সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
লুক কফেই
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ এএম
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কীসের খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন

কীসের খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সম্প্রতি একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। তথ্যটি বলছে, গত সপ্তাহেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আক্রমণ চালানোর অনুমতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্য নেতাদের চাপে তিনি এতদিন কিয়েভকে অ্যান্টিপারসোনেল মাইন ব্যবহার করতে দেননি। কিন্তু প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এ অস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই দুটো পদক্ষেপই ইউক্রেনের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে; বিশেষ করে রাশিয়ার কুরস্ক ওব্লাস্ত অঞ্চলে তাদের সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু কিয়েভের শঙ্কা এই যে, যুদ্ধের প্রতি ধাপে হোয়াইট হাউসের সাহায্য আসতে সময় লাগছে অনেক বেশি।

রাশিয়ার কুরস্ক ওব্লাস্ত এলাকা প্রায় ১০০ দিন ধরে ইউক্রেনিয়ান সৈন্যদের দখলে আছে। গত আগস্ট মাসে তারা এ অঞ্চলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সফলতার সঙ্গে এ অঞ্চল দখলও করে। রাশিয়ার ভূমিতে ইউক্রেনিয়ান সৈন্যদের অবস্থান মস্কোকে বাধ্য করেছে তাদের যুদ্ধকৌশল পরিবর্তন করে এ অঞ্চলের দিকে মনোযোগ দিতে। পাশাপাশি অন্যান্য যুদ্ধাঞ্চলের কিছু সম্পদ এখানে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সমঝোতায় কুরস্ক অঞ্চল একটি বড় ভূমিকা রাখতে চলেছে। সঠিক সমর্থন ও পর্যাপ্ত অস্ত্র পেলে যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পক্ষ সবল পক্ষকেও পরাস্ত করতে পারে— ইউক্রেনের এ বিজয় তারই একটি উদাহরণ। দীর্ঘকাল যুদ্ধাবস্থায় থেকে যে ইউক্রেনিয়ান নাগরিক এবং যুদ্ধরত সৈনিকরা আশা হারাতে বসেছিল, এ বিজয় তাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

যেদিন ইউক্রেন প্রথম কুরস্ক এলাকায় হামলা চালায়, সেদিন থেকেই তারা রাশিয়ার অভ্যন্তরে আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাচ্ছে। কারণ ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ সেনাসদস্যরা এ বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে বড় পরিসরে পাল্টা হামলা চালানো হবে। ইউক্রেনের সৈন্যদের হাত থেকে রাশিয়ার ভূমির দখল ফিরিয়ে নিতে যখন নর্থ কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় ১০ হাজার সৈন্য পাঠানো হয়, তখন তাদের এ শঙ্কা আরও দৃঢ় হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে ইউক্রেন কুরস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সৈন্যদের অবস্থান এবং তাদের সামরিক সরবরাহের ঘাঁটির অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়; কিন্তু ইউক্রেনের কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, তা দিয়ে এ অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ চালানো সম্ভব ছিল না। যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বিধায়, যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করতে দেয়নি। তবে চলতি সপ্তাহে তাদের এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ইউক্রেনকে অ্যান্টিপারসোনেল মাইন সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিবারই ইউক্রেনের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।

২০২২ সালে যুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবশ্য যুদ্ধের একদম শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিছু জরুরি সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। সেই সাহায্যের মাধ্যমে ইউক্রেনের সৈন্যরা কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং পরবর্তীকালে পাল্টা আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে অধিকাংশ সময়জুড়েই ইউক্রেনের জরুরি অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। আর যতদিন এ অস্ত্রের সরবরাহ এসেছে, ততদিনে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের অবস্থা বেশ করুণ হয়ে গেছে। যেমন— হিমারস নামক অত্যন্ত কার্যকর আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহারের আগ্রহ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই প্রকাশ করেছে। কিন্তু যতদিনে এ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে এসে পৌঁছেছে, ততদিনে মারিউপুল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে চলে গেছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্রেন নিজের আকাশ সুরক্ষিত রাখার জন্য বারবার অমেরিকার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘পেট্রিয়ট’ ব্যবহারের অনুরোধ জানাতে থাকে। কিন্তু নভেম্বরে রাশিয়ার আগ্রাসন বৃদ্ধি পাওয়ার আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেয়নি। তার ওপর যে ক’মাস সময় লেগেছে ইউক্রেনিয়ান সৈন্যদের এটিতে প্রশিক্ষণ দিতে, সেই ক’মাস বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইউক্রেনে ক্ষুদ্র অস্ত্র, ট্যাঙ্ক, পদাতিক সৈন্য বহনকারী যুদ্ধযান, দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র—এই সব সাহায্য পাঠাতেই দেরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সিদ্ধান্তহীনতা ও গাফিলতির খেসারত দিতে হয়েছে ইউক্রেনকে। আক্রমণাত্মক যুদ্ধকৌশলের পরিবর্তে প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধপদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে তাদের। এমতাবস্থায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নতুন সিদ্ধান্তের কতখানি প্রভাবইবা পড়বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে? যথাযথ সময়ে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করা গেলে রাশিয়াকে প্রতিহত করা হয়তো সম্ভব হতো। বর্তমানে নতুন সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো কুরস্ক ওবলাস্ত অঞ্চলেই ব্যবহার করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেহেতু ক্ষমতার পালাবদল চলছে, এমন মোক্ষম সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেজায় ভুল হয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো বিশ্লেষক আবার বলছেন, জানুয়ারি মাসেই প্রেসিডেন্টের গদিতে অধিষ্ঠিত হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেনকে পাঠানো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তাকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে সাহায্য করবে।

ইউক্রেনের অনেক নাগরিক এবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। অস্ত্র সরবরাহে বাইডেন প্রশাসনের গাফিলতি তার প্রধান কারণ। তারা জানেন যে ট্রাম্প যুদ্ধের ইতি টানবেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্য তিনি কীভাবে হাসিল করবেন, তা রয়েছে নিয়ে অনেকের প্রশ্ন। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন কিয়েভকে যে পরিমাণ সাহায্য দিচ্ছে, তা দেখে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে বলে মনে হয় ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না। এ বিষয়টি ইউক্রেনবাসীদের অসন্তুষ্ট করে তুলেছে। রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনকে আক্রমণ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। এ কারণেই বস্তুত ট্রাম্পের প্রতি ইউক্রেনবাসীদের এত সমর্থন দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে হয়েছে। যদিও বৈঠকে তারা কী আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে কিছু খোলাসা করা হয়নি। কিন্তু আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির অনেক বড় একটা অংশ এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই এ বিষয়েও তাদের আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

যুদ্ধে যতগুলো পক্ষ জড়িত আছে, তাদের সবাইকে আলোচনার টেবিলে আনতে হলে। ট্রাম্পের উচিত ইউক্রেনের অবস্থানকে আরও শক্ত করে গড়ে তোলা। রাশিয়ার অভ্যন্তরে কিছু অঞ্চলে যদি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে এবং যদি তারা রাশিয়ার মালপত্র সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রের ভারসাম্যে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তবেই রাশিয়া আলোচনায় বসতে আগ্রহী হবে এবং যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান রচনা করা সম্ভব হবে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা এবং অদক্ষতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এত দীর্ঘায়িত হওয়ার একটি মুখ্য কারণ। কিন্তু তারপরও নতুন যে সিদ্ধান্ত মার্কিন সরকার নিয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের জন্য একটা ইতিবাচক ফল দাঁড় করানো অসম্ভব নয়। এই যুদ্ধ থেকে অন্তত একটা শিক্ষা পাওয়া গেছে, সঠিক সময়ে মিত্র দেশের সহযোগিতা না পেলে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় অর্জন রীতিমতো অসম্ভব। ইউক্রেনে যুদ্ধের ইতি টানতে হলে, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যুদ্ধের পর নয়, বরং যুদ্ধ চলাকালে পৌঁছে দিতে হবে। আগামী কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন আসবে, তার প্রভাব ইউক্রেনের ওপর নিশ্চিতভাবেই পড়বে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহযোগী, হাডসন ইনস্টিটিউট। নিবন্ধটি আরব নিউজের মতামত বিভাগ থেকে অনুবাদ করেছেন অ্যালেক্স শেখ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১০

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১১

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

১২

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

১৩

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

১৪

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

১৫

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

১৬

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

১৭

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

১৮

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

১৯

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

২০
X