রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২
মোস্তফা কামাল
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৫ এএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফের ধবলধোলাইর খাদে আ.লীগের তৃণমূল

ফের ধবলধোলাইর খাদে আ.লীগের তৃণমূল

দলের প্রেস রিলিজ দৃষ্টে ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লিফলেট বিলির কাজ কেমন চলে দেখার বিষয়। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ মিছিল। আর সমাবেশ ১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার। গেল মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষিত কর্মসূচিতে তা জানানো হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতালের আহ্বান জানানো হয়। এ কর্মসূচির মূল দাবি হলো অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, শেখ হাসিনা ও অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং কথিত প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা এলে পরে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা। তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন।

দলটি ঘুরে দাঁড়াতে চায়, নাকি আবেগি কর্মী-সমর্থকদের আচ্ছারকমেরি একটা ছ্যাঁচা মার খাইয়ে আলোচনায় আসতে চায়—আওয়ামী লীগের তৃণমূলই এ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। নগদের মধ্যে লাভ হচ্ছে—গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ত্যাগ, দেশত্যাগ, কেউ কেউ ঘরবাড়ি পর্যন্ত ত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হওয়ার প্রায় ছয় মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মসূচি প্রচার করে বিনোদন বা কমেডি তৈরি করতে পেরেছে। এর আগে এমন বিনোদন জোগান দিয়েছিল গত বছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে জিরো পয়েন্টে জড়ো হওয়ার ঘোষণার ভেচকি দিয়ে। দলের কেন্দ্রীয়-মহানগরী দূরে থাক, ওয়ার্ড-ইউনিটের কোনো আতিপাতিকেও জিরো পয়েন্টের আশপাশে ঘেঁষতে দেখা যায়নি। মাঝে দিয়ে পিটুনি খেয়েছে কয়েকজন সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগকর্মী।

যতক্ষণ পর্যন্ত গণহত্যা, খুন ও দুর্নীতির বিচার না হবে, ততক্ষণ আওয়ামী লীগকে কোথাও পেলেই ধোলাই দেওয়ার একটা ঘোষণা দেওয়াই আছে দলটিকে উৎখাতে অবদান রাখা দল, নেতাকর্মীদের। দেশ থেকে পালাতে না পারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। গত কিছুদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে করে তারা কল্লা বের করার মতো বাড়ির আশপাশে ফিরতে শুরু করেছেন। এর মাঝেই হরতাল-অবরোধের আচমকা কর্মসূচি প্রচার করে তাদের আরও চাঙ্গা করা, না আরেকবার মার খাইয়ে একটা আবহ তৈরির আয়োজন—তৃণমূলই প্রশ্নবিদ্ধ। নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করছেন যে, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদের নতুন করে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কারণ, দেশের বাইরে বসে কর্মসূচির বিজ্ঞপ্তি সাপ্লাই দেওয়া নেতাদের মাঠে নামা লাগবে না, গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকারও হতে হবে না, যা কিছু যাবে কোনোমতে দেশে টিকে থাকা কর্মী-সমর্থকদের ওপর দিয়ে। গায়েবি নেতাদের বিষয়ে তারা বেশ সাবধানী। সরকারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, দল হিসেবে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা না চাওয়া এবং শেখ হাসিনাসহ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত নেতাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে রাজপথের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেওয়া হবে না। ‘বিশ্বের কোনো দেশই খুনি ও দুর্নীতিবাজদের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ দেয় না। অন্তর্বর্তী সরকারও দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে এবং হত্যাকারীদের নেতৃত্বে যে কোনো প্রতিবাদকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে’—আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকের অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টে লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের ব্যানারে অন্য কেউ অবৈধ প্রতিবাদ করতে চাইলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’—ওই পোস্টে এমন কথাও জানিয়ে রেখেছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের স্ট্যাটাসে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপিসহ বাদবাকিরা তৈরি হয়েই আছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অন্ধকারে ঢিল ছুড়তে চাইছে, তা তারা পরিষ্কার। আর আওয়ামী লীগের বুঝবানরা এ কর্মসূচির মাঝে কোনোমতে দম নিয়ে টিকে থাকাদের জীবনটাই বিপন্ন করার আয়োজন দেখছেন। লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে বিদেশে রাজার হালে থাকা অংশটি গ্যালারিতে বসে পপকর্ন চিবাতে চিবাতে খেলা দেখছে। একটি শ্রেণি সামান্য পারিশ্রমিক বা বিনা পারিশ্রমিকে অথবা সুদিন ফিরলে কিছু পাব এ আশায় আছে। এত জঘন্য লুটতরাজের জন্য আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকে তারা দুয়েকটা গালমন্দ দেয়। তবে, এখনো কোনো অনুশোচনা আসেনি। এরা বড় আবেগি।

