বেহাল দশা খুলনার ১১ নদীর। নাব্য হারিয়েছে এসব নদীর ১৫০ কিলোমিটারের বেশি নৌপথ। বদলে গেছে গতিপথও। শুকিয়ে গেছে অনেক নদী। হ্রাস পেয়েছে গভীরতা। ফলে একটু পানি বাড়লেই দেখা দেয় বন্যা। দুর্ভোগ নেমে আসে নদীর দুপাড়ের মানুষের ওপর। বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। দীর্ঘ এই নৌপথে বন্ধ হয়ে গেছে নৌযান চলাচলও। স্থানীয়দের বক্তব্য, কোনো কোনো নদী শুকনো মৌসুমে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ১১ নদনদীর বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে দ্রুত খননের তাগিদ দিয়ে দুই মন্ত্রণালয়কে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
নদীগুলো খননের বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব নদীর নাব্য ফেরাতে প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়েছেন খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও। তারা জানান, এসব নদী খননে ২০১৮ সালের সমীক্ষা ধরে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্প পাস হলেই শুরু হবে খননকাজ।
নদনদীগুলোর সার্বিক চিত্র তুলে ধরে গত ৫ মার্চ ভূমিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পানিসম্পদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ডিও পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিওর বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে খুলনা বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নদীগুলো পুনঃখননের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ডিওতে ১১টি নদী পুনঃখননের জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো লোয়ার শৈলমারী নদী। এ নদীর ৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ভদ্রা নদীর ২১ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়েছে। লোয়ার সালতা নদীর ৫ কিলোমিটার, হামকুড়া নদীর ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার, ভদ্রা জয়খালী নদীর ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, মিডিল ভদ্রা নদীর ৯ দশমিক ৯০ কিলোমিটার, হরি নদীর ১৬ কিলোমিটার, আপার শৈলমারী নদীর ১৪ কিলোমিটার, পশ্চিম সালতা নদীর ১৯ কিলোমিটার ও আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার নৌপথ অচল হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কিলোমিটারে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এ নদীগুলোতে পানি না থাকায় সেচ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ছাড়া গত ২০ জুন সংসদে বাজেট বিষয়ে আলোচনায় ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা এলাকা উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে প্রতিদিন দুবার জোয়ার ও ভাটা হয়। জোয়ারের কারণে বিপুল পরিমাণ পলি জমে সেখানকার নদী ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলোর নাব্য হারিয়ে যাচ্ছে।
কালবেলাকে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও পাঠিয়েছিলাম। এতে ভদ্রা নদী, পশ্চিম সালতা নদী, হরি নদীসহ মোট ১১টি নদীর নাব্য পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করি। এসব অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীগুলোর প্রবাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এরই মধ্যে জরিপ কাজ শুরু করেছে।
বিআইডব্লিউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। নদীগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা পওর বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, নদীগুলো খননের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব নদনদী ২০১৮ সালে খননের জন্য একবার সমীক্ষা হয়েছে। এর আলোকে ১১টি নদী খননের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি পাম্প স্থাপনের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। জার্মানি থেকে এ দুটি পাম্প আসতে সময় লাগবে। নদী খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এলেই খনন প্রক্রিয়া শুরু হবে।