শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভরসা শেখ হাসিনা

জন্মদিন নিতান্তই একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান, যা পালিত হতো ঘরোয়ার পরিসরে। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে সবকিছুই এখন পাবলিক। সেলিব্রেটিরা জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসেন, মানুষ নিজেও জানান দেয় নিজের জন্মদিনের কথা। রাজনৈতিক নেতাদের জন্মদিনও এখন দলের নেতাকর্মীদের জন্য আনন্দের দিন, উৎসবের দিন।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। দলীয়প্রধানের জন্মদিনে ব্যাপক কর্মসূচি থাকবে দলটির। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি উদযাপন করবে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন। তখন বিদেশে ছিলেন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ হাসিনা। ওই বছর দলের সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

একজন সফল এবং দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের কান্ডারি হয়ে আজ তিনি দেশেরও বাতিঘর। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা এবং টানা তৃতীয়বারের বর্তমান মেয়াদ শেষে আসছে জানুয়ারিতে আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের সামনে।

প্রধানমন্ত্রী নিজে আশৈশব পালিত হয়েছেন মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। সেই আদর্শে কিন্তু জন্মদিন পালনের চর্চা সেভাবে ছিল না। বঙ্গবন্ধু অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলে কাটাতেন। ফলে তার পরিবারে নিজের, স্ত্রীর বা সন্তানদের জন্মদিন অনাড়ম্বরভাবেই পার হয়ে যেত। সেই বিবেচনায় বলাই যায়, আড়ম্বর, লোকদেখানো ধুমধাম প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও পছন্দ নয়। তবু দলীয় নেতাকর্মীরা সেটা নিশ্চয়ই করবেন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে লিখতে গেলে অতীতের কথা উঠে আসে। উঠে আসে তার পিতা, বাঙালির জনকের কথা। বাংলার সমাজে সৌহার্দ্য আর সহমর্মিতার পাশাপাশি সংঘাতের ইতিহাসও দীর্ঘ। আমাদের বিভাজনের রাজনীতি আছে, জাতীয়তাবাদের মধ্যে সংকীর্ণ আঞ্চলিকতা, জাতিভেদ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আছে। তবুও বহুত্ববাদের ভেতরকার অভ্যন্তরীণ সংঘাতকে সরিয়ে সংহতি ও সমন্বয়ের এক বৃহৎ চিত্র এ সমাজে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আজ তার কন্যার হাতে এখন জাতির নেতৃত্ব। কতটা এগোতে পারছেন শেখ হাসিনা? শেখ হাসিনা তার এক লেখায় বলেছেন, ‘পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি এ আদর্শ নিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছি’ এবং তিনি যথার্থই বলেছেন যে, তার চলার পথটি বরাবরই বন্ধুর। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনতে তাকে ক্ষমতায় আসতে হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে দেশকে আরও বেশি করে ঝাপটে ধরল পাকিস্তানপ্রেমীরা, যেমনটা ঘটেছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ লড়াই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের, উদার আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু লড়াই আর স্বপ্ন তো আরও থাকে, যে স্বপ্ন ছিল জাতির জনকেরওÑবাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া যেন আত্মনির্ভর এক জাতির পরিচয় দিতে পারি আমরা।

তার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীলতা এসেছে, মানুষের মনে একটা উন্নয়ন স্পৃহা তৈরি হয়েছে। তাই যে বিশ্বব্যাংক প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এ দেশ থেকে, সে নিজ থেকেই সেই দেশকে দারিদ্র্য বিমোচনের রোলমডেল স্বীকৃতি দিয়ে ফিরে আসে উন্নয়নের বড় অংশীদার হতে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে হতদরিদ্র কমেছে, দেশ নিম্নমধ্যম আয়ের স্বীকৃতি নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে চলতে শুরু করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। কিন্তু এ মুহূর্তে সবচেয়ে অনিরাপদ শেখ হাসিনা নিজে। যারা বাংলাদেশকে পেছনে দেখতে চায়, সাম্প্রদায়িক দেখতে চায়, জঙ্গি দেখতে চায় তারা সবাই একজোট তাকে হত্যা করার জন্য। কারণ শেখ হাসিনা মানে যুদ্ধাপরাধের বিচার, শেখ হাসিনা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলা দেশ, শেখ হাসিনা মানে উদার ও প্রগতির বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাথা উঁচু করে চলা বাংলাদেশ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যেমন লক্ষ্যে অবিচল তাকে তার পিতার পরিণতি ভোগ করাতে, তৎপর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দেশ ও গোষ্ঠীও। শেখ হাসিনার সামনে তাই পথ হলো অবিচলভাবে এগিয়ে চলা। তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা জানেন। তিনি এ দেশের তারুণ্যের স্বপ্ন বোঝেন।