আবার নেতাদের সব দুষ্কর্ম আড়াল করতে চায় কিন্তু রুট কজে যায় না। আওয়ামী লীগ যে মাঠ তৈরি করে দিয়েছে—সার, সেচ দিয়ে এদের বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, সেটা এরা তা স্বীকার করে না, বরং ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসবের জেরে অধঃপতনে পতনের শেষ স্টপেজে গিয়েও এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ নেই ক্ষমতাচ্যুত দলটিতে। ক্ষমা চাওয়া না হোক, ভুল স্বীকারের ধারেকাছেও নেই। দলে সংস্কারের তো শব্দই নেই। বরং যা করেছে, সব ঠিক করেছে; সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আরও করবে বলে মতিগতি। তার ওপর আচানক যত গুজবের হাটবাজার খুলে দেউলিয়াত্বের ষোলো কলা পূরণ করে চলছে। সর্বশেষ গুজবে জানানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেত্রীর কথা হয়ে গেছে। আলাপ হয়েছে অনেকক্ষণ। এবার সত্যি সত্যিই তিনি যে কোনো সময় মুভ করবেন। চলে আসবেন চট করে। মোদি ও অমিত শাহ ছাড়াও ভারতীয় কূটনীতিকরা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ফাইনাল কথা বলে ফেলেছেন। নেতাকর্মীরা যেন বুকে ট্রাম্প ও হাসিনার ছবি ঝুলিয়ে ঢাকা আসার প্রস্তুতি নেয়।

দুই-তিন দিন আগের গুজবের আপডেট ছিল—ডক্টর ইউনূস সরকার পালিয়ে গেছে। ফেসবুকে এই পোস্ট দেখে নোয়াখালীতে আনন্দ মিছিল করতে গিয়ে যুবলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কী অবাক-আচানক কাণ্ড। নিজেদের কৃতকর্মের কোনো অনুশোচনা নেই। কিন্তু আকাশকুসুম কল্পনায় ঠাসা মনমগজ। বড় মাপের লুটেরা-মাফিয়ারা বিদেশে মৌজমাস্তিতে মশগুল থেকে দেশে কোনোমতে বেঁচে থাকা আবেগি কর্মীদের এসব ট্যাবলেট গেলাচ্ছেন। তারাও কমবেশি গিলছেন। এসব কর্মী দলের ক্ষমতার ১৫-১৬ বছরে নেতাকে সালাম দিয়ে তার উত্তর পায়নি, নেতার বাসায় গিয়ে বসার সুযোগ পায়নি। আর্থিক সুবিধাও তেমন হাসিল হয়নি। বিদেশ থেকে নানা ধরনের উদ্ভট তথ্য দিয়ে এসব কর্মীকে বিভ্রান্ত করে একটা হাইপ তুলে তাদের বিপদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে একবারে নোংরা চিন্তায়। এত বড় প্রাচীন একটা দল কীভাবে হাওয়ায় মিশে গেল, সেই কারণটাও অনুধাবনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না কর্মীদের। স্বস্তিতে একটু লুকিয়ে থাকতেও দেওয়া হচ্ছে না।

