খায়রুল আনোয়ার
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ এএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংস্কার: আয়নার সামনে আমরা

সংস্কার: আয়নার সামনে আমরা

সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পুনরায় সংলাপের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলা যায়, আমরা কতটা প্রস্তুত হচ্ছি? আমরা বলতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে শিক্ষিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অদূর ভবিষ্যতে সংস্কারের যে রূপরেখা ঘোষণা করা হবে, তা ধারণ করতে কতখানি তৈরি আছি? ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির সামনে নতুন প্রত্যাশা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি অতীতের রাজনীতি এবং সর্বশেষ স্বৈরাচারী শাসনের কথা স্মরণে আনা দরকার।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংস্কার বিষয়ে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। ১ অক্টোবর থেকে কমিশন কাজ শুরু করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রফেসর ইউনূস ভাষণে জানিয়েছিলেন, কমিশন তিন মাসের মধ্যে তার কাজ শেষ করবে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ থেকে কাজ শুরু করা নয়; বরং এর থেকে দুদিন পর পূর্ণাঙ্গভাবে পাঁচটি কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ৭ অক্টোবর বাকি কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি। নির্বাচন কমিশন আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি।’ বিএনপি মহাসচিব এর আগেও দলীয় সভা-সমাবেশে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সংস্কারের মূল কাজ নির্বাচিত সরকার এগিয়ে নিয়ে যাবে—এটাই বিএনপির অবস্থান। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে জামায়াতে ইসলামী সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলেরও সংস্কার জরুরি এ কারণে যে, ক্ষমতার পালাবদলে এ যাবৎ কোনো দলই গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কায়েম, দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ প্রশাসন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করা তো দূরের কথা, আন্তরিকভাবে সেজন্য কাজই করেনি। নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একে অন্যকে সহ্য না করার প্রবণতা, ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা থেকে নামানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার একপর্যায়ে গণতন্ত্র চোরাবালিতে ডুবে যায়। আর গত ১৫ বছরে দেশে কায়েম হয় কর্তৃত্ববাদী শাসন। সংস্কারের যে উদ্যোগ চলছে, এ সময় রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে প্রধান দুই দল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনার মুখোমুখি হবে কি? স্বৈরাচারী সরকারের অনেক মন্ত্রী, নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে আছেন। এই দলের প্রকাশ্য কোনো তৎপরতা নেই। গণহত্যার দায় বহন করে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া পতিত প্রধানমন্ত্রীর যে ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে, তাতে গণহত্যার জন্য তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং সুযোগ পেলে জাতির ওপর প্রতিশোধ নেবেন, অর্থাৎ, ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন। দলের সংস্কার তো অনেক দূরের বিষয়, দলীয় প্রধানের ভেতর যে জিঘাংসা কাজ করছে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপে তা স্পষ্ট।

আগামীতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি কি মনে করে, দলের ভেতর কোনো ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন নেই? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় এমনটি মনে হতে পারে। জেলা, থানা, গ্রাম পর্যায়ে দলের একশ্রেণির নেতাকর্মী দখল উৎসবে মেতে উঠেছে। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, হাটবাজার দখল ও চাঁদাবাজি চলছে। দলের হাইকমান্ড বারবার সতর্ক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও তাদের থামাতে পারছে না। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, কোনো কোনো জায়গায় বিএনপির এসব নেতাকর্মী পতিত সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দখল ও চাঁদাবাজি করছে। দখল নিয়ে কোথাও কোথাও তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কর্তৃত্ব যে অনেক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়, এসব ঘটনা তার প্রমাণ। একই সঙ্গে অর্থ-সম্পদের লোভ থেকে যে অনেক নেতাকর্মী মুক্ত হতে পারছে না, সে বিষয়ে কী ধরনের সংস্কার দরকার, বিএনপি কি তা ভেবে দেখেছে? বিভিন্ন সময় দলের এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে যে বাণিজ্য হয়, তা কি বন্ধ করা যাবে? নেতাকর্মীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করার কোনো ধরনের কর্মসূচি দলটি নিচ্ছে? আরও প্রশ্ন থেকে যায়, শুধু সভা-সমাবেশের বাইরে দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে তাদের কর্মসূচি কী? আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সংসদে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য নিজেদের কতখানি প্রস্তুত করছেন, হাইকমান্ডের তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার। রক্তস্নাত ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পর আগামী দিনের সংসদ কি একটি প্রাণবন্ত সংসদ হবে নাকি নেতা-নেত্রীদের বন্দনা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি কুৎসা উদগিরণ এবং ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, চোরাকারবারের গডফাদারদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি আড্ডাখানায় পরিণত হবে? বিএনপি গতানুগতিক রাজনীতির ধারাপাতে আটকে থাকবে কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

শুধু রাজনৈতিক দলের ওপর দৃষ্টি রাখলেই চলবে না। রাষ্ট্রের যত বিভাগ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আছে, তার কয়টি নিয়মনীতি মেনে চলে এবং দুর্নীতিমুক্ত তা বিবেচনায় নিতে হবে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে টানা নেতৃত্বে থাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন উঠছে। পরিবহন, শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস সেক্টরে যেসব ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠন আছে, সেগুলোর কয়টিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন হয়? অনেক ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদক ২০-২৫ বছর ধরে পদ আঁকড়ে থাকেন। পরিবহন সেক্টরের অনেক নেতা শতকোটি টাকার মালিক। ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতি সম্পাদক নির্বাচন না করে অথবা সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে বছরের পর বছর একই পদে থাকছেন। এসব ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডে কোনো স্বচ্ছতা নেই, নেই জবাবদিহি। কোটারি তৈরি করে এর পদ ধরে রাখছেন। এসব ফেডারেশনের কর্মকর্তা কি আয়নার সামনে দাঁড়াবেন? সাংবাদিকদের বিভিন্ন ইউনিয়নের চিত্রও কমবেশি একই রকম। ঘুরেফিরে কতিপয় ব্যক্তি ইউনিয়নের নেতা হচ্ছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে নতুন সদস্য পদে যোগ্য সাংবাদিকদের কমই বাছাই করা হয়। যারা প্রেস ক্লাবে নতুন সদস্য করার এখতিয়ার রাখেন, তারা নির্বাচনে ভোট পাওয়া যাবে কি না, সেই ভিত্তিতেই নতুন সদস্য মনোনীত করেন। দলীয় রাজনীতির চক্রে পড়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মর্যাদা অনেকখানি ক্ষুণ্ন হয়েছে, এ কথা বললে খুব বেশি বলা হবে না।

বিচার বিভাগ, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্যসেবা সব বিভাগই আগে থেকে জনগণের আস্থা হারিয়েছে। অনেক জায়গায় দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি বিরাজ করছে। জমি রেজিস্ট্রেশন, রাজউকে বাড়ির নকশা অনুমোদন, বিআরটিএতে গাড়ির নতুন লাইসেন্স করার জন্য সাধারণ মানুষকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব জায়গায় অর্থের বিনিময় ছাড়া কাজ হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। সংস্কার উদ্যোগের এই মুহূর্তে এসব প্রতিষ্ঠানের সবাই কি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হবেন? শুধু সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতার হয়রানি-ভোগান্তির অবসান করা যাবে না। মাঝেমধ্যে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। আর এর সঙ্গে জড়িতরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। রাজনৈতিক আনুকূল্য ছাড়া শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় খুব কমসংখ্যক প্রার্থীই চাকরির সুযোগ পান।

লোকপ্রশাসনের অধ্যাপক মুহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ‘জনপ্রশাসনে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণ, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ গবেষণামূলক নিবন্ধে বলেন, ‘একটি প্রকৃত মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জনপ্রশাসনের সামাজিক সাফল্য, দক্ষতা ও কার্যকারিতা নির্ভর করছে। কিন্তু কতটুকু স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশ জনপ্রশাসনে, এটি একটি জরুরি প্রশ্ন। নিয়োগনীতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘ পথে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মুখ্য হয়ে ওঠে। পুরো প্রক্রিয়াতেই রয়েছে রাজনীতিকরণের স্পষ্ট ছাপ। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, সবাই চায় নিয়োগের কেকটিতে নিজেদের হিস্যা।’ অধ্যাপক মঈনুল এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করেন, ‘লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য যে পরীক্ষক নিয়োগ করা হয়, সেখানেও আছে রাজনৈতিক বিবেচনা। রাজনৈতিকদুষ্ট ‘Leading question’-এর ফাঁদে পড়ে অনেক প্রার্থীকে নাজেহাল হতে হয়। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি কর্মকমিশন আস্থার সংকটে পতিত। পিএসসিও কি আয়নার সামনে দাঁড়াবে?

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতির বিষবাষ্প ঢুকে পড়েছে। স্বৈরাচারী সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি, হল দখল, হলে ‘টর্চার রুম’ বানিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালাত। শিক্ষকদেরও একটি বড় অংশ শিক্ষাদানের চেয়ে রাজনীতিতেই বেশি উৎসাহী। অনেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না, ক্লাসে যা পড়ানোর কথা তা পড়ান না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচার না করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোয় বেশি উৎসাহী। বিগত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন উপাচার্য কীভাবে আর্থিক দুর্নীতি করেছেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে শিক্ষাঙ্গনের লোকজনের সংস্কারের আয়নার সামনে দাঁড়ানো উচিত।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যাধিবাণিজ্য অর্থাৎ রোগীদের রোগব্যাধি নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা করছে। অনেক চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগী ভালো ব্যবহারটুকু পর্যন্ত পান না। দেশের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। সিন্ডিকেট করে তারা ‘যখন ইচ্ছা যেমন খুশি’ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ডিম এসবের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের অজুহাত দাঁড় করানো হয়। যেমন কভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, রমজান, বৃষ্টি হওয়া অথবা না হওয়া, সরবরাহ কম—জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এসবই অজুহাত হিসেবে বলা হয়। অদ্ভুত এক ব্যবসায়ী শ্রেণি আছে আমাদের দেশে। তাদের সংস্কার করবে কে? এই ব্যবসায়ীদের লোভের মুখে লাগাম লাগানো কি আদৌ সম্ভব হবে?

আরেকটি বড় ইস্যু হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সরকারের সময় হামলার শিকার হন। কারও কারও সম্পত্তি দখল করা হয়। অনেকে নিজ বাসভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিন পর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে যান। সেখানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—যে ধর্মের বা বর্ণের হোন, আমাদের একটি দেশ, আমরা এক পরিবার।’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় গেলে ‘রেইনবো ন্যাশন’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে। তবে বিদ্যমান অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাজার, মন্দির, পূজামণ্ডপ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী আবার কোথাও স্বেচ্ছাসেবকদের পাহারায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারা যাতে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে পূজা উৎসব উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি কি আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় না যে, কোনো একটি সম্প্রদায়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হবে? এই পাহারার ফলে উৎসবের আমেজ কি ফিকে হয়ে যায় না। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আমরা এ কেমন সমাজ নির্মাণ করলাম যে, মাজার, মন্দির, পূজামণ্ডপ ভাঙা হয়? এর কোনো প্রতিকার হয় না।

শুধু কমিশন গঠন ও সুপারিশমালা দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার, মেরামত বা পুনর্গঠন—যা-ই বলি না কেন, করা সম্ভব হবে না। সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হতে হবে। এটা ছাড়া রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজ—কোনোটাই বদলানো যাবে না।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার বাগেরহাটে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক

বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনা ভক্তদের সুখবর দিলেন ডি মারিয়া!

নেপালে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন

স্কুল মাঠ থেকে ৭ ফুট লম্বা অজগর উদ্ধার

টিএসসি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে, গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসায় আগুন দিল বিক্ষোভকারীরা 

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বাতিল

ডাকসুতে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের মৃত্যু

রাকসুতে শিবিরের প্যানেলে সনাতন ধর্মের সুজন চন্দ্র

১০

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী হংকং

১১

মা-বোনরা ধানের শীষ ও খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন : দুলু

১২

তিন কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে

১৩

দারাজ ৯.৯ অ্যানিভারসারি মেগা সেলে বাছাইকৃত ১০টি অফার

১৪

আবিদ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি: এ্যানি

১৫

আইএইএর সঙ্গে পরমাণু প্রোটোকল প্রায় চূড়ান্ত : ইরান

১৬

দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোটের পরিবেশ ভালো : ইউটিএল

১৭

নেপালে হোটেলবন্দি জামালরা, অনিশ্চিত ফেরার ফ্লাইট

১৮

ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভের পর পদ হারালেন ৫ মন্ত্রী

১৯

বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন

২০
X