প্রতিটি দেশ, জাতি, সমাজ যত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় তারা লক্ষ্য রাখে যাতে তাদের আগামী প্রজন্ম সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকে, তাদের ওপর যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কেননা, এ কথা সর্বজনবিদিত যে, আজকের শিশুরাই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কর্ণধার। তাদের নেতৃত্বেই চলবে আগামী পৃথিবী। তাই তো শিশুদের অধিকার রক্ষা, তাদের নিরাপত্তা, সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নীতি ও আইন পাস করা হয়েছে। প্রতিটি শিশুর সবচেয়ে আপনজন হয়ে থাকে তার বাবা-মা। শিশুদের বেড়ে ওঠায় মায়ের মমতা ও বাবার স্নেহের কোনো তুলনা নেই। বাবা-মায়ের সঠিক দিকনির্দেশনা ও যত্নে একটি শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে পারে। সাম্প্রতিককালে খবরের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, মা-বাবার অসাবধানতার কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শিশুরা আহত ও নিহত হচ্ছে।
গত এক মাসে শুধু গলায় লিচুর বিচি আটকে সারা দেশে ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও এর আগে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে মোট ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ দুর্যোগ ফোরামের তথ্য মতে, লিচুর বিচি গিলে এ পর্যন্ত অন্তত ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সে সময় সংখ্যাটি কম থাকায় ঘটনাগুলো তেমন গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু এক মাসে ৯ শিশুর মৃত্যু সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। সম্প্রতি হায়েনার কামড়ে দুই বছরের ছোট্ট শিশুর কনুই পর্যন্ত হাত বিচ্ছেদ হওয়ার ঘটনা জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শিশুটি রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে যায়। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশের ভাষ্যমতে, হায়েনার খাঁচাটি ৭ ফুট উঁচু লোহার রড ও বেড়া দিয়ে ঘেরা। এর এক ফুট সামনে লোহার রডের একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া ছিল যাতে বেষ্টনী অতিক্রম না করার নির্দেশনা টানানো ছিল। জাতীয় চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুটির মা-বাবাই নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে শিশুটিকে নিয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে আসেন। বাচ্চাটি ছোট হওয়ায় খাঁচায় নেট থাকা সত্ত্বেও বাচ্চা নেটের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়।
মূলত সাম্প্রতিক সময়ের এ দুর্ঘটনাগুলোতে মা-বাবার অসাবধানতাকে প্রধানত দায়ী বলা যায়। ছোট বাচ্চারা অনেক কিছুই বুঝতে সক্ষম নয়। কোন কাজটি তাদের ক্ষতি করবে কোনটির ফলে তারা কষ্ট পাবে এসব তাদের বোধশক্তির বাইরে। ফলে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা বাচ্চাদের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া উচিত। তাদের চলাফেরার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। বিশেষ করে মা-বাবার ওপর এ দায়িত্ব একটু বেশি থাকে। তাই বাচ্চাদের লালন-পালনের সময় আমাদের অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকা উচিত।
ফাইরুজ নাহিয়ান, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন