৩০ ওভার যেতেই বলের রং বদলে গেছে। দূর থেকে সাদা বলটাও তখন খালি চোখে দেখতে কিছুটা হলদে মনে হচ্ছিল। উইকেটের আশপাশে কালো মাটির কণাও ভরে যেতে দেখা গেল—এ কেমন মিরপুর উইকেট!
শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম মানেই স্পিনবান্ধব উইকেট, এমন ধারণা অবশ্য নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই এই মাঠে বড় দলগুলোকে স্পিনবিষে নীল করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজের উইকেট রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। মুশফিকুর রহিমের ফেসবুক পোস্টটাও কিছুটা ভাবিয়ে তোলে! কোনো একটা উইকেটের ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘মাশাআল্লাহ। এই সুন্দর টার্ফ উইকেটে দারুণ একটা নেট সেশন কাটালাম।’ অবশ্য এটা কি মিরপুরের উইকেট—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মিরপুরে শনিবার প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের করা ২০৭ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়ায় বিধ্বস্ত হতে দেখা গেছে ক্যারিবীয় ব্যাটারদের। মাত্র ১৩৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের যখন তিনশ রানও নিরাপদ নয়, তখন এমন লো স্কোরিং থ্রিলার দর্শকদেরও বিনোদন থেকে বঞ্চিত করে। দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেটও যেন ব্যতিক্রম হচ্ছে না, সেটা অনুমেয়ই। সিরিজ জিতে র্যাংকিংয়ে উন্নতিতেই এমন কারসাজি মনে করেন অনেকেই। যদিও বিসিবি পরিচালক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটার সবার মুখেই ইতিবাচক বাণী!
মিরপুরের উইকেট নিয়ে কয়েক বছর আগে সমালোচনা করেছিলেন সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা ১০টি টি-টোয়েন্টিতে লো স্কোরিং ম্যাচ খেলে সিরিজ জিতে সেবার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেট যে খেলোয়াড়দের মনোবল শেষ করে দিল তা উল্লেখ করে সাকিব বলেছিলেন, ‘মিরপুরে কোনো ব্যাটার ১০-১৫ ম্যাচ খেললে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।’ সাকিবের সঙ্গে কিছুটা একমত বলা যায় মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও। গতকাল যেমন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উইকেট নিয়ে এত চিন্তা না করে ভালো ক্রিকেট খেলার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। এ ধরনের উইকেটে ব্যাটাররা কোনোদিন আত্মবিশ্বাস পান না। হয়তো ফলটা পাবেন। একজন ব্যাটার কখনো স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করতে পারবেন না। আপনি থিতু হতে পারবেন না, যে কোনো সময় একটা বাজে বলও আপনাকে আউট করে দেবে, এত বড় টার্ন, উঁচু-নিচু বাউন্স।’
যখনই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সমীকরণ আসে, তখনই মিরপুরে এমন উইকেটের দেখা মেলে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে র্যাংকিংয়ে অন্তত ৯-এ থাকা লাগবেই। সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল তাই ইতিবাচকই মনে করেন, ‘আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি, ঘরের মাঠের সুবিধা নিতেই হবে। র্যাংকিংয়ে আমরা ১০ নম্বরে আছি। যদি বিশ্বকাপ খেলতে হয় আমাদের ৯ নম্বরে যেতে হবে। ফলে এই তিনটা ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য।’ বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠুও যেমনটা বললেন, ‘হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের মধ্যে একটা ভিন্নতা থাকবেই। সারা দুনিয়াতেই এ জিনিসটা থাকে।’ উইকেট স্পিনিং করতে বোর্ডের কেউ ইনফ্লুয়েন্স করেনি বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন