এম এম মুসা
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:২২ এএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

২৮ অক্টোবর হেরেগেছে বিএনপি

২৮ অক্টোবর হেরেগেছে বিএনপি

কালবেলা: ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন অন্যদিকে মাঠের অন্যতম বড় বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। নির্বাচনের পরিবেশ এবং আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সর্বান্তঃকরণে চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর হবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে, আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করে। বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচন নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা থাকবে না। বিএনপি নির্বাচনে এসে যদি বিজয় অর্জন করে, তাহলে আমরা বিরোধী দলে বসতে প্রস্তুত। আমাদের এমন কোনো মনোভাব নেই যে, আমরা চিরকাল রাষ্ট্র পরিচালনা করব। মানুষ যদি আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, আমাদের পছন্দ না করে তাহলে বিএনপি বা অন্য কোনো শক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তবে নির্বাচনের বাইরে অন্য কোনো পন্থায় বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ কোনো ভুঁইফোঁড় রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া কোনো রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ কোনো উচ্ছিষ্টভোগী রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ কৃষকের লাঙলের ফলা থেকে, শরীরের ঘাম থেকে, ছাত্রের কলমের কালি থেকে জন্ম নেওয়া একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এ রাজনৈতিক সংগঠনটির শিকড় তৃণমূল পর্যন্ত প্রথিত। এ রাজনৈতিক সংগঠনটি পরিচালিত যে সরকার তাকে আন্দোলন করে ফেলে দেওয়ার মতো সক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপির যারা মাঝপর্যায়ের নেতা অর্থাৎ যারা জনসম্পৃক্ত নেতা তারা প্রত্যেকেই চান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। আমাদের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন নেতার বিভিন্ন জায়গায় কথা হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে কথা হয়, টক শোতে কথা হয়, টক শোর বিরতিতে কথা হয়। বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, বিএনপি এখনো নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত করতে পারেনি। বিএনপি হয়ে গেছে একটি লিমিটেড কোম্পানি। এ কোম্পানির একজনই চেয়ারম্যান ও এমডি। বাকি সবাই কোম্পানির কর্মচারী। এখানে কোনো এক্সিকিউটিভ নেই, কোনো বোর্ড অব ডিরেক্টরস নেই। একজনই সবকিছু। এ কোম্পানির মালিক বিগড়ে যাওয়া রাজপুত্র। মালিক যে হুকুম করে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কর্মীরা সেই হুকুম ধারণ করে না। ফলে আন্দোলনে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের অংশগ্রহণ নেই। বাংলাদেশ এখন অনেকদূর এগিয়েছে। একটা সময় ছিল বিএনপি আন্দোলন করতে পারত, ২০১৪ সালে বিএনপি যখন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তখন গ্রামাঞ্চলেও সাইকেল চলতে দেওয়া হয়নি। সেখানে আজ বিএনপির হরতালে দশ চাকার গাড়ি গড়গড়িয়ে চলছে। এই গাড়ি থামাতে গেলে রাজপথে বিএনপির কর্মীদের অংশগ্রহণ লাগবে। সমস্ত রাজপথ পুলিশ দিয়ে আচ্ছাদন করা নেই। সমস্ত রাজপথ র‌্যাব দিয়ে আচ্ছাদন করা নেই। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, রাজপথে বিএনপির কর্মীদের অংশগ্রহণ নেই।

কালবেলা: বিএনপিকে নিয়ে যদি নির্বাচন করতে চান, তবে তাদের নেতাদের কারাগারে আটকে রেখেছেন কেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আওয়ামী লীগ কোনোভাবে কাউকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পক্ষপাতী নয়। তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে। তারা পুলিশ মেরেছেন, পুলিশের গায়ে আগুন দিয়েছেন, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। অনেক সময় ঘটনার একটা দিক দেখা হয়। যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিছু বিবৃতি দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে কিছু প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। তারা ডলারের বিনিময়ে তাদের তথ্য সরবরাহ করে। এ প্রতিনিধিরা রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড। তারা সত্য তথ্যটি সংগ্রহ করছেন না। হেফাজতের আন্দোলনের সময় হাজার হাজার মানুষ গুম ও খুনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে অনুমাননির্ভর এবং মিথ্যা তথ্য দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে বেশ কিছু সংস্থা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য প্রকাশ করেছে। এটি বাংলাদেশের গায়ে লাগে। আমি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে অনুরোধ করব আপনারা সত্য তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। না হলে বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের বয়কট করবে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করা এক ধরনের তথ্যসন্ত্রাস। পৃথিবীতে বেশ কিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথ্যসন্ত্রাস করছে।

কালবেলা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপরীত দিকে বিএনপির কার্যালয় বন্ধ এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে বিষণ্নতা। এটি কোনো বার্তা বহন করে কি?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: এ পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ বিএনপির নেতাকর্মীরাও নির্বাচনে যাওয়ার জন্য অনেক আগ্রহী। বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন পর মনে করেছিল এবার তারা ক্ষমতায় যাবে। এ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত ছিল। ২৮ অক্টোবর পূর্ববর্তী সময়ে মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের যে উচ্ছ্বাস আমি দেখেছি এবং ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে তাদের যে নীরবতা দেখছি, এটা আসলেই দুর্ভাগ্যজনক। একটি পক্ষ নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর এবং অন্য একটি পক্ষ বিষণ্ন; এটি গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

বিএনপির সব কর্মী নির্বাচনযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। কিন্তু বিএনপির মালিক মনে করছেন, তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সুবিধা পাবেন। আমেরিকাসহ অনেক দেশে লবিং বলে এক ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের দেশে যেটাকে ঘুষ বলে। বিএনপি এ লবিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সিনেটর বা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তাদের বিবৃতি নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন তলাবিহীন কোনো ঝুড়ি নয়। আর বাংলাদেশের নেতা কোনো ভুঁইফোঁড় নেতা নন। বাংলাদেশের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সন্তান এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা একজন নির্মোহ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাকে কেউ ধমক দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করবে—এ শক্তি পৃথিবীর কারও নেই। তিনি একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করেন না। কে কোথায় ধমক দিল, কোথায় বিবৃতি দিল বা উদ্বেগ প্রকাশ করল, তাতে বাংলাদেশের জনগণের কিছু যায় আসে না। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছি এবং এগিয়ে যাব। বিএনপির মালিকদের জিজ্ঞেস করা উচিত, আপনারা কেন কর্মীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। আপনাদের নেতা বিদেশে আরামের জীবনযাপন করছেন। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মনোনয়নপ্রত্যাশীর টাকা যায়। সেই টাকায় তাদের নেতা এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা বিদেশে আরামের জীবনযাপন করছেন আর ওখান থেকে সবক দিচ্ছেন।

কালবেলা: বিএনপিতে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে...

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: সিদ্ধান্ত যিনি নেবেন তিনি লন্ডনে বসে আছেন। যারা কারাগারে রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তারা ফৌজদারি অপরাধে জেলে গেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা অবশ্যই ছাড়া পাবেন, জামিন পাবেন। তাদের জামিন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। হয়তো প্রক্রিয়াটি চলমান। রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার বিচার তো হবে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। এত কিছুর পর আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে না, সেটা হতে পারে না। বিএনপির যেসব নেতা কারাগারে রয়েছেন, নির্বাচনে আসার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তার ভিডিওটি যদি আপনি ভালোভাবে দেখেন তাহলে দেখবেন তার চোখেমুখে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। বিএনপি মহাসচিবের মধ্যে পুলিশের ভীতি ছিল না। কোনো সরকারি সংস্থার ভীতি তার মধ্যে ছিল না। ভীতিটা ছিল অন্য কোথাও। ভীতিটা ছিল পেছন থেকে কোনো আঘাতের ভীতি। যে স্বপ্ন নিয়ে বিএনপির কর্মীরা গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন, মহানগরে এসে নেতাদের ভীতি দেখে তাদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। বিএনপির নেতারা যেভাবে মঞ্চ থেকে পলায়ন করেছেন, তাতে কর্মীদের আশার বাতি নিভে গেছে। নেতাকে সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কিছুদিন আগে একটি ভিডিওতে দেখলাম, বিএনপির একজন নেতা যিনি ছাত্রনেতা ছিলেন, পুলিশ আসছে দেখে তিনি কর্মীদের রেখে পালিয়ে গেলেন। নেতা যখন পালিয়ে যান, তখন কর্মী দাঁড়িয়ে থাকে না।

কালবেলা: ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য আপনারা কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: জোর করে কাউকে নির্বাচন কেন্দ্রে নিয়ে আসার সুযোগ নেই। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করব। আমরা অনুরোধ করব জনগণ যাতে নিজে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আমরা জনগণকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের সংগঠন রয়েছে। আমাদের সংগঠনের নেতারা বিভিন্নভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত। ফলে গ্রামে, ওয়ার্ডে এবং ইউনিয়নে আমাদের যে নেতারা রয়েছেন, তারা যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন, তাহলে আমার মনে হয় খুব কম মানুষই রয়েছেন যারা এ অনুরোধ উপেক্ষা করবেন।

কালবেলা: নির্বাচন পেছানো বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: যারা এমনটা ধারণা করেন সেটি তাদের অলীক স্বপ্ন। বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদের ক ধারা মোতাবেক এ দেশে নির্বাচিত কোনো সরকারকে বলপূর্বক হঠানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা ২০০৯ সালের সময়কাল নয়। এই দীর্ঘ সময়ে পদ্মা যমুনা ব্রহ্মপুত্র দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭ এর ক ধারায় বিভিন্ন অংশে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সরকারকে বলপূর্বক হটাতে গিয়ে কোনো ব্যক্তি, কোনো সংস্থা বা কোনো বিদেশি যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হবেন। বাংলাদেশের প্রচলিত প্যানেল কোড অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। ফলে কোনো ব্যক্তি তিনি যতই শক্তিশালী হন না কেন, একটি রাজনৈতিক সরকারকে হটানোর উদ্যোগ নেবেন এবং পার পেয়ে যাবেন এ সুযোগ বাংলাদেশে নেই। সংবিধানের ৭ এর খ ধারাতে বলা হয়েছে, ৭ এর ক ধারা একটি মৌলিক দ্বারা এবং এই মৌলিক ধারা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং আজ হোক বা কাল, যদি কেউ বলপূর্বক সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, সমর্থন করেন অথবা অংশগ্রহণ করেন তারা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আসামি হবেন। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে যে সরকারই দায়িত্বে আসুক সেখানে একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং আরও কয়েকজন উপদেষ্টা লাগবে। সুতরাং যারাই এসব দায়িত্বে আসবেন তারা সংবিধানের বিরুদ্ধে যাবেন এবং মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি নেবেন। বিএনপির জন্য এ ঝুঁকিটা কে নেবে? আগের সেই দিন এখন আর নেই। এমনকি যদি কোনো বিদেশি ব্যক্তিও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, তাকেও বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী আসামি হতে হবে।

কালবেলা: সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকে আশঙ্কা করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আমেরিকা অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: গ্লোবাল ভিলেজে অবশ্যই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয় রয়েছে। আমেরিকা কি দক্ষিণ এশিয়ায় ওসামা বিন লাদেনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়? আমেরিকা কি দক্ষিণ এশিয়ায় আরেকটি তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়? সেটা অবশ্যই তারা চায় না। দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের স্বার্থ হলো স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা। আমেরিকার স্বার্থ হলো গণতন্ত্র, আমেরিকার স্বার্থ মানবাধিকার এবং সর্বোপরি আমেরিকার স্বার্থ ব্যবসা। বাংলাদেশ আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দা-কুমড়োর। বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার চীন ব্লকের একটি রাষ্ট্র। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক চমৎকার।

আমাদের পোশাক খাত বা অন্যান্য রপ্তানি খাতের ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা সবাই জানি চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। এরপরও আমেরিকার ট্রেজারিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক বড়। আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। সম্পর্ক খারাপ বলে আমেরিকা চীন থেকে আমদানি বন্ধ করে অন্য কোথাও যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা একটি সিস্টেম ভেঙে ফেলা হবে বলে আমি মনে করি না। এ ছাড়া আমেরিকা একটি মানবিক রাষ্ট্র। এ মানবিক রাষ্ট্র কোনোভাবেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষতির মুখে পড়ে। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের অন্যান্য কৌশলগত সম্পর্ক অনেক ভালো। এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করব।

কালবেলা: উপনির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। অনেকেই এটাকে নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থা হিসেবে দেখছেন। আপনার মত কী?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: মহানগর ও নগরগুলোতে ভোটারের পার্সেন্টেজ বাড়বে না। কারণ তারা ভালো রয়েছেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে খুব বেশি ভোট কাস্ট হয় না। যত দিন যাবে নগরগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার কমে আসবে। যার গাড়ি রয়েছে তিনি টকশোতে কথা বলবেন কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে যাবেন না। ফলে নগরে ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে খুব বেশি ইতিবাচক কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু গ্রামগঞ্জে মানুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জনগণ ভোট দিতে এগিয়ে আসবেন।

কালবেলা: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সরকারদলীয় ব্যক্তিরা কি বাড়তি সুবিধা পাবেন না?

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: প্রটোকল মেকানিজম কোথাও নেই। নির্বাচনের একটি আচরণবিধি রয়েছে যেটা সবাই মেনে চলবেন। আমি জাতীয় সংসদের হুইপ। আগামী পার্লামেন্ট শপথ নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এ দায়িত্বে থাকব। ফলে আমি হুইপ থাকব কিন্তু জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আমার প্রটোকল ব্যবহার করে আমি নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারব না। আমাকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে আর দশজন সাধারণ প্রার্থীর মতো। বরং আমাকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয় যাতে আমার কোনো ভুল হয়ে না যায়। যেহেতু আমরা সরকারি ক্ষমতায় রয়েছি সেহেতু আমাদের আরও বেশি চাপে থাকতে হয়। আমরা কোনো ভুল করে ফেললে সেটা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। বিরোধী দলের ভুলটাকে কখনো এভাবে দেখা হয় না। এটাই বাস্তবতা। এ বাস্তবতা সামনে নিয়েই আমাদের ভোট করতে হবে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমাদের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭২৭

দ্বিতীয় পাকিস্তানি হিসেবে ইতিহাস গড়লেন আমির

দীর্ঘ বিরতির পর ২৩ আগস্ট আসছে কোক স্টুডিওর ৪র্থ গান

হবু স্বামীর সঙ্গে কথা বলা কি জায়েজ?

পরীক্ষা শুরুর আগে হলেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে আটকের পরে ফেরত দিল বিএসএফ

বিস্ফোরণ মামলায় ফখরুলসহ ৬৫ জনকে অব্যাহতি

রাঙামাটিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান

আর্জেন্টিনায় ম্যাচ চলাকালে সমর্থকদের তুমুল মারামারি

আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুয়েল গ্রেপ্তার

১০

৬০০ কোটি আয় ছাড়াল রজনীকান্তের ‘কুলি’

১১

শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে সাইদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি

১২

গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৩

জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে নির্দেশনা দিলেন হাইকোর্ট

১৪

ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের ছবি যুক্তের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের

১৫

ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ আরও বাড়াল পাকিস্তান

১৬

র‌্যাঙ্কিংয়ে উধাও রোহিত-কোহলির নাম, কারণ জানাল আইসিসি

১৭

রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশ সদস্য শেখ আফজালুল

১৮

ভাঙন ভাঙন খেলায় দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

১৯

চালককে ওয়াশরুমে রেখে প্রাইভেটকার নিয়ে ছুটছিলেন তিন বন্ধু

২০
X