ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এর আগেও অনেক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ঘটেছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে। কিন্তু এবারের হত্যাকাণ্ড বিষয়ে পুলিশের ভাষ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বর অরক্ষিত, তাই তিনজন বহিরাগত মাদকসেবীর হাতে খুন হয়েছেন সাম্য। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দাবি করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খবরে প্রকাশ, নিহত সাম্য, বায়েজিদ ও রাফি তিন বন্ধু মিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরীণ সড়ক হয়ে মুক্তমঞ্চের সামনে দিয়ে কালীমন্দিরের গেট দিয়ে ভেতর থেকে মোটরসাইকেলে বাইরে বের হচ্ছিলেন। এ সময় মুক্তমঞ্চের উত্তর পাশে বহিরাগত একটি বাইকের সঙ্গে তাদের বাইকের ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার জেরে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় দুপক্ষ। অন্যপক্ষে যোগ দেয় আরও তিনটি বাইকসহ প্রায় ১০ জনের একটি গ্রুপ। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ঢাবির এ তিন শিক্ষার্থীর ওপর উপর্যুপরি হামলা চালায় বহিরাগতরা। পায়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের ফলে সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাম্য। তাৎক্ষণিক তাকে অন্য বন্ধুরা হাসপাতালে নিলে রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেপ্তার তিনজন মাত্র ১৫ দিন আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে ফুটপাতে হকারি শুরু করেছিলেন। তাদের একটি বাইক আছে। সারা দিন ফুটপাতে হকারি করার পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় উদ্যানে এসে মাদক সেবন করতেন। তারা তিনজনই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনার সময় দুজন আহত হয়ে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অন্যজনকে রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা হিসেবে মনে করা হয় সাত খুনকে। একই ছাত্রসংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ছিল সেই খুন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এর নেপথ্যে। নিজেকে আড়াল করতে পরদিন খুনের বিচার চেয়ে মিছিলও করেছিলেন তিনি। ওই খুনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, ঘটনায় সারা বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঘটনাটি সেভেন মার্ডার বা সাত খুন নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সৃষ্টি হয় গভীর ক্ষত। ৪ এপ্রিল, ১৯৭৪ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি হল—মাস্টারদা সূর্য সেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। আজও যেমন আছে, ৫০ বছর আগেও মোটামুটি তেমনই ছিল। গভীর রাতে সূর্য সেন হলের সাত ছাত্রকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মুহসীন হলে। টিভি রুমের সামনে সাতজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়। যারা হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন, প্রত্যেকে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। যারা খুন হয়েছিলেন, তারাও প্রত্যেকে ছিলেন ওই সংগঠনের কর্মী বা অনুসারী।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এর অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুনিরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সাম্য হত্যার ঘটনা রাজনৈতিক নয়। আমাদের প্রত্যাশা, এ ঘটনা বিচারহীনতার জটিল চক্রে আবদ্ধ হবে না। যত দ্রুত সম্ভব খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর কীভাবে ছাত্রদের জন্য নিরাপদ করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন