দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে নতুন নজির সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন তিনি। তার এ বিজয়ে সারা দেশের মানুষের মতো আমরাও আনন্দিত। কালবেলা পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
আওয়ামী লীগের এ বিজয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। সোমবার সকালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারত, রাশিয়া, চীন, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূতরা। এ সময় রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার জানান। বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদের ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। নিয়মানুযায়ী, জাতীয় সংসদের ভোটের পর গেজেটের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এরপর নির্বাচিত সব সংসদ সদস্যকে শপথ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলের সংসদ সদস্যরা সংসদ নেতা নির্বাচন করেন। এর আগের চারবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিচ্ছেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই দলটিতে। নিয়ম অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের অনুরোধ জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর মন্ত্রিসভা গঠন করবেন সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হবে।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২৫টিতেই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২৩ আসন পেয়েছে। আর ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদ জিতেছে ১টি করে। এ নির্বাচনে বড় চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে ৬১টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন তারা। বড় বিপর্যয় হয়েছে গত দুটি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টির। তাদের আসন সংখ্যা ১১টিতে নেমে এসেছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে আসা কল্যাণ পার্টি জিতেছে একটি আসনে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বিদেশে থাকা অবস্থায় দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৭ মে দিল্লি থেকে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শুধু শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। পরবর্তী সময়ে তিনি আশ্রয় পান ভারতে। প্রবাসে ছয় বছর অতিবাহিত করার পর দেশে ফেরেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। এবার পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি। এখন সরকারের মূল কাজ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা কোনোভাবেই যাতে ঘটতে না পারে তা নিশ্চিত
করা এবং সারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা।
আমাদের প্রত্যাশা, নতুন সংসদের নজরদারিতে নতুন সরকার দেশ-জাতির সার্বিক কল্যাণ ও অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে আরও তৎপর হবে।