রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে অবস্থানকালে একজন সৌদিপ্রবাসীসহ একই পরিবারের তিন সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত দম্পতি তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসা করতে এসেছিলেন ঢাকায়। এখন তারা সবাই লাশ হয়ে মর্গে। বিষয়টি যে কোনো সংবেদনশীল মানুষকেই গভীরভাবে পীড়িত করতে বাধ্য। আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সোমবার কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। খবরে প্রকাশ, প্রবাসী মনির হোসেনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। তিনি ৩০ বছর আগে সৌদি আরবে যান। সেখানে ঠিকাদারি করতেন। দেশেও তার রয়েছে একাধিক ব্যবসা। ঈদুল আজহায় ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। কয়েক দিন বাদেই তার কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল। তিন ছেলে নিয়ে তার স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে নাঈম জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই মেজো ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে রেখে ঢাকায় আসেন তারা। চিকিৎসক দেখাতে না পেরে স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও ছেলেকে নিয়ে গত শনিবার মগবাজারে সুইট স্লিপ নামে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। বিকেলে ও রাতে মগবাজারের ভর্তা ভাত নামে একটি হোটেল থেকে সবার জন্য খাবার এনে খান। এরপর থেকে বমি বমিভাব শুরু হয় তাদের। একাধিকবার বমিও করেন। পরে বেশি অসুস্থবোধ করায় একজন ফার্মেসির লোক এনে দেখানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে রোববার তাদের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, স্বপ্না ও তার ছেলেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। মনিরকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকদের বরাতে মনিরের চাচা মো. রফিক জানান, খাবারের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয় বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। আবাসিক হোটেলের সহকারী ম্যানেজার গণমাধ্যমকে জানান, মনির হোসেন তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে হোটেলে এসেছিলেন একজন কেয়ারটেকারসহ। কেয়ারটেকার তাদের দেখাশোনা করতেন। তিনি হোটেল থেকে খাবার এনে দিতেন। তারা কখন অসুস্থ হন, তা হোটেলের কেউ টের পাননি। কেয়ারটেকার প্রথমে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান, এরপর ওই পুরুষকেও নিয়ে যান। তখন হোটেলের সবাই বিষয়টি জানতে পারেন। এদিকে মনিরের চাচা মো. রফিক জানান, বিকেলে ও রাতে মগবাজারের ভর্তা ভাত নামে একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়া করেন মনির। রেস্তোরাঁটির ম্যানেজার বলেন, শনিবার বিকেলে তারা আমাদের কাছ থেকে গ্রিল আর নান নেন। উনাদের এক চাচা সেগুলো নিয়ে যান। এই গ্রিল আর নান তো আরও অনেক মানুষ নিয়েছে। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, হোটেল কক্ষ থেকে ভর্তা ভাত হোটেলের একটি পার্সেল ব্যাগ ও বমির ওষুধসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে করা হবে ময়নাতদন্ত।
এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত ঘটনাটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে এ মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে আমরা মনে করি। সব মিলিয়ে এটি যে রহস্যের সৃষ্টি করেছে, তা উন্মোচন হওয়া সমীচীন। আমাদের বিশ্বাস, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে এ ঘটনার প্রকৃত চিত্র সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচন করবেন। এটি যদি কোনো হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তি আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন