অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অভিন্ন আশ্রয়নীতি বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানি। অভিবাসন ইস্যুতে ইইউ পর্যায়ে আলোচনার আগে গত ২৯ আগস্ট ইতালির রোমে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং আইনি পথে প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে একসঙ্গে কাজ করতে চান তারা।
এদিন ইতালির রাজধানী রোমে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসির আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট ও ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো। নিরাপদ দেশ ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আলোচনা চলছে। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এই ইস্যুতে ‘অভিন্ন কৌশল’ নির্ধারণে আলোচনা করেন তিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ইইউর নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তির প্রতি সমর্থন
জোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রণীত অভিন্ন আশ্রয়নীতিতে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন দেশ তিনটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা মনে করছেন, অনিয়মিত অভিবাসনপ্রবাহ এবং মানবপাচারকে কার্যকরভাবে মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা গ্রহণ করা জরুরি।
অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে তৃতীয় কোনো দেশে ‘রিটার্ন হাব’ বা অভিবাসী প্রত্যাবাসন কেন্দ্র নির্মাণে ইইউর পরিকল্পনার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন এই তিন মন্ত্রী। তারা বলছেন, এই পরিকল্পনাটি ‘সঠিক পথ নির্দেশক৷’
নতুন প্রবিধানটি পাস হলে ‘প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আইনি কাঠামো আরো শক্তিশালী করতে যৌথ প্রস্তাব ও উদ্যোগ নেওয়ায় সুযোগ’ তৈরি হবে বলেও মনে করছেন তারা।
এর মূল লক্ষ্য হলো, আইনি পথ খুঁজে বের করে প্রত্যাবাসনকে সফল করা এবং বিপজ্জনক ও গুরুতর অপরাধের অভিযোগে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসনে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ মেলোনি
গত মাসে ইউরোপীয় বিচার আদালত এক রায়ে জানিয়েছে, আশ্রয়নীতিতে ইতালির তৈরি করা ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ এবং সেই তালিকার ভিত্তিতে আলবেনিয়ায় অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ আইনসম্মত নয়।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইতালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে আশ্রয় প্রক্রিয়ারকরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আলবেনিয়ার শেনজিন ও জাদারে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে ইতালি৷
চুক্তি অনুসারে, আলবেনিয়ায় ইতালির নির্মাণ করা অভিবাসী কেন্দ্র দুটিতে বছরে ৩৬ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হবে এবং সেখানেই তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কথা ছিল৷
আদালতের এমন রায়ে আলবেনিয়ায় নির্মাণ করা ইতালির আটককেন্দ্রগুলো এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে ইতালির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পটি। ফলে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই রোমে অনুষ্ঠিত হলো তিন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক৷
ইউরোপীয় বিচারকরা বলেছেন, সরকার একটি ডিক্রির মাধ্যমে তৃতীয় কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে, যদি একজন বিচারক সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মেনে নেন।
এদিকে আগামী বছরের ১২ জুন ইইউর অভিন্ন আশ্রয়নীতি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে৷ কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো দেশকে নিরাপদ বলে বিবেচনা করা যাবে না, যদি একটি দেশ সব মানুষের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত বলে নিশ্চিত না হয়। এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি।
সূত্র : ইনফোমাইগ্র্যান্টস
মন্তব্য করুন