রিমোট জব’। দেশে বসেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে সব সুবিধা পেতে পারেন। এমন রিমোট জব পেতে কী করতে হবে, কোন ওয়েবসাইটগুলোতে নজর রাখতে হবে, সুবিধা বা অসুবিধাগুলোই বা কী, সেসব জানাচ্ছেন শাওন সোলায়মান।
দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের আইটি বিভাগের চাকরি ছেড়ে গত সেপ্টেম্বরে কানাডাভিত্তিক স্মার্টওয়ান সলিউশন ইনকরপোরেশনে সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে যোগ দেন সিরাজুম মুনীর পারভেজ। তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানে রিমোট জবের ক্ষেত্রে বেশি চাহিদা থাকে সফটওয়্যার প্রোগ্রামদের। এর মধ্যে আছে ব্যাক অ্যান্ড ও ফ্রন্ট অ্যান্ড ডেভেলপার, ডেভ অপস ইত্যাদি। এ ছাড়া ডেটা অ্যানালিস্ট, গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবেও চাহিদা রয়েছে। যারা এ ধরনের রিমোট জবে আগ্রহী, তাদের জন্য কার্যকরী একটি মাধ্যম হচ্ছে ‘লিঙ্কড ইন’। এখানে বিনামূল্যে চাকরি খোঁজা যায়। তবে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে পারলে ভালো। প্রথমে নিজের একটা সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করতে হবে যেন কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সেই প্রোফাইল দেখে আগ্রহী হন। লিঙ্কড ইনে ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবাই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে নজর রাখতে হবে। এর মধ্যে ‘ফিল্টার’ করে বের করতে হবে যে, কোন প্রতিষ্ঠানগুলো ‘রিমোট কর্মী’ নিয়োগ দিচ্ছে। তারপর লিঙ্কড ইন থেকে বা সেখান থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যায়। এ ছাড়া আপওয়ার্ক রয়েছে। আপওয়ার্ক অনেকেই ফ্রিল্যান্সারদের সাইট হিসেবে চেনেন। তবে সেখানে আলাদা একটা জায়গা রয়েছে, যেখানে পূর্ণকালীন চাকরির বিজ্ঞপ্তি থাকে। আপওয়ার্ক ‘পে-রোল’ নামে প্ল্যাটফর্মে রিমোট জবগুলো আলাদা করে দেখানো হয়।
রিমোট জব খোঁজার উপায় এবং আরও কিছু প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে জানান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইডট্রেকের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার তাইফ নাজীব। তিনি বলেন, লিঙ্কড ইন এবং আপওয়ার্কের পাশাপাশি রিমোট ডট কো, উই ওয়ার্ক রিমোটলি, ফ্লেক্সজব এবং টিউরিংয়ের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে রিমোট জব খোঁজা যায়। তবে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিংয়ের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় নিজস্ব নেটওয়ার্কিং থেকেও কর্মী নিয়োগ করা হয়, যেমন—আমার চাকরিই কিন্তু সাইডট্রেকের সহপ্রতিষ্ঠাতার এক সাবেক সহকর্মীর মাধ্যমে হয়েছিল।
রিমোট জবের ক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দেশের ‘ওয়ার্ক পারমিট’ প্রয়োজন হয় না। রিমোট জবের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে পারভেজ বলেন, সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে বেতন। বাংলাদেশের স্থানীয় যে কোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় খুবই ভালো বেতন পাওয়া যায় এবং বেতন নিয়মিত থাকে। টাকার অঙ্কে সেটা কয়েক লাখ টাকাও হয়। বাসা থেকেই যেহেতু কাজ করা যায়, তাই যাতায়াত এবং ভিন্ন পরিবেশের বদলে নিজের সুবিধাজনক পরিবেশে থেকে কাজ করা একটা বড় সুবিধা। তবে এসব চাকরির বেশিরভাগই চুক্তিভিত্তিক। ফলে ইন্স্যুরেন্সসহ বেশ কিছু সুবিধা কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না যেগুলো সেসব প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কর্মীরা পেয়ে থাকেন। আবার চাকরির সময় কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের স্থানীয় টাইম জোন অনুযায়ী কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমন বাংলাদেশির জন্য এটা একটা সমস্যা হতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রিমোট জবে আছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাকরিদাতার দেশে যদি কর্মীর আয়ের ওপর কর দিতে হয় তাহলে চাকরিদাতাই সেটি পরিশোধ করেন। আর বাংলাদেশে কোনো কর্মী আয়কর দেওয়ার পর রিটার্নের কপি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়। এ জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আপওয়ার্কের ‘পে-রোল’-এর মতো তৃতীয়পক্ষের মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। পাশাপাশি কর্মীদের কাজ তদারকিতে খুব বেশি নজরদারি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে করা হয় না বলেও জানা যায়। পারভেজ বলেন, ফুলটাইম কর্মীদের ক্ষেত্রে চাকরিদাতার এমন নজরদারি সাধারণত কম। কারণ সারা দিন সবাই অনলাইনে যুক্ত থাকছে। একটু পর পর মিটিং হচ্ছে। যারা ফ্রিল্যান্সিং বা প্রজেক্টে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে নজরদারিটা বেশি কারণ সেখানে ঘণ্টা হিসেবে পারিশ্রমিক দেওয়ার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া কোনো কর্মী যখন তৃতীয় কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে নিয়োগ হন, তখন সেই মাধ্যমেই কর্মীর কাজ তদারকির ব্যবস্থা থাকে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশনের বাড়তি ঝামেলা নেই। বাংলাদেশের মতো সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতার সনদের মতো বিষয়গুলো যাচাই করা হয় না। এ খাতে একজন কর্মীর যোগ্যতা হচ্ছে তার দক্ষতা। এ দক্ষতা প্রমাণে চাকরিপ্রার্থী নিয়োগকারীকে তার করা কাজের নমুনা দেখিয়ে থাকেন। নিয়োগের বিভিন্ন ধাপ নিয়ে পারভেজ বলেন, সাধারণত তিন থেকে চারটি ধাপে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়। প্রাথমিক ধাপে অনেক সময়ই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়। তারপর নিয়োগকারী এজেন্ট বা প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান বা অন্য বিভাগের প্রধানরা সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন। যোগাযোগ এবং ইংরেজিতে যার দক্ষতা যত বেশি, সাক্ষাৎকারে তার তত বেশি সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন