কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গাদের সাত দফা

রোহিঙ্গাদের সাত দফা

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে চলতি সপ্তাহে। এ উপলক্ষে শুক্রবার রোহিঙ্গাদের উদ্যোগে উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় নানা কর্মসূচি। তারা সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজ জন্মভূমি রাখাইন রাজ্যে (আরাকান রাজ্য) ফিরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। কর্মসূচিতে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইন বাতিলসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা নেতারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করার পাশাপাশি নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার পরও তারা যুগ যুগ ধরে সরকার দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়ে আসছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে তাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ, হত্যাসহ গ্রাম ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬ এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড শুরু করে। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সমাবেশে তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ তাদের দেশ নয়। তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, চুক্তির ৫ বছর অতিক্রম হলেও তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তারা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয় ও মানবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যেসব বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের সাহায্যের পরিমাণ ও সহানুভূতি ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভূরাজনীতির যে বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব, এর প্রত্যক্ষ প্রতিফলন আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেও ঘটছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং গণহত্যার বিচারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলোর রাজনৈতিক ভূমিকা যেমন জোরালো, তাদের আর্থিক সহায়তাও প্রায় একই রকম। বিপরীতে মিয়ানমারের প্রতি নমনীয় রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়া দুই শক্তিধর রাষ্ট্র চীন ও রাশিয়া বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় অর্থ জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই নগণ্য বা নামমাত্র ভূমিকা রাখছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমতে থাকার পটভূমিতে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ আহ্বান জানিয়ে আসছে। সেই পটভূমিতেই চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়েছে। ইতোমধ্যে দুবার তারা পরীক্ষামূলক বা পাইলট প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। এখন ডিসেম্বরের আগেই আবারও এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন শুরুর কথা বলা হচ্ছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করা হয়েছে।

আমরা মনে করি, দিন যতই যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সাত দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান সংকটের সমাধান সম্ভব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছে তাদের বিচার হতেই হবে : হুম্মাম কাদের

স্বাস্থ্য পরামর্শ / চোখের লাল-জ্বালা: এডেনোভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিসের প্রাদুর্ভাব

ইতালিতে ‘ও লেভেল’ পরীক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সাফল্য

সাবেক এমপি বুলবুলের পিএস সিকদার লিটন গ্রেপ্তার

টাকা না পেয়ে ফুপুকে গলাকেটে হত্যা করল ভাতিজা

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য বিশেষ কোটা বাতিল 

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

১০

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

১১

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

১২

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

১৩

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

১৪

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১৫

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১৬

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১৭

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১৮

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৯

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

২০
X