আর কে চৌধুরী
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:৫০ এএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দিন

প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দিন

দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। এমন ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে এ কলুষতা পৌঁছেনি। রেলওয়ের কিছু পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসির দুজন উপপরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছয়জনই পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী, একজন সাবেক গাড়িচালক। তিনি নাকি শতকোটি টাকারও মালিক। ঢাকায় তার বহুতল ভবন, কুয়াকাটায় থ্রি-স্টার হোটেল। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোচ্ছে অনেক ‘সাধু’ পুরুষের উঠোনেও।

বিসিএস-প্রিলি ও লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বিভিন্ন সময়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ অপকর্ম করে আসছিল দুষ্টচক্রের সদস্যরা। পিএসসি বলেছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের অন্যায় সুযোগ নিয়ে যদি একজনও চাকরি পেয়ে থাকে, এ কারণে যে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন—তার ক্ষতিপূরণ হবে কীভাবে? দেশে অসংখ্য উচ্চশিক্ষিত মেধাবী তরুণ বেকার, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে হতাশ। বাধ্য হয়ে তারা সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়স বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। অন্যদিকে পিএসসির সিন্দুকে ছিদ্র! গোটা সমাজই দুষ্টচক্রের দৌরাত্ম্যে চলে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। অথচ রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে তারা। প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ঢোকার বিসিএস পরীক্ষায় উচ্চ ফলাফল নিয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ লাখ লাখ মেধাবী তরুণ-তরুণী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে শতকরা মাত্র এক বা দুজন চাকরি পান। সেই পরীক্ষা পরিচালনার প্রতিষ্ঠানে সামান্য স্খলনও ক্ষমার অযোগ্য। প্রকৃত মেধাবীকে বঞ্চিত করে অসৎ প্রার্থীকে সুযোগ দিলে সে দুর্জন কর্মক্ষেত্রেও নানা অপরাধ-দুর্নীতি করতে থাকবে; যার নজির সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে বিভিন্ন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের কৃতকর্মে। পিএসসি মেধাবী তরুণদের ভরসার জায়গা। সেখানে কোনো প্রহসনের পরীক্ষা হলে, এর প্রতি আস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে, যা কাম্য নয়। ফলে এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে। মেধাবীরা বঞ্চিত হলে জাতির ক্ষতি, যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। শুধু যে সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে তা নয়। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগও আছে। কিছু সংঘবদ্ধ চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

গত কয়েক বছরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায়নি। পাবলিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা, এমনকি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাসহ প্রায় সব পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

গত রোববার দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘বিসিএস প্রিলি লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে একটি চক্র।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিসিএসসহ ৩০টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে। এতে পিএসসির কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। সরকারি কর্ম কমিশন আইনে করা মামলার তদন্তও করবে সিআইডি। অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি করেছে সরকারি কর্ম কমিশন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটাও একটা বড় দুর্নীতি। সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, দুর্নীতিবাজকে বর্জন করা না হলে কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না। উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, যে বা যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো জঘন্য ও নিন্দনীয় একটি কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা প্রকৃতপক্ষে দেশ এবং জাতির শত্রু। তাদের নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু নেই। শুধু অর্থের বিনিময়ে তারা যা খুশি তাই করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন আছে। যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, ‘পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্নসংবলিত কাগজ বা তথ্য যে কোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এ অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।’ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। অর্থাৎ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রতিরোধে দেশে আইন আছে; কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই।

প্রশ্নপত্র ফাঁস দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও কঠোর হতে হবে। এ চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। নিশ্চিত করা হোক উপযুক্ত শাস্তি।

লেখক: রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উপদেষ্টা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অস্ত্রের মুখে ট্রাকসহ ১৭ গরু নিয়ে গেল ডাকাতরা

দলের প্রতি অন্ধ হয়ে নিজেকে বন্ধক দিবেন না : সারজিস

স্বাস্থ্য পরামর্শ / জরায়ুমুখের ক্যান্সার: একটি নীরব ঘাতক

মিরপুরে বাসায় ঢুকে দম্পতিকে কুপিয়ে হত্যা

লিটনদের কাঁপানো হাসান আলীর মায়ের ব্যাগ ছিনতাই

ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ, মোটরসাইকেল আরোহী ২ যুবক নিহত

হার দিয়ে পাকিস্তান সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

ঢাবিতে ‘বাংলা সাহিত্যে ফারসির প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত 

শিশু ধর্ষণে প্রতিবেশীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নির্বাচনকে সংস্কারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে সরকার : নয়ন

১০

সেনা অভিযানে সন্ত্রাসী লিটন গ্রেপ্তার 

১১

সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না : বিমান বাহিনী প্রধান

১২

মর্গে রাখা লাশের দুই চোখ ‘খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর’

১৩

সামরিক উপস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন ‘নাকচ’ করল চীন

১৪

জবির সংগীত বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান ড. অণিমা রায়

১৫

‘অল্প গাঁজায় কড়াকড়ি নয়’—মত লন্ডন মেয়রের

১৬

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন

১৭

বার কাউন্সিলের অ্যাডহক কমিটি গঠন

১৮

ফেসবুকে লাইক বাড়াতে ‘ড. ইউনুসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চাই’ প্রচার

১৯

শেখ মুজিব ও তার পরিবারের নামে থাকা আরও ৬৮ কলেজের নাম পরিবর্তন

২০
X