একটা বড় প্রশ্ন আছে। শেখ হাসিনা যা চান, তা কি বুঝতে পারে তার দল? একদিকে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন, যার মাধ্যমে এক নতুন রাষ্ট্রীয় পরিচয় পাবে এ দেশের মানুষ। অন্যদিকে তার দল সেই পরিচয়কে বড় করে তুলতে কতটা বৃহত্তর পরিসরের রাজনীতি করছে? আধিপত্য তৈরির মহড়া যদি চলতে থাকে তবে ক্রমেই ক্ষুদ্র হতে থাকে বৃত্তটি। আশা করব দলের নানা স্তরে এ বোধটি আসবে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে চ্যালেঞ্জ বহুমুখী। সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক দৃঢ়তা; গণতন্ত্র, শান্তি, সম্প্রীতি ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের রূপকার তিনি, মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ তিনি, আবার দলনেত্রী তিনি। বহুবার বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ কিন্তু বাংলাদেশ তো তাকে হারাতে চায় না। এ মুহূর্তে তার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু শেখ হাসিনা ধৈর্য ও সাহসের যেমন প্রতিমূর্তি, তেমনি দেশ ও জাতির বাতিঘর। শেখ হাসিনা ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তাই বড় স্বপ্ন তার সবসময়। এখন উন্নয়নের যেসব কাজ হচ্ছে, এ দেশ এমন করে কখনো এমনভাবে দেখেনি। নিজস্ব অর্থে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের যে লড়াই তিনি শুরু করেছেন, তা আরেকবার তার পিতাকে আলোচনার সামনে নিয়ে আসে। বাঙালির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পাবে। শেখ হাসিনার পিতা আমাদের সেই বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। আর এখনকার স্বপ্ন উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই স্বপ্নের পথে আমাদের নিয়ে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতি, দুইয়ের সাফল্যই নির্ভর করছে রাষ্ট্রীয় সুশাসনের ওপর। কেন্দ্র আর প্রান্তের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা আর আর্থিক অসাম্যর শিকড় বহু যুগ ধরে বিস্তৃত। বিস্তৃত আছে মানুষে মানুষে ব্যাপক বৈষম্য। উন্নত শক্তিশালী রাষ্ট্রগঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি আমরা। এ সময়ে যদি বৈষম্য বাড়তে থাকে, তাহলে কিন্তু রাজনৈতিক শৃঙ্খলাও আঘাতপ্রাপ্ত হবে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে ভরসা আছে। এ দেশে গণতন্ত্রের শক্তির একটা নিজস্ব চাপ রয়েছে। চাপ আছে শান্তি আর স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও। তাই পেট্রোলবোমা দিয়ে মাসের পর মাস সহিংসতা করে, মানুষকে পুড়িয়ে যেমন প্রবৃদ্ধির চাকা থামানো যায়নি, তেমনি বিদেশি হত্যা করে, শিয়া-সুন্নি বিভেদের প্রচেষ্টাকেও ব্যর্থ করেছে মানুষই। দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবার প্রগতির পথে ফিরেছে। এ অন্তর্নিহিত শক্তি আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা আর সেই ভরসা তৈরি করেছেন, করে চলেছেন, শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা জন্মদিনে।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রীমঙ্গলে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কুমিল্লা মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন কিশোররা, ঝুঁকিতে যাত্রীরা 

জায়েদ খানের পাগলামি বেড়ে গেছে : হিরো আলম

নিম্নচাপ নিয়ে ৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি আবহাওয়া অধিদপ্তরের

ওপিসিডব্লিউ’র ‘দ্য হেগ অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বুয়েটের অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া

বিশ্ব ইতিহাসে পার্বত্য শান্তি চুক্তি একটি বিরল ঘটনা : প্রধানমন্ত্রী

অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে ভারতের সিরিজ জয়

ইউরোপ-আমেরিকার দিকে চেয়ে থাকলে পরিবর্তন হবে না : ভিপি নুর

নির্বাচন নিয়ে মানুষের কোনো উচ্ছ্বাস-আগ্রহ নেই : মঈন খান

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ওপর নুরের অনুসারীদের হামলার অভিযোগ

১০

এএলআরডি-কালবেলা গোলটেবিল বৈঠক / সমবায় আইনে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ রয়ে গেছে

১১

রাবির সাবেক ছাত্রসহ দুজন হিযবুত তাহরীর ‘সন্দেহে’ গ্রেপ্তার

১২

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা বর্তমান এমপির

১৩

কুকুরের কামড়ে শিশু-নারীসহ আহত ১২

১৪

একজন অনুকরণীয় ও প্রকৃতি প্রেমিক রাজনীতিবিদ

১৫

কাসাভার ১৩ পদের খাবার তৈরি করলেন বাকৃবির গবেষক

১৬

এবার মালিতে বিধ্বস্ত আর্জেন্টিনা

১৭

তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে শ্রীমঙ্গলে

১৮

আগমন

১৯

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, দুবাই থেকে / জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ ও বাংলাদেশ

২০
X