২০১০ সালে প্রথম নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সপ্তদশী সাবিনা খাতুনের জোড়া গোল ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে জিতিয়েছে ৯-০ গোলে। গত বছর সাফ জয়ের পথে একই দেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা সাবিনা দলকে জেতান ৮-০ ব্যবধানে। গতকাল প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে একই ব্যবধানের জয়েও লক্ষ্যভেদ করেন এ ফরোয়ার্ড।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের তিন বড় জয়ের সঙ্গে সাবিনার নাম জড়ানোর ম্যাচে ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখা গেছে। যেখানে আদর্শ প্লে-মেকারের ভূমিকায় ছিলেন একসময়কার গোল মেশিন, গোল করার চেয়ে সতীর্থদের দিয়ে করানোই ছিল যার দায়িত্ব। ৩০ বছর বয়সী এ ফুটবলার আক্রমণভাগের নিচে নেমে খেলাটা গড়েছেন; অতীতেও তাকে একই ভূমিকায় দেখা গেছে; কিন্তু সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টির মতো পরিপূর্ণ সাবিনাকে দেখা যায়নি।
সিরিজ আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল দলটা ঝালিয়ে নেওয়া; ফুটবলারদের পরখ করা। সিরাত জাহান স্বপ্নার অবসর ও কৃষ্ণা রানী সরকারের ইনজুরিতে যে অস্বস্তি ছিল, সেটা কেটে গেছে দলগত সমন্বয়ে। প্রথম ম্যাচে রক্ষণ থেকে উঠে এসে গোলের সূচনা করেছেন আফিদা খন্দকার। গতকাল জোড়া গোল করলেন দুই ফরোয়ার্ড— তহুরা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা। ৭৩ মিনিটে একসঙ্গে মাঠে নামা বদলি দুই ফরোয়ার্ড মাতুশিমা সুমাইয়া ও শামসুন্নাহার জুনিয়রও স্কোরশিটে নাম লেখালেন। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে রসদ জোগানোর পাশাপাশি গোল করেছেন সানজিদা। দলের অধিকাংশ আক্রমণে ভূমিকা রাখা সাবিনা ৭৫ মিনিটে নিজেও এক গোল করলেন।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে যেন ‘সমবেত সংগীত’ গাইলেন সাবিনারা। দুই ম্যাচে ১১ গোল করল বাংলাদেশ। সাত ফুটবলার মিলে করলেন গোলগুলো। সবচেয়ে বেশি ৪ গোল করেছেন তহুরা খাতুন। বাংলাদেশ যে নারী ফুটবলে এখন বেশ পরিপূর্ণ, সেটা এক বাক্যে স্বীকার করে গেলেন সিঙ্গাপুরের কোচ করিম বেঞ্চারিফাও, ‘এমন নয় যে, বাংলাদেশ হুট করেই ফল পাচ্ছে। অনেকের
শ্রম-ঘামের ফল এটা। আমি তাদের প্রশংসা করছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি। অতীতে যে কোচরা মেয়েদের নিয়ে কাজ করেছেন, তাদেরও কৃতিত্ব দিতে চাই।’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুরের চেয়ে এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে গত বছর জুলাইয়ে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও পরের ম্যাচে একই দলের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছিল লাল-সবুজরা। তহুরা খাতুনের জোড়া গোল ও আফিদা খন্দকারের লক্ষ্যভেদে প্রথম ম্যাচে ৩-০ ব্যবধানে জয়ের পর পা হড়কানোর শঙ্কা ছিল। সেটা এক ঝটকায় উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা। যা বড় এক শিক্ষা দিল সিঙ্গাপুরকে। দলটির কোচ করিম বেঞ্চারিফা এ সম্পর্কে বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, দলটি এমন অনেক শিক্ষা পেয়েছে। তারা আজ আমাদের শিক্ষা দিল।’
এ ম্যাচ দিয়ে সিনিয়র দলে অভিষেক হলো তরুণ গোলরক্ষক স্বর্ণা রানীর। মাগুরা থেকে উঠে আসা এ কিশোরী ম্যাচের শেষদিকে রুপনা চাকমার বদলি হিসেবে খেলেছেন।