দেবতোষ দাশ
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কলিম খান-এর শেষ সাক্ষাৎকার

একাডেমির মূল কাজ স্বাধীন জ্ঞানচর্চা করে সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়া

কলিম খান
কলিম খান

বাংলা ভাষার সমসাময়িক বিপর্যয় ও সম্ভাবনার বহুবিধ দিক নিয়ে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন কলিম খান। গত ১১ জুন পার হলো ব্যতিক্রমী এই ভাষাবিদের প্রয়াণের পাঁচ বছর। অপর গবেষক রবি চক্রবর্তীর সাহচর্যে কলিম খান বাংলা ভাষার ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির পুনরুদ্ঘাটনে ব্রতী হয়েছিলেন। সেই কাজ করতে গিয়ে যতটা না অভিধান সংকলনে নিয়োজিত হয়েছেন তার চেয়ে যেন বহুগুণ এগিয়ে গিয়েছিলেন বাংলার সমাজেতিহাস, দর্শন ও চেতনাগত বিকাশের বিচিত্র প্রত্নসম্পদ আবিষ্কারে।

নির্মাণ করেছেন দুই খণ্ডে অতুলনীয় অভিধানগ্রন্থ ‘বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ’। আর ভাষা ও শব্দের পথ ধরে হাঁটতে গিয়েই তাদের যৌথকর্মের ফসল হিসেবে উঠে এসেছে বাংলার ভাষা ও ইতিহাসের অসাধারণ সম্পদসম আরও কিছু বই—‘অবিকল্পসন্ধান’, ‘পরমাভাষার সংকেত’, ‘মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে’, ‘বাংলা ভাষা: প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘বঙ্গতীর্থে মুক্তিস্নান: বাংলাভাষা থেকে সভ্যতার ভবিতব্যে’ ইত্যাদি।

পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্ম নেওয়া এই স্বশিক্ষিত মানুষটি ঢাকায় বহুবার এসেছেন সম্পাদক মিজানুর রহমানের কাছে, তার ত্রৈমাসিকে ছাপা হয়েছে তারা বিভিন্ন নিবন্ধ। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর লেখায়, কথায় একাডেমিক টার্মিনোলজি থাকে না বললেই চলে। দেশীয় ভাষা ও দর্শন থেকেই তারা আহরণ করেন পরিভাষা। সচেতনভাবেই।

বহু ‘পণ্ডিত’-এর তাই কলিম খান আর রবি চক্রবর্তীর লেখা বুঝতে ‘অসুবিধা’ হয়। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী মনেই করেন ‘টার্মিনোলজি’র সমস্যাটা আমাদের বড় সমস্যা। আমাদের ‘ধর্ম’ কখনোই ‘রিলিজিয়ন’ নয়। এমনকি পার্থক্য আছে আমাদের ‘ব্যাকরণ’ আর ইংরেজির ‘গ্রামার’-এ। তাদের মতে, পরিভাষার এই বিভ্রাটের ফলে আমাদের আদি অভিধানকার যাস্কের শব্দার্থতত্ত্ব বোঝাই যায়নি। পাণিনির ব্যাকরণকে খাটো করে ইংরেজি গ্রামারের সমতুল করা হয়েছে।

প্রয়াণ দিবসকে ঘিরে কালান্তরের পাঠকদের জন্য কলিম খানের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারের বিশেষ অংশ পত্রস্থ হলো। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল রবি চক্রবর্তীর কোন্নগরের বাসভবনে। এটিই কলিম খানের একক বা যৌথ শেষ সাক্ষাৎকার। ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক দেবতোষ দাশ

ভাষা ও ভাষাতত্ত্বের দর্শন নিয়ে আপনাদের ভাবনা শুনেছি। বঙ্গযান-এর তরফ থেকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। কিছু কথা ওই সাক্ষাৎকার থেকেও আমরা পেয়ে যাব। আজ অন্য কথা শুনতে ইচ্ছে করছে। আপনাদের তত্ত্বভাবনার কোনো রাজনৈতিক দিক আছে?

কলিম খান : রাজনৈতিক দিক নিয়ে তো আলাদা করে ভাবিনি—খুঁজতে গিয়েছিলাম মানবসভ্যতার প্রাচীন ইতিহাস, সেই সূত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকাই। কিন্তু সাধারণ ইতিহাস বইয়ের পাশাপাশি বেদ-পুরাণ, রামায়ণ-মহাভারত পড়তে গিয়ে সমস্যায় পড়ি। কিছুই বোধগম্য হয় না। কিন্তু হাল ছাড়ি না, লেগে পড়ে থাকি।

আমাদের নিজস্ব সম্পদ এগুলো, তাহলে পড়ে বুঝতে পারব না কেন?

কলিম খান: ঠিক এ প্রশ্নটাই মাথায় এলো! রবীন্দ্রনাথের কথামতো, এগুলো যদি ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস হয় তাহলে ইউরোপীয় ইতিহাসের মতো তা সহজবোধ্য নয় কেন? আর যদি গল্পগাথা বা রূপকথাই হয় তাহলে এর ভেতরে ইতিহাসের এত স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেন?

ইতিহাস জানতে গিয়ে ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞানে ঢুকে পড়লেন?

কলিম খান: আমাদের মহাকাব্য ও পুরাণ জানতে গিয়েই জড়িয়ে পড়লাম বাংলা ভাষার শব্দার্থ-সমস্যার জালে। খুলে বসলাম মহাকাব্য। কৃত্তিবাসী রামায়ণ। শুরুতেই খেলাম হোঁচট। প্রথম ছত্রেই যা লেখা আছে তার মানে কী? ‘গোলোক বৈকুণ্ঠপুরী সবার উপর। লক্ষ্মীসহ তথায় আছেন গদাধর।’ এইরকম অজস্র পয়ারের অর্থ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলাম।

চেনাজানা বলে গল্পটুকু বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু সব পয়ার বোঝা যাচ্ছে না?

কলিম খান: কেবল রামায়ণ নয়, ঋকবেদ হাতে নিলাম। দেখলাম লেখা আছে, ‘যমের মাতার বিবাহ হওয়ায় বিবস্বানের স্ত্রীর মৃত্যু ঘটিল।’ মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। আরও আছে। ‘অদিতি হইতে দক্ষ জন্মিলেন, আবার দক্ষ হইতে অদিতি জন্মিলেন। হে দক্ষ! অদিতি যিনি জন্মিলেন, তিনি তোমার কন্যা। তাহা হইতে ভদ্র ও অবিনাশী দেবগণ উৎপন্ন হইলেন।’ বলুন এর মানে কী? পণ্ডিতদের টীকা, বহু অভিধান, শব্দকোষ ঘেঁটে ফেললাম।

পণ্ডিতরা কোনো হদিস দিতে পারলেন না?

কলিম খান : তারা নিজেরাই কিছু বোঝেননি, আমাদের হদিস কী দেবেন! ইনিয়ে-বিনিয়ে ভাষ্যের ওপর ভাষ্য বাড়িয়েছেন। কাজের কাজ কিছু করেননি।

তারপর একদিন বের হল শেষমেশ?

কলিম খান : আমাদের প্রাচীন দুই মহাকাব্য ও বেদ-পুরাণের প্রকৃত অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে হাতে পেয়ে গেলাম ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব। ভাষার সঙ্গে উঠে এলো ইতিহাস, সংস্কৃতি। আমাদের কেবল দরকার ছিল মেলানোর।

কী মেলানোর?

কলিম খান : ইয়োরোপীয় জ্ঞানভান্ডারের সঙ্গে আমাদের পুনরুদ্ধার করা জ্ঞানভান্ডারের একটা তুলনামূলক বোধ তৈরি হওয়া দরকার ছিল। সেটা মূলত রবিবাবুর সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার পরপরই শুরু হলো। রবিবাবু পণ্ডিত মানুষ। শ্রীরামপুর কলেজে ইংরাজির অধ্যাপক ছিলেন। ইয়োরোপীয় ইতিহাস, দর্শন ও ভাষার ওপর গভীর জ্ঞান। আমি তো নন-একাডেমিক লোক—ভাষাতত্ত্বের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাই আমার নেই।

রবি চক্রবর্তী : ভাগ্যিস নেই! (চুপচাপ কলিম খানের কথা শুনছিলেন। ঈষৎ হেসে হঠাৎই টিপ্পনী কাটলেন রবি চক্রবর্তী।)

কলিম খান: স্যার, এই কথা কেন বলছেন?

রবি চক্রবর্তী : যদি থাকত, রামায়ণের মানে জানতে গিয়ে ভাষার দুনিয়ার চলমান অসংগতি তার চোখে পড়ত না, যেমন আমাদের চোখে পড়েনি, ভাষাতত্ত্বের মহা মহা পণ্ডিতের চোখে পড়েনি। কলিম যখন রামায়ণ পাঠ করতে যান, তখন দু’দিক থেকেই তিনি মুক্ত ছিলেন—একদিকে তিনি ছিলেন মেদিনীপুরের গণ্ডগ্রামের ‘সন অব দ্য সয়েল’ এবং প্রতিবেশী হিন্দু, আদিবাসী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের সমবয়সীদের সঙ্গেই বড় হয়ে ওঠার কারণে তার মনে দেশীয় পুরাণাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ গড়ে উঠেছিল। আবার জন্মসূত্রে সুফি মুসলমান হওয়ার কারণে, পুরাণ নিয়ে হিন্দুদের যে বোধ ও মুগ্ধতা, তার থেকেও উনি মুক্ত ছিলেন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকেও তো মুক্ত ছিলেন!

রবি চক্রবর্তী : একাডেমিতে ভাষাতত্ত্ব না-পড়ার কারণে পাশ্চাত্য ভাষাতত্ত্ববিদ্যার প্রভাবও তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। এই দুই বিশেষত্ব নিয়ে এর আগে কেউ রামায়ণাদি গ্রন্থ পাঠ করতে যাননি। কেউ গিয়েছেন পাশ্চাত্য প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে, কেউ বা তথাকথিত মুগ্ধতা নিয়ে। উনি মুক্তমনে গিয়েছিলেন বলেই আমরা শব্দার্থবিধি পেলাম। পুরাণাদির মানে জানতে পারলাম। তাই বলে তিনি পাশ্চাত্য ভাষাতত্ত্ব পাঠ করেননি তা নয়, ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব আবিষ্কারের বেশ কিছুদিন পর উনি পাশ্চাত্য ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন গ্রন্থ একের পর এক পাঠ করেন।

কলিম খান : রবিবাবুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই এটা ঘটল। আমরা তখন যুগলবন্দি বাজাতে লাগলাম।

রবি চক্রবর্তী : কলিম খান হাঞ্চ-এ বোঝেন। অসম্ভব ইন্টিউশন! সেখানে আমি ফ্যাক্টের বাইরে নড়ি না। ফ্যাক্টের মাটিতে দাঁড়িয়েই আমি লড়াই দিয়েছি।

কলিম খান : দু’জনে মিলে এই চর্চা করতে গিয়েই আমাদের দৃষ্টি খুলে গেল। কেবল ভারতবর্ষের নয়, সার্বিক মানবসভ্যতার বিকাশ, প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত দেখতে পেয়ে গেলাম। তার ভাষা কী, তার অর্থনীতি কী, রাজনীতি কী, সবকিছুর বিকাশের ইতিহাস আমরা পেয়ে গেলাম।

আপনারা সম্প্রতি গণতন্ত্রের গরিমা-হনন নিয়ে বলছেন, লিখছেন। গণতন্ত্রকে নিকৃষ্টতন্ত্র বলছেন, কেন বলছেন?

কলিম খান : সমাজের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ভাষা, দর্শন কেমন হবে, তা মানুষের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। সামাজিক উৎপাদন কর্মযজ্ঞ কাদের নেতৃত্বে এবং কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, সেই স্বভাবের ওপর নির্ভর করে।

সে তো মার্ক্সই বলেছেন! বেজ আর সুপারস্ট্রাকচারের কথা!

কলিম খান : মার্ক্সের বহু আগেই ঋগ্বেদে এই কথা লেখা হয়ে গেছে!

