

কান শুধু শুনতেই সাহায্য করে না, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের সঙ্গে সমন্বয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। তাই কানে ব্যথা, কানে পানি পড়া, গরম লাগা বা হঠাৎ কম শুনতে পাওয়ার মতো উপসর্গকে কখনোই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
ভারতের গুরগাঁওয়ের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. সিদ্ধার্থ জানান, কানের পর্দা বা টিম্পানিক ঝিল্লি হলো এক পাতলা ঝিল্লি, যা বাইরের কান ও মধ্যকানের মাঝে অবস্থিত। এই ঝিল্লিই শব্দ গ্রহণ করে শ্রবণশক্তিকে সক্রিয় রাখে এবং কানে সংক্রমণ ঢোকার পথও অনেকটা বন্ধ করে। কোনো কারণে এই ঝিল্লি ছিঁড়ে গেলে তাকে বলা হয় কানের পর্দা ফেটে যাওয়া।
যেসব কারণে কানের পর্দা ফেটে যায়
১) সংক্রমণের কারণে
ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ, কানে চাপ তৈরি হওয়া কিংবা প্রদাহ— এসব কারণে হঠাৎ করেই কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। বিশেষত ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে ঝিল্লি ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি।
২) অতিরিক্ত জোরে শব্দ
বিকট শব্দ, হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো শব্দ বা অস্বাভাবিক উচ্চ শব্দচাপ কানের পর্দা ছিঁড়ে দিতে পারে। এক সেকেন্ডের শব্দেও ঝিল্লিতে ক্ষতি হতে পারে।
৩) আঘাত বা ভুল অভ্যাস
ইয়ারবাড দিয়ে কান খোঁচানো, দেশলাই বা ক্লিপ ঢোকানো, হঠাৎ কোনো আঘাত বা দুর্ঘটনা— এসব কারণেও সহজেই কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে সাবধান হবেন
১. কানে তীব্র ব্যথা
২. কানে পানি বা পুঁজ পড়া
৩. হঠাৎ কম শুনতে পাওয়া
৪. কানে গরম গরম লাগা
৫. মাথা ঘোরা
এসব লক্ষণই কানের পর্দা ছিঁড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
ঘরোয়া যত্নে যা করতে পারেন
ডা. সিদ্ধার্থের পরামর্শ অনুযায়ী, ব্যথা কমানোর জন্য হালকা গরম পানির সেঁক দিতে পারেন। পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে আলতো করে চেপে ধরলেই যথেষ্ট। তবে ব্যথা বাড়লে, পানি পড়া শুরু হলে বা মাথা ঘোরার অনুভূতি থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বর্তমানে টিম্পানোপ্লাস্টি নামের সার্জারির মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করানো সম্ভব এবং এতে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।
যা একেবারেই করবেন না
১. কান খোঁচানো বা ইয়ারবাড ব্যবহার
২. কানে পানি ঢোকানো
৩. নিজে নিজে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার
৪. ব্যথা সহ্য করে চিকিৎসা নিতে দেরি করা
শেষকথা
কানের পর্দা ফেটে যাওয়া কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যায়, কিন্তু অবহেলা করলে ভবিষ্যতে স্থায়ী শ্রবণ সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই সতর্ক হোন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন