

ময়মনসিংহ নগরবাসীর বহুকাঙ্ক্ষিত শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২৪ সালে অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা ছিল ময়মনসিংহের একমাত্র শিশু হাসপাতালটির। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজও সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে আবার দেখা দিয়েছে নতুন সংকট।
বিগত সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গেল ১৬ মাস ধরে বন্ধ হাসপাতালের নির্মাণকাজ। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। কাজ শুরু হওয়ার আগে প্রায় ৫ বছর ধরে প্রকল্পটি ঝুলে ছিল সরকারি জমি না পাওয়ায়। অবশেষে জমির ব্যবস্থাও হয়, কাজও শুরু হয়।
জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ শুরু করলেও বছর খানেক আগে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় আর কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৩০ কোটি টাকায় এ শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ করার কথা। গণপূর্ত বিভাগের আওতায় কাজটি শুরু হয়েছিল। শিশু হাসপাতালটি নির্মাণের খবরে শহরের বিভিন্ন মহলে আনন্দ ও স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু বর্তমানে এর কাজ বন্ধ থাকাতে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে শিশুদের চিকিৎসা হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শিশু রোগীর এত ভিড় থাকে, একটি বেডে ৩টি শিশুকে রাখতে হয়। ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা থাকে না। চরম দুর্ভোগ সয়ে এখানে চিকিৎসাসেবা চলে। সেদিক থেকে এ শহরে একটি শিশু হাসপাতাল নির্মাণের দাবি ছিল সর্বমহলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেলাবাসীর প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ বরাদ্দের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ নগরীতে একটি আধুনিক শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ মেলে। কাজটি করার জন্য প্রায় ৭ বছর আগে প্রশাসনিক অনুমোদনও মেলে। প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর জমির সন্ধানে মাঠে নামে গণপূর্ত বিভাগ। আধুনিক মানের এ হাসপাতালটি করতে গেলে কমপক্ষে ৩ একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও নানান দেন-দরবার ও আলোচনা চললেও জমির সন্ধান আর মেলেনি। কোথাও কোথাও জমির সন্ধান মিললেও পরে আবার মালিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। অবশেষে জেলা প্রশাসন থেকে নগরীর বাইপাস মোড় এলাকায় জমি বুঝিয়ে দেয় গণপূর্ত বিভাগকে। এরপর গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিশু হাসপাতালটি নির্মাণে গত ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঠিকাদার প্রকল্প স্থানে বালি ফেলা শুরু করে। দ্রুত গতিতে কাজও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। প্রাথমিকভাবে এটি ২য় তলা পর্যন্ত হবে। পরবর্তীতে আরও তলা বাড়বে। কিন্তু গত ২০২৪ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। টাকা বরাদ্দও বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখে।
তবে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সবুজ সংকেত পেলে যে কোনো সময় আবারও কাজ শুরু করতে প্রস্তুত আছে।
গণপূর্ত বিভাগের ভাষ্যমতে, ১০ কোটি টাকার মতো কাজ হয়েছে প্রকল্প এলাকায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি ও মান ছিল সন্তোষজনক।
এদিকে সরজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় এখন কোনো কাজ হচ্ছে না। বেজমেন্টের কাজ শেষ হয়ে ১ম তলা পর্যন্ত কাজের দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রকল্প এলাকায় আছেন।
ময়মনসিংহ নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠনের সদস্যসচিব শামসুদ্দোহা মাসুম বলেন, এতদিনেও শিশু হাসপাতালটি চালু হলো না, এটি ময়মনসিংহবাসীর জন্য হতাশার। আমরা চাই শিশু হাসপাতালের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জামশেদ আলম কালবেলাকে বলেন, হাসপাতালের শিশু বিভাগে ৬০ শয্যার বিপরীতে ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। কম জনবল নিয়ে এত রোগীর চাপ সামলানো খুবই কঠিন। এজন্য শিশু হাসপাতাল চালু করা খুবই দরকার।
এ বিষয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী অর্ণব বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ওই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৫৫ শতাংশ কাজের জন্য নতুন করে তৈরি করা প্রকল্প প্রস্তাবনা একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে নতুন করে টেন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন