রাজধানীর সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর অন্যতম প্রধান ভয়ংকর অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত—এ কথা সর্বজনবিদিত। মাদক, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, মারামারি-কাটাকাটির মতো ঘটনায় এ অঞ্চলের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া যেন নৈমিত্তিক বিষয়। এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ও বাড়বাড়ন্ত বরাবরই ভীতিকর। বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ অঞ্চলে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা আরও বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। এ ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য কতটা উদ্বেগের, তা অনুমান করা যায়—গত সোমবার রাতে এই কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপের হামলার শিকার হয়েছে খোদ পুলিশেরই একটি টহল দল। এ সময় কুপিয়ে জখম করা হয়েছে আল-আমিন নামে এক কনস্টেবলকে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় সক্রিয় রয়েছে আট কিশোর গ্যাং। র্যাব-২-এর করা তালিকা অনুযায়ী গ্যাংগুলো হলো—কবজি কাটা গ্রুপ, কিলার আরমান গ্রুপ, টুণ্ডা বাবু গ্রুপ, বোমা গ্রুপ, গিটঠা গ্রুপ, কসাই গ্রুপ, পাটালি গ্রুপ ও এলেক্স। কবজি কাটা গ্রুপ সক্রিয় সব থেকে বেশি। সোমবারের ঘটনায় জানা যায়, রাত ১১টার দিকে আদাবরের সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় কবজি কাটা গ্রুপ পুলিশের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এরপর অবশ্য বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১০২ জনকে আটক এবং দেশীয় অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। সেদিন একই সময়ে এলাকায় দুটি রিকশার গ্যারেজে হামলা চালায় ওই গ্রুপের সদস্যরা। দুটি গ্যারেজ থেকে পাঁচটি রিকশা ছিনিয়ে নেয় তারা। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক গ্যারেজ মালিককে কুপিয়ে জখম করে। আক্রান্ত গ্যারেজ মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী, কিশোর গ্যাংয়ের একজন গ্রেপ্তার হলে আরেকজন দায়িত্ব নেয়। নতুন নেতা আগের নেতার চেয়েও ভয়ংকর তাণ্ডব চালায়। সব থেকে বিপদের কথা হলো, গ্রেপ্তার হওয়ার অল্প কয়েকদিন পরই তারা আবার জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে বেরিয়ে তারা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। র্যাব-২-এর গত ১১ মাসের অভিযান ও গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় ছয়টি চিহ্নিত কিশোর গ্যাং এবং জেনেভা ক্যাম্পের বড় দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে ৪৮৬টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ৬৮০ জন। সে সময় গ্রেপ্তার হওয়া অনেকেই পেয়ে গেছে জামিন।
সব মিলিয়ে দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত অপরাধী চক্রগুলোর তাণ্ডব বৃদ্ধি মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য যে বিষয়টি অত্যন্ত ভীতিকর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলমান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিকভাবেই অঞ্চলটির মানুষের ঘরে-বাইরে নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার। এজন্য অঞ্চলটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রকাশ্য পুলিশের অভিযানে পুলিশকেই শিকারে পরিণত করার এ ঘটনাকে সহজভাবে দেখার উপায় নেই। এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, অঞ্চলটির বাসিন্দাদের নিরাপত্তাহীনতার নাজুক অবস্থা সম্পর্কে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের এসব ভয়ংকর অপরাধীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনাগুলো দুঃখজনক। আমাদের প্রত্যাশা, মোহাম্মদপুর অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। জনপরিসরে ফিরবে স্বস্তি।
মন্তব্য করুন