আপনি বলছেন জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যার্জন অনেক সংকুচিত হয়ে গেল—

কলিম খান : কেবল সংকুচিত নয়, শেষ হয়ে গেল। একাডেমি হয়ে গেল ‘গাধা’ তৈরির কারখানা। তার কাজ ‘গাধা’ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিকে জোগান দেওয়া।

একাডেমিতে পড়াশোনা করলে মানুষ খানিকটা যন্ত্র হয়। তার মনুষ্যত্বের ক্ষয় হয়। তাকে ইশকুলের প্রথমদিনেই বলে দেওয়া হয়, তোর পাশে যে বসে আছে, তোর বন্ধু, তাকে দেখাবি না, উত্তর বলে দিবি না। ভাবুন, ছোটবেলার থেকে যার সঙ্গে সে ধুলোখেলার সাথী, সে না-পারলে তাকে আমি এই উত্তরটা দেখিয়ে দেব না? উত্তর বলে দেব না! একি রে বাবা! প্রথমেই মনুষ্যত্বে ঘা লাগে! ঘা লাগলে মনুষ্যত্ব খর্ব হয়। মনুষ্যত্বকে যদি আপনি একটা শালগ্রাম শিলা ধরেন, ক্রমাগত ঘা পেতে পেতে ওটা সরু হতে থাকে, ক্ষয় হতে থাকে। যত উচ্চশিক্ষিত, যত ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ, তার ওই শালগ্রাম শিলা তত ক্ষয়প্রাপ্ত।

উচ্চশিক্ষিতদের মনুষ্যত্ব নেই বলছেন?

কলিম খান : আছে, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে মনুষ্যত্ব নামক সেই শালগ্রাম শিলা ক্ষইতে ক্ষইতে একসময় পটোলের মতো বা কুঁদরির মতো হয়ে যায়।

এটা কেন হয়?

কলিম খান : আজকের একাডেমি-শিক্ষায় আমরা যত বেশি ডিগ্রিধারী, নিজেদের অজান্তেই আমরা তত প্রকৃতি-প্রদত্ত স্বাভাবিক সংবেদনশীলতা হারাই। সুনামিতে তাই আন্দামানে একজন জানোয়ারেরও মৃত্যু হয় না। একটি প্রাণীও মারা যায় না।

উচ্চশিক্ষা মাত্রই আমাদের প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন করে?

কলিম খান : অতি উচ্চশিক্ষিত মানে সে সম্পূর্ণভাবে একই কর্মের পুনরাবৃত্তিমূলক যন্ত্রগুণসম্পন্ন হয়। ঢেঁকি দেখেছেন? সেইরকম। একই কাজ বারবার করে চলেছে। বঙ্গমানস উচ্চশিক্ষিতের এই ‘গুণ’কে চিহ্নিত করতে পেরে ‘বুদ্ধির ঢেঁকি’ শব্দবন্ধ তৈরি করেছিল। ‘বুদ্ধির ঢেঁকি’ হয়ে গেলেই আমি-আপনি কোনো বিষয়কেই অখণ্ড ও গভীরভাবে অনুভব করতে পারব না। খণ্ডজ্ঞান নিয়ে তখন আমরা শাখা-প্রশাখায় বিরাজ করি, ‘কাণ্ড’জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এই বাসি ও পচা ‘স্থির’ বিদ্যাবুদ্ধির রূপটাই আজকের একাডেমিক বিদ্যা। ‘জ্ঞানের শুঁটকি’ বলতে পারেন। ‘স্থির’ বা ‘বদ্ধ’ বিদ্যার জেরক্সের জেরক্সের জেরক্স বা তার জেরক্স বললেও কম বলা হয়। নাসিরুদ্দিনের গল্পের মতো। বন্ধুর বন্ধুর বন্ধুকে নাসিরুদ্দিন হাঁসের ঝোলের ঝোলের ঝোল খাইয়েছিলেন! এই শিক্ষা নিয়েই আমরা ‘গাধা’ হই।

আচ্ছা, একাডেমি একটা দক্ষতা এবং শৃঙ্খলাও তো তৈরি করে, তার মূল্য নেই?

কলিম খান : অবশ্যই আছে। কিন্তু তার যে মূল কাজ, স্বাধীন জ্ঞানচর্চা করে সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়া, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেই দায়িত্ব সে ত্যাগ করতে পারে না।

সে তো এটা করতে বাধ্য হচ্ছে!

