প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যে কোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারী কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সেনাসদস্যরা দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এ লড়াই ছিল স্বাধীন জাতির পরিচয়বাহী লাল-সবুজের পতাকার জন্য, জাতীয় আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে, বুক ভরে মুক্ত দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য এবং এই প্রতীতি নিয়ে যে সূর্যালোকস্নাত এ ভূখণ্ডের মানুষ সবাই ভোগ করবে সমান অধিকার। সেদিন এ দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ একদিকে যেমন পাকিস্তানি সেনাদের কামান-বন্দুকে সৃষ্ট রক্তের বন্যায় ভীত হয়ে পড়েনি, কোনোক্রমে আত্মসমর্পণের কথা অবচেতন মনেও ঠাঁই দেয়নি, আবার অন্যদিকে ভিন্ন কোনো আগ্রাসী শক্তির কাছে মাথা নোয়ানোর কথাও ভাবেনি। একটি দেশের জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধ কখনোই মাত্র একবারের জন্য হতে পারে না। তাকে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, প্রস্তুতি নিতে হয় পরবর্তীকালের যে কোনো আগ্রাসী শক্তিকে একই শক্তিতে এবং একই সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য। যে কোনো জাতির জন্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রাম নিরন্তর চলতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সে কথাই আমাদের আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন।
এ কথা মিথ্যে নয় যে, স্বাধীনতা অর্জন যতটা কঠিন, তার থেকে আরও কঠিন এ স্বাধীনতা সংরক্ষণ। ক্রমবিকাশের ধারায় স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে হয়। সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর। এক চরম বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়াশীল অভ্যন্তরীণ শক্তি ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ মাত্র ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে, তবে পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে ২৪ বছরের বেশি সময় আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। এটা নেহায়েত কম সময় নয়। তা ছাড়া স্বল্প সময়ে দেশ স্বাধীন হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অনেক বেশি। দখলদার বাহিনী যে পোড়ামাটির নীতি অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, তাতে বাংলাদেশ ও বাঙালিকে বিধ্বস্ত হতে হয়েছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য যা করা প্রয়োজন ও ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে হানাদার বাহিনী সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। এত ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের যখন স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, আজ আমরা গর্বিত। আজ আমরা একটা স্বাধীন জাতি, আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। বিশ্বসভায় আজ আমরা সমাদৃত। কিন্তু আমাদের সবসময় কথা মনে রাখা দরকার, স্বাধীনতা কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থাপনা নয়। বিশ্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা যেমন সম্পদ, প্রযুক্তি ও অস্ত্রবলে বলীয়ান, বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রকে তাদের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত রেখে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করছে। বহুজাতি নিজেদের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে জাতি হিসেবেও তারা টিকে থাকতে পারেনি। তাই জাতি হিসেবে টিকে থাকে হলে যে কোনো মূল্যে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।