শুরু হলো নতুন অর্থবছর। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ৫৩তম এ বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হয়েছে প্রস্তাবিত এ বাজেট, যা সোমবার (১ জুলাই) নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ধরা হয় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবারের বাজেটে চারটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। এ চারটি অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা; স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করা; বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের পরিবেশ উন্নত করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা বা জিরো টলারেন্সের ঘোষণা। এ ছাড়া রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। আসবাব, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের কথা বলা হয়েছে। লজিস্টিক খাতকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়নি। এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের অর্থনীতির চলমান সংকটগুলোর অন্যতম হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেশ কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। সাধারণ মানুষের ওপর থেকে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য বাজেটে আমরা আরও বেশি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আশা করেছিলাম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এসব উদ্যোগ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে এখন যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ও কর সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে জনজীবনে স্বস্তি আনার পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু নতুন বাজেটে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি অর্জনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। কারণ মূল্যস্ফীতির সমস্যা সমাধানের জন্য মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ প্রস্তাবটি পাস হয়নি। ফলে সংসদ সদস্যরা আগের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশে গাড়ি আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে নানান সমালোচনা হওয়ার পরও সেই সুবিধা রেখেই বাজেট পাস করা হয়েছে। আবার মোবাইল ফোনে বাড়তি কর বসানোর প্রস্তাব নিয়ে তীব্র সমালোচনার পরও চূড়ান্ত বাজেটে সেটি কমানো হয়নি।
গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের যে কোনো স্থানে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে আয়কর বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থ বিল পাসের সময় এ প্রস্তাবে সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে এখন থেকে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে গেলে আয়কর বিবরণী জমার স্লিপ দিতে হবে।
এ বছর এমন এক সময় সরকার বাজেট পাস করল যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, ব্যাংক খাতের অস্থিরতাসহ বাংলাদেশের অর্থনীতি নানান সংকটের মুখে রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, এ সংকট সমাধানে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।