কলিম খান : ঠিক, ইন্ডাস্ট্রি এসে তাকে তার অধীনে মাসমাইনের ক্রীতদাস বানিয়ে ফেলেছে। এই ক্রীতদাস তার অনুগামীকেও দাস ছাড়া আর কিছুই বানাতে পারে না।

রবি চক্রবর্তী : ক্রীতদাস কি একজনকে তার নিজের মনের রাজা বানাতে পারে? স্রষ্টা বানাতে পারে? পারে না।

কলিম খান : পারবে কী করে? ইন্ডাস্ট্রি এসেই একটা নোটিশ জারি করেছিল যে!

কী নোটিশ?

কলিম খান : কারও চাকর না-হয়ে স্বাধীনভাবে জ্ঞানচর্চা করলে সে না খেয়ে মরবে শিল্পবিপ্লবোত্তর মানবসমাজে এই অঘোষিত বিধির অদৃশ্য নোটিশ জারি হয়েছিল। আজও জারি আছে।

আপনারা এত বাংলা-বাংলা করেন, সেই বাংলার দিকে তো এখন বিশেষ নজর।

কলিম খান : শুনুন, যে-ভাষায় প্রবাদ-প্রবচন আর বাগধারা বেশি, সেই ভাষা খুব শক্তিশালী। আমাদের বাংলাও তাই।

রবি চক্রবর্তী : বাংলার মাটি মিলনের মাটি। রবি চক্রবর্তীর সঙ্গে যে কলিম খানের দেখা হলো, মিল হলো, কমিউনিকেট করতে পারলাম পরস্পর, একত্রে কাজ করলাম, তা সম্ভব হয়েছে এটা বাংলা বলেই। বাংলা ছাড়া এটা অন্য কোথাও সম্ভবই হতো না। আবার রবীন্দ্রনাথ না-থাকলে কলকাতার বাংলা আর ঢাকার বাংলাও এক হতো না। এখানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কথা বলছি। লিসবনের পর্তুগিজ আর মাদ্রিদের স্প্যানিশের যতটা দূরত্ব ততটাই দূরত্ব হতো ঢাকা-কলকাতার বাংলার। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বলেই ঢাকা তার ভাষা অবলম্বন করে নতুন একটা সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্ম দিতে পেরেছিল। না-হলে ইসলামাইজ করার একটা প্রচণ্ড চাপ ছিল। আরবি হরফে লেখার ব্যাপারে চাপ ছিল। তার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রসংগীত যে একটা রেভল্যুশনারি এক্সপ্লোসিভ ফোর্স, তা আমরা ওপার বাংলা থেকেই জানতে পারলাম। পশ্চিমবাংলা থেকে অনেক বেশি রবীন্দ্রচর্চা হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ছাড়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিজেদের ভিত্তি হিসেবে আর কোনো রাষ্ট্র ঘোষণা করেনি।

কলিম খান : তিনটে জিনিস আমাদের যতদিন অক্ষুণ্ন থাকবে, ততদিন আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিরোধ করতে পারব।

কী সেই তিন জিনিস?

কলিম খান : বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি আর রবীন্দ্রনাথ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের, তুরস্কের দিকে ইঙ্গিত

সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএসএফ ডিজির মন্তব্যে বিজিবি ডিজির দ্বিমত

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৪৩ কোটি টাকা অবরুদ্ধ

রাজশাহীতে থানায় নিজের আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তা আহত

ভুল বালিশে শুয়েই খারাপ হচ্ছে আপনার ফুসফুস! জানুন কীভাবে

রাতে যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া

সাভারে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার ৫

সাতক্ষীরায় ‘স্যাম্পল’ ওষুধ বিক্রি, টাস্কফোর্সের অভিযান

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে নতুন ৫ সদস্য

১০

ছয় মাসে ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১১

জোভান-নিহার ‘সহযাত্রী’

১২

ভারতীয় ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

১৩

টাইফয়েড টিকা পেতে লাগবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন

১৪

নারায়ণগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের শিকার বিএনপি কর্মী ইব্রাহিম সুস্থতার পথে

১৫

শিক্ষার উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ পারভেজ মল্লিক

১৬

চাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা, নির্বাচন ১২ অক্টোবর

১৭

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ইসির ২৪ পরিকল্পনা

১৮

লালে রঙিন হাজারো নারী, স্বামীর জন্য করলেন প্রার্থনা

১৯

সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই : হাফিজ উদ্দিন

২০
X