দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় এরই মধ্যে ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার পাশাপাশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা তারাই জনতাকে সম্পৃক্ত করে অসম্ভবকে সম্ভব করার মাধ্যমে একটি গণঅভ্যুত্থান সফল করেছেন। বিগত সরকার পতনের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আজ অবধি কার্যত ঘরে ফেরেননি। নানাভাবে রয়েছেন জনতার পাশে। নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার, সারা দেশে লুটপাট, ডাকাতি রুখতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাতভর দিচ্ছেন পাহারা। সহিংসতা রোধে সচেতনতা সৃষ্টিসহ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাই।
রোববার কালবেলায় প্রকাশিত ‘দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখবেন শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুরোনো ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সরকারের কর্মকাণ্ডে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা যে চিন্তা ও প্রত্যাশা নিয়ে আন্দোলন করেছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার প্রতিফলন দরকার। মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত এমন ব্যবস্থা চালু করা গেলে দেশের বিভিন্ন সমস্যার বাস্তব চিত্র উঠে আসবে এবং সমাধান করা সম্ভব হবে। গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বৈঠকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজে আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, ছাত্রসমাজ দেশের একটি বড় শক্তি। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা তাদেরও কাজের সুযোগ দিতে চাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান ঘটেছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসেই নজিরবিহীন। এমন দুঃসাহসিক ও অবিশ্বাস্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বেই। এমনকি এই ছাত্রদের ওপর আস্থা রেখেই জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। সামগ্রিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন তথা সংস্কারের স্বপ্ন দেখাতে পেরেছেন তারাই। সেই স্বপ্ন থেকে সরে যাননি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী পুরোপুরি ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামালের দায়িত্বসহ এখনো দিনরাত কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ সময়ের অচলায়তন ভেঙে তাকে সচল করার এ যুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গভীর নিবেদন ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। অর্থাৎ দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার পুরোনো ব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে যেমন করে মানুষ তাদের ওপর আস্থা রেখেছে, দেশ গড়ার কাজে তেমনই তারা তাদের সমর্থন করবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে যেহেতু এ অভ্যুত্থানের সঙ্গে আগের কোনো অভ্যুত্থানের সাদৃশ্য নেই, তাই রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সরাসরি এত কম বয়সীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র অনুভূতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণের মহাযজ্ঞে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি ও তাদের মতামত অবশ্যই রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এ মুহূর্তে দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রার্থনালয়সহ মানুষের জানমাল রক্ষায় নিয়োজিত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের নানা কাজে শিক্ষার্থীদের স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ—অবশ্যই দেশের প্রতি তাদের অঙ্গীকার ও দায়িত্বশীলতারই পরিচায়ক। তরুণ নেতৃত্বের হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ গড়ে ওঠার ভিত তৈরি হোক—এটাই চাওয়া।