মিজানুর রহমান, ফেনী
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

জেলা পরিষদের সংলগ্ন এ উন্মুক্ত স্থানে ছিল জহির রায়হান মিলনায়তন। ছবি : কালবেলা
জেলা পরিষদের সংলগ্ন এ উন্মুক্ত স্থানে ছিল জহির রায়হান মিলনায়তন। ছবি : কালবেলা

ফেনীর সোনালি সন্তান জহির রায়হানের নামে নির্মিত জহির রায়হান মিলনায়তনটি সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলার ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও আজও পুনর্নির্মিত হয়নি। ফেনী শহরের মিজান রোডে অবস্থিত শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তনটি ছিল ফেনীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু। একটি আধুনিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলে ফেনী জেলা পরিষদ ২০০৮ সালে এটি ভেঙে ফেলে।

শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তনকে ঘিরে ফেনীর ডজন খানেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় ছিল। নিয়মিত নাট্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা হতো, হতো মহড়া। ভবন ভেঙে ফেলায় বেশিরভাগ সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিসগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন অফিস বা মহড়া কক্ষের অভাবে ফেনীর সাংস্কৃতিক চর্চা যেন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক ও সচেতন মহল বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে আবেদন জানালেও তাদের দাবিটি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

ষাটের দশকের শেষ দিকে ফেনী মহকুমা শহরের কেন্দ্রস্থল মিজান রোডের জেলা পরিষদ ভবনের সামনে ৪৩ শতাংশ জমিতে নির্মিত হয় ‘ফেনী টাউন হল’। ৪০০ আসনের মিলনায়তনটিতে সাংস্কৃতিক চর্চা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হত।

মিলনায়তনের একপাশে ও ছাদে ১০টি পৃথক কক্ষ ছিল। এসব কক্ষে এক সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা গণগ্রন্থাগার, রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম চলত। পরে ফেনী পৌর কর্তৃপক্ষ কক্ষগুলো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বরাদ্দ দেয় । শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তন ভবনের জমিটি মূলত জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় জেলা প্রশাসন মিলনায়তনটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফেনী পৌরসভাকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু জমির মালিকানা হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে সমস্যা থেকে যায়।

জেলা পরিষদের জায়গায় ‘টাউন হল’ হলেও দীর্ঘ তিন যুগ এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে ফেনী পৌরসভা। আশির দশকের শুরুতে ফেনী টাউন হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তন’ করা হয়। তখন থেকে মিলনায়তনের কক্ষগুলো নামমাত্র ভাড়ায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০০৮ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা করত এখানে। ২০০৮ সালের শেষের দিকে জেলা পরিষদ শহীদ জহির রায়হান মিলনায়তনটি ভেঙে সেখানে আরও বেশি আসনের একটি আধুনিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এটি পুনঃনির্মাণের জন্য এডিবি থেকে দেড় কোটি টাকার প্রাথমিক বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন নিয়ে জটিলতায় জেলা পরিষদ কাজ শুরু করতে পারেনি।

সাংস্কৃতিক সেবীরা জানান, মিলনায়তনটি ভেঙে ফেলায় বর্তমানে নাট্যচর্চার জন্য কাজ করা কষ্টকর। চর্চার অভাবে দিনদিন কর্মী কমতে শুরু করেছে। বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় ও আলোচিত নাট্যাচার্য প্রয়াত সেলিম আল দীন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নাট্যচর্চাও এ মিলনায়তন থেকে শুরু হয়েছিল।

স্বাধীনতাপরবর্তী সাংস্কৃতিক চর্চায় ফেনী ছিল এক ঐতিহ্যের জনপদ। এ মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদ জহির রায়হান, শহীদুল্লা কায়সার, নাট্যাচার্য ড. সেলিম আল দীন, চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নাট্যব্যক্তিত্ব প্রয়াত ড. ইনামুল হকসহ বহু গুণীজন তাদের কর্মে জেলাকে আলোকিত করেছেন। এ হলে ’৭০ ও ’৮০ -র দশকে নাট্যাচার্য ড. সেলিম আল দীনের রচিত অনেক মঞ্চনাটক দর্শক মনে সাড়া ফেলেছিল। ভবনটি ভেঙে ফেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন সাংস্কৃতিক কর্মীরা মহড়া দিতে পারছেন না। এতে জেলায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে।

ফেনী থিয়েটারের সাবেক সমন্বয়ক ও জাসাসের ফেনী জেলা সভাপতি কাজী ইকবাল আহম্মদ কালবেলাকে বলেন, মিলনায়তনটি ভেঙে ফেলায় বর্তমানে ফেনীতে নাট্যচর্চায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অথচ নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমও এ মিলনায়তনে নাটক করেছিলেন। আমি দ্রুত মিলনায়তনটি নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

আলাপন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র ফেনীর সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী নাজমুল হক শামীম কালবেলাকে বলেন, মহড়া কক্ষের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে আবৃত্তি চর্চা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা বাসাভাড়া নিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে নতুন শিল্পীরা বিকশিত হতে পারছেন না। যদি জহির রায়হান হলে থাকতো তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীদের করতে অনেক সুবিধা হতো।এক সময় জহির রায়হান মিলনায়তনে টিকিট কেটে দর্শক অনুষ্ঠান দেখতো। আর এখন শিল্পকলা একাডেমিতে ফ্রি টিকিটেও কেউ যেতে চান না। সাংস্কৃতিক চর্চার পথ রুদ্ধ হওয়ায় পাড়ায় পাড়ায় এখন কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। আমি দ্রুত উক্ত মিলনায়তন নির্মাণ করার জন্য জোর দাবি জানাই

জহির রায়হান হল পুনঃপ্রতিষ্ঠা মঞ্চের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান দারা কালবেলাকে বলেন, জহির রায়হান হল পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করেছি। সংশ্লিষ্টদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এটি দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রশাসন থেকে আমাদেরকে বারবার আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু আমরা কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাইনি। আমরা চাই অচিরেই যেন সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের এই মিলন মেলাটি দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা পরিষদ ও পৌর প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন কালবেলাকে জানান, জহির রায়হান হল পুনর্নির্মানের জন্য ১১২ শতক জায়গার প্রয়োজন। জায়গা সীমাবদ্ধতার কারণে নকশা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানালে তারা আমাদেরকে যতটুকু জায়গা রয়েছে ততটুকু ধরে নিয়ে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ পাঠায়। আমরা এ বিষয়ে যতটুকু জায়গায় আছে ততটুকু জায়গাকে ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলেই জহির রায়হান হলটি পুনর্নির্মাণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুই ট্রেনের হাজারো যাত্রী

আর্জেন্টিনা ভক্তদের জন্য সুখবর, মাঠে ফিরেছেন তারকা ফুটবলার

দুই হাতে বল নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ‘বাইক স্ট্যান্ট’, ভিডিও ভাইরাল

সব বলে দেওয়ার হুমকি দিলেন ঢাবি ভিসি

পাওনা ৭০০ টাকায় কাল হলো রিকশাচালকের

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২ বন্ধু আটক

 অমর্ত্য সেনকে কি বাংলাদেশে বের করে দেবে ভারত?

রাজধানীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ , যান চলাচল বন্ধ

ডিভোর্সের গুঞ্জন, মুম্বাই বিমানবন্দরে গোবিন্দ

১০

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, আবেদন করুন আজই

১১

উপদেষ্টারা অসহায়, সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারাই : ফখরুল

১২

ড. ইউনূসের কারণে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ : প্রেস সচিব

১৩

নির্বাচন নিয়ে অনৈতিক চাপ দিলে পদত্যাগ করব : সিইসি

১৪

যাতায়াত সুবিধাসহ আরএফএল গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১৫

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে ইরানের সেনাপ্রধানের হুংকার

১৬

বাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ইরানের অনুকরণে ব্যবস্থার ঘোষণা সিরিয়ার

১৭

সকালে সময় বাঁচাতে রোজ পাউরুটি খাচ্ছেন? চিকিৎসকদের স্পষ্ট সতর্কবার্তা

১৮

ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা যাবে সন্ধ্যায়

১৯

নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০
X