টিআইএনধারীদের বাধ্যতামূলকভাবে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার। ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত টিনধারীদের এ করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারসহ আরও কয়েকটি সংশোধনী এনে রোববার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২৩ পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। টিআইএনধারীদের বাধ্যতামূলকভাবে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের প্রস্তাব থেকে সরে আসায় সরকারকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
বর্তমানে দেশে ৮৮ লাখের ওপরে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারী রয়েছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে অথচ সরকার থেকে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে এমন করদাতাদের ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।
সংসদে বাজেট উত্থাপনকালে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, এমনসব করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থমন্ত্রীর বাজেটে এ কর প্রস্তাব করার পর এটি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি এ করারোপকে ‘অন্যায্য’, ‘বৈষম্যমূলক’ ও ‘অনৈতিক’ বলে উল্লেখ করে। ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তাদের মতে, এতে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে।
বর্তমানে ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক। এগুলো হচ্ছে—ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে, কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিতে, বীমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে, ক্রেডিট কার্ড নিতে, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে, ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সন্তান ভর্তি করতে, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে, অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে, নির্বাচনে অংশ নিতে, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন পেলে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক। আগামী বাজেটে এর সঙ্গে আরও আটটি সেবা যুক্ত হচ্ছে। আগে শুধু টিআইএন দিয়ে এসব সেবা নেওয়া যেত। চলতি বাজেটে টিআইএনের পরিবর্তে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করে এনবিআর।
এখন পর্যন্ত ৮৮ লাখ টিআইএন নম্বর নিলেও হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করেন ৩২ লাখ। তাদের অনেকেই শূন্যকর দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেন, অর্থাৎ আয়কর দেওয়ার মতো আয় তাদের নেই। ধারণা করা হয়েছিল, আগামী অর্থবছরের টিআইএন নম্বরধারীরা বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের জনবান্ধব সিদ্ধান্তের কারণে এখন আর সেই সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্য করুন