এর আগে, চট করে চলে আসবেন বলে কিছু কর্মীকে মাঠে নামিয়ে মার খাওয়ানো হয়েছে। নেতারা অতি সেয়ানা। একজনও মাঠে নামেননি। শিগগিরই নামার নমুনাও নেই। নেতাদের একজনও একটু টুস করে নাজিল না হয়ে রাম-রহিম বা তাদের ছেলেদের মাঠে নামিয়ে ভয়ংকর পরিণতিতে ঠেলে দেওয়ার একটা চাতুরী চলছে। তাদের কারও কারও মাঝে সাইকোপ্যাথ, মন-মগজে স্যাবোটাজের কুচিন্তা স্পষ্ট। দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমতা চাওয়া নয়; অন্তত কটা দিন চুপ থাকতেও দেওয়া হচ্ছে না কর্মীদের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিযুক্ত ব্যানার-পোস্টার নিয়ে ধরা পড়া আবেগিরা শুধুই পরিস্থিতির শিকার। ইতিহাসের কালো দিন ১৫ আগস্টের পর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসেও একই কুচর্চা হয়েছে। অডিওতে শোনা, ‘ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করবা, সেই ছবি ভাঙচুর হবে, তার ছবি তুলে আমাকে পাঠাবা, আমি তা ট্রাম্পের কাছে পাঠাব। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।’

কুচিন্তায় এ দেউলিয়াপনায় ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ইত্যাদি লীগকে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে জমায়েত হওয়ার ভার্চুয়াল বার্তা দিয়ে অ্যাকচুয়ালে নেতাদের কেউ এলেন না। ধারেকাছেও না থাকার নিষ্ঠুর তামাশা। জনা কয়েক কর্মীকে ঠেলে দেওয়া হলো এ সময়ের বাঘ-সিংহদের মুখে। এর আগের রাতে শেখ হাসিনার ভাইরাল হওয়া কথিত অডিও ক্লিপের নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে মিছিলে ভাঙচুর ও অবমাননার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলেন। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল উসকানিমূলক পোস্টার, ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়। সম্প্রতি ভাইরাল অডিও বার্তায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে মিছিল-সমাবেশের নির্দেশদৃষ্টেই তারা এ দুঃসাহস করেছেন। ভার্চুয়াল জগতে দিনরাত সমানে নানা উল্টাপাল্টা মেসেজ ছোড়া এখন আওয়ামী লীগের বিশেষ এজেন্ডা। করুণ-লজ্জাজনক পতনের পরও সাধারণ মানুষের এ সময়ের সেন্টিমেন্ট না বুঝে উল্টো পথে নামিয়ে আবেগি-নিরীহ কর্মীদের সঙ্গে নির্মমতা। এমন তামাশার সিরিয়ালে এখন আবার আন্দোলনের হাওয়াই কর্মসূচি।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট

ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লিডসের বিরুদ্ধে আর্সেনালের গোল উৎসব

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত: জোনায়েদ সাকি

এনসিপির কর্মকাণ্ডে ফিরছেন সারোয়ার তুষার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার 

সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

৪৫ বছর ভাত না খেয়েও সুস্থ ও সবল বিপ্লব

চেতনানাশক খাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতি

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে চাকরি খোয়ালেন বেরোবি সমন্বয়ক

১০

হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষক বদলির তদবির আসে ওপর থেকে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১১

জয় স্যুটকেস ভরে টাকা নিয়ে গেছে : হাবিব-উন-নবী সোহেল

১২

২৫ বছর ধরে বাঁশির মায়ায় আটকে আছে শফিকুলের জীবন

১৩

একাত্তরেও আ.লীগ পালিয়েছে, এবারও পালিয়ে গেছে : টুকু

১৪

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু, শেষ হচ্ছে কবে

১৫

তিন দিনের মধ্যে সাদাপাথর ফেরত না দিলে ব্যবস্থা

১৬

উগান্ডার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি, জানা গেল নেপথ্য কারণ

১৭

ইসহাক দারের সঙ্গে কী আলোচনা হলো বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

১৮

মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু রোববার : রাকসু ট্রেজারার

১৯

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক অনুষ্ঠিত

২০
X