হাসিনা সরকারের আমলে দেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। এমনটা বলা হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ২৮ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। শ্বেতপত্র হস্তান্তরকালে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা চোরতন্ত্র চালু করেছিলেন। সবাই দেখেছে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে চলে গিয়েছিল। আইনসভা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই যখন গোষ্ঠীবদ্ধভাবে চুরির অংশ হয়, সেটাই চোরতন্ত্র। রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী—তিন সহযোগী সৃষ্টি করা হলো। মূলত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনই এই বিষবৃক্ষ তৈরি করেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপির যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, শেখ হাসিনা অবিরাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়িয়ে এদেশে ফ্যাদিবাদ কায়েম করেছিলেন। আয়নাঘর সৃষ্টির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। গণহত্যার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার হচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, গণহত্যার সঙ্গে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ আমলে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নানারকম তৎপরতার কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু টাকা একবার পাচার হয়ে গেলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন। খবরে প্রকাশ পাচার হাওয়া টাকায় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এমন একটি স্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের একটি বড় অংশ জব্দ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা জানান। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম ও সমসাময়িক ব্যাংকিং পরিস্থিতিবিষয়ক ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেছেন এরই মধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক সম্পদ যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বিদেশি আইনি সংস্থা ও ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত ও জব্দের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ একেবারে নতুন এবং দেশের প্রচলিত আইনের বাইরেও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কোন দেশে কী সম্পদ রয়েছে—তা আগে শনাক্ত করতে হবে। এরপর আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পদ জব্দ করা হবে।
আমার মনে করি, বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যাতে বিদেশে টাকা পাচার করতে না পারে, সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন