প্রায় ১৪ বছর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হলেও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে আজও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষানীতি অনুসারে পঞ্চম শ্রেণির পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণিতে প্রাথমিক স্তর উন্নীতের কথা ছিল, মাধ্যমিক স্তর হওয়ার কথা ছিল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত, এরপর উচ্চশিক্ষার স্তর। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরই ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি। মাধ্যমিক স্তর পুনর্গঠনের পদক্ষেপই নেই। আবার উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংযোগ কম চাকরির বাজারের।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ। এখনো বৃষ্টি হলেই পানি ঝরে অনেক শ্রেণিকক্ষে। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা দুটোই কম। দেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার। শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ২০১৮ সালের মধ্যে ১:৩০ পৌঁছানোর কথা থাকলেও আজও তা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ভর্তি নীতিমালায় জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ না করেই প্রতিটি সেকশনে ৫৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। উচ্চশিক্ষার ৭০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। বিগত সরকারের সময়ে অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে কাজ না করে অধিকসংখ্যক কলেজকে সক্ষমতা যাচাই-বাছাই না করেই উচ্চশিক্ষার পাঠদানের অনুমতি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার প্রজেক্ট নিয়েও তারা বেশি ব্যস্ত হয়ে ছিলেন। বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ ভয়াবহ। বিগত সময়ে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে একাধিক কলেজে লুটপাটের প্রমাণও মিলেছে। শিক্ষা খাতে কর্মকর্তাদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বও প্রকট। পদায়ন নিয়ে ক্যাডারদের মধ্যে অসন্তোষ প্রচুর।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আছে, যা বাস্তবায়ন হয়নি। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে বাজেটে আলাদা বরাদ্দও নেই। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা আইন অপরিহার্য। কিন্তু এখনো সেটি করতে পারেনি সরকার। আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটিও ফাইলবন্দি। বিগত সরকারের সময় একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও সেটি খসড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন না করেই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এই নীতি সংশোধন করার কথাও বলা হয়েছিল। সব মিলে শিক্ষাব্যবস্থায় একধরনের নৈরাজ্য চলছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’। ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার আইয়ুব খান সরকারের তৈরি শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজ ফুঁসে ওঠে। পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না জানা অনেকে। তাদের স্মরণে এই দিনকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম, ত্যাগ, বিজয়, গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৬২তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে গতকাল বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্রসংগঠন কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান কালবেলাকে বলেন, প্রাথমিক স্তর হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত—জাতীয় শিক্ষানীতিতে এটা স্পষ্ট বলা থাকলেও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি। পাইলটিং হিসেবে কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হলেও বাচ্চাদের পড়ানো হয়েছে মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম। এসব প্রতিষ্ঠান আবার ছিল অভিভাবকহীন।