ডেঙ্গু সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্ত-মৃত্যু সূচক অতিক্রম করছে সমান্তরালে। চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে যত আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তা অতীতের প্রথম ছয় মাসে কখনোই হয়নি। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়—গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা এ পর্যন্ত এক দিনে রেকর্ড মৃত্যু। এ ছাড়া পরদিন রোববার মারা যায় আরও ১৬ জন।
সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৬৩৪ জন। বিশ্বের ৭০টি দেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। সংক্রমিত এসব দেশের মধ্যে ২৫ শতাংশ মৃত্যুই বাংলাদেশে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহারের দিক থেকেও বাংলাদেশের ধারেকাছে আর কোনো দেশ নেই। কেননা ডেঙ্গুর বাহক এডিসের আচরণ বদলালেও মশা নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রচলিত কর্মসূচি বদলায়নি। সময়মতো মশা মারতে না পারার বিষয়টি এডিসের বিস্তারে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি দিন দিন গুরুতর হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে। এর পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কতিপয় নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানছেন না চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হলেও পশ্চিমবঙ্গে অনেকটাই সফল। সমন্বিত তৎপরতার কারণেই এটা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন ১৬টি প্রশাসনিক অঞ্চল এবং ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে ৭ থেকে ১২টি করে ওয়ার্ড আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি আছে। এতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চিকিৎসক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আছেন। আছেন ৬ থেকে ১৫ জন মশককর্মী। প্রত্যেক কর্মীর মশা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ আছে। এসব ওয়ার্ড কমিটির কাছে এলাকার সম্ভাব্য ডেঙ্গুর উৎসস্থলের তালিকা আছে। কলকাতায় প্রতিবছর ১০০ দিনের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে যুক্ত ব্যক্তিরা ওয়ার্ড পর্যায়ে মশককর্মী হিসেবে কাজ করেন। জানুয়ারি থেকে জুন—এ ছয় মাস তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন। জুলাইয়ে মশার প্রাদুর্ভাবের মৌসুমে নজরদারি আরও বেড়ে যায়। মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটির পাশাপাশি প্রতি ওয়ার্ডে আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করে ফেলেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা নিয়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থাপনা তৈরি করিনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও অদূরদর্শিতাই এ জন্য দায়ী। যখন সমস্যা তৈরি হয়েছে, তখন তড়িঘড়ি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ এটি দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যা। পরিকল্পনার ভিত্তিতে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হয়নি। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
আমরা মনে করি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ভয়াবহ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতি করা এখন নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনীব্যবস্থা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। এ নির্বাচনী রাজনীতির ডামাডোলে ডেঙ্গুর বিষয়টি অনেকটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তো বটেই, বিরোধী দলের নেতারাও জনজীবনের এ সংকট পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থার অবসান জরুরি। দলমত নির্বিশেষে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন