দেশে মার্কিন পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা-শঙ্কা-অনিশ্চয়তায় যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তার অবসান ঘটল বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কের যে মার্কিন খড়গ ঝুলছিল, তা নামল ২০ শতাংশে। সন্দেহ নেই, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্যের দিক থেকে তো বটেই; দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই এটা অত্যন্ত স্বস্তির খবর। এ সাফল্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
গতকাল শুক্রবার সংগতকারণেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর এ চুক্তিকে দেশের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, আমেরিকার শুল্ক কমানো আমাদের কূটনৈতিক বিজয়। এটিকে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির একটি উজ্জ্বল প্রমাণ হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, এর ফলে আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব।
এর আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুক্রবার দেওয়া এক ঘোষণায় জানানো হয়, আজ ১ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। সর্বশেষ ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
নতুন আদেশ অনুযায়ী, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো অসম, সেসব দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত (মূল্যভিত্তিক) শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক হারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করতে সম্মত হয়েছে, তাদের জন্য কিছু ছাড় থাকছে। তবে তারা চুক্তি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত পূর্ববর্তী শুল্কই কার্যকর থাকবে।
ঘোষণা অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বনিম্ন শুল্ক আরোপিত দেশ। এর মধ্যে ভারতের ওপর ২৫; ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের ওপর ২০; পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯; আফগানিস্তানের ওপর ১৫ এবং মিয়ানমারের ওপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন শুল্কে দেশটির বাজারে কতটা সুবিধা করতে পারবে বাংলাদেশ? এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয় বিশেষজ্ঞ মহল ও দেশের পোশাকশিল্পের মালিক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সবাই আপাতত স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় চ্যালেঞ্জের কথাও। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। দেশটির ওপর শুল্কের পরিমাণ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দ্রুতই তা জানা যাবে। চীনের ওপর শুল্কের পরিমাণ যদি বাংলাদেশ থেকে বেশি হয়, তা আমাদের জন্য মঙ্গলের। কম হলে দুশ্চিন্তার। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পাল্টা শুল্ক আলোচনায় আমাদের তরফ থেকে কতকগুলো প্রতিশ্রুতি অথবা চুক্তি করা হয়েছে, তার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি হলে পুনরায় বিপদে পড়ার শঙ্কা দেখছেন তারা।
আমরা মনে করি, ঘরে-বাইরে বিরাজমান নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও মার্কিন শুল্কে দেশের আপাতত এ অর্জন একটি বড় সাফল্য। এখানে ব্যর্থ হলে, অর্থাৎ নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হলে, দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি পোশাকশিল্পের যে ক্ষতি হতো, তা পূরণ কিংবা তাকে পুনর্জাগরিত করা হয়তো সম্ভব হতো না। কেননা, বিশ্ব প্রতিযোগিতার বাজার একবার হারালে তা পুনরুদ্ধার সহজ নয়। ফলে আপাতত সে শঙ্কা দূর হলো। এখন ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে যথাযথ তৎপরতা জারি রাখতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তাবাজার ধরে রাখতে সব রকমের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